ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

জ্বালানি খাত উন্নয়নে বাংলাদেশ-ভারত সংলাপ শনিবার

প্রকাশিত: ০৫:৪৪, ১৬ মার্চ ২০১৭

জ্বালানি খাত উন্নয়নে বাংলাদেশ-ভারত সংলাপ শনিবার

স্টাফ রিপোর্টার ॥ যৌথ জ্বালানি খাত উন্নয়নের জন্য এবার ঢাকায় হচ্ছে বাংলাদেশ-ভারত জ্বালানি সংলাপ। ভারত থেকে জ্বালানি তেল আমদানি ছাড়াও তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস-এলএনজি এবং তরলীকৃত পেট্রোলিয়াম গ্যাস সরবরাহ নিয়ে উভয় দেশের মধ্যে আলোচনা হবে এই সংলাপে। জ্বালানি বিভাগ সূত্র জানায়, ভারতের পেট্রোলিয়াম ও জ্বালানি সচিব কে ডি ত্রিপাথির নেতৃত্বে ছয় সদস্যর একটি প্রতিনিধি দল ঢাকায় আসছেন। আগামীকাল শুক্রবার প্রতিনিধি দলের ঢাকায় আসার কথা রয়েছে। শনিবার সকালে হোটেল সোনারগাঁওয়ে জ্বালানি সংলাপটি অনুষ্ঠিত হবে। বাংলাদেশের পক্ষে সংলাপে নেতৃত্ব দেবেন জ্বালানি সচিব নাজিম উদ্দিন চৌধুরী। গত বছরের ১৬ জুন প্রথমবারের মতো দিল্লীতে ভারত-বাংলাদেশ জ্বালানি সংলাপ অনুষ্ঠিত হয়। ভারতের সঙ্গে বিদ্যুত আদান-প্রদান ছাড়াও ভারত বাংলাদেশে একটি বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণ করছে। এছাড়াও অরুনাচল প্রদেশে উৎপাদিত জলবিদ্যুত বাংলাদেশের ভেতর দিয়ে ভারত দেশের অন্যপ্রান্তে নিতে চায়। এজন্য বাংলাদেশ ভারতকে বিদ্যুত সঞ্চালন লাইন নির্মাণের অনুমতি দিয়েছে। আশা করা হচ্ছে, এখান থেকে জল বিদ্যুতের কিছু অংশ বাংলাদেশকে দেয়া হবে। যদিও এখনও এ বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কোন সিদ্ধান্তে পৌঁছানো সম্ভব হয়নি। এজন্য দুই দেশের বিদ্যুত সচিবের নেতৃত্বে যৌথ প্রকল্প উন্নয়ন কমিটিও রয়েছে। জ্বালানি খাতেও উভয় দেশের মধ্যে সহায়তা বৃদ্ধির ক্ষেত্রগুলো চিহ্নিত করে গত বছর থেকে আলোচনা শুরু হয়েছে। জ্বালানি বিভাগ সূত্র জানায়, ভারতের নুমালিগড় তেল পরিশোধনাগার থেকে বাংলাদেশ ডিজেল আমদানি করছে। গত বছর থেকে ডিজেল আমদানি শুরু করেছে বাংলাদেশ। এখন রেলওয়াগনে ডিজেল আমদানি করা হলেও ভবিষ্যতে এখানে একটি পাইপলাইন নির্মাণ করা হবে। পাইপলাইনটি অয়েল ইন্ডিয়া এবং বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন যৌথভাবে নির্মাণ করবে। বিষয়টি চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। জ্বালানি বিভাগ সূত্র জানায়, ভারত তেল গ্যাস অনুসন্ধানে বাংলাদেশের চেয়ে এগিয়ে রয়েছে। এজন্য ভারতের ভূতাত্ত্বিক জরিপ অধিদফতর (আইএসবি) এবং বাংলাদেশ ভূতাত্ত্বিক জরিপ অধিদফতরের (জিএসবি) মধ্যে অভিজ্ঞতা বিনিময়ের ব্যবস্থা হাতে নেয়া হবে। এক্ষেত্রে আইএসবি-এর সঙ্গে জিএসবির একটি সমঝোতা সৃষ্টি করা হবে। যাতে উভয় দেশ নিজেদের অভিজ্ঞতা বিনিময় করতে পারে। সাগরে তেল গ্যাস অনুসন্ধানের ক্ষেত্রে এই সহায়তা বিশেষ ভূমিকা রাখবে বলে আশা করা হচ্ছে। জ্বালানি বিভাগ সূত্র জানায়, ভারত বাংলাদেশের ভেতর দিয়ে এলএনজি এবং এলপিজি পরিবহন করতে চায়। এজন্য এলএনজি পরিবহনে একটি পাইপলাইন নির্মাণ করবে তারা। যদিও এই প্রক্রিয়াতে এখন কিছুটা ভাটা পড়েছে। ভারতের অভ্যন্তরেই পাইপলাইন নির্মাণ নিয়ে দুই কোম্পানির মধ্যে মামলা হওয়ায় এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণের বিষয়টি ঝুলে গেছে। অন্যদিকে ভারত চট্টগ্রাম বন্দর ব্যবহার করে ভারতের ত্রিপুরা সংশ্লিষ্ট সাত রাজ্যে এলপিজি পরিবহন করার প্রস্তাব দিয়েছে। এজন্য তারা বাংলাদেশে যৌথ উদ্যোগে একটি এলপিজি প্লান্ট নির্মাণ করার প্রস্তাব দিয়েছে। এজন্য ভারত এই প্রকল্পর জন্য চট্টগ্রামের সুবিধাজনক জায়গাতে ৪৫ একর জমি ইজারা চাইছে। এই প্রকল্প শুরুর আগেই চট্টগ্রাম বন্দর ব্যবহার করে ত্রিপুরায় বাংলাদেশের মধ্য দিয়ে এলপিজি সরবরাহ করা হচ্ছে। গত বছর অনুষ্ঠিত সংলাপে এই বিষয়টিকে প্রাধান্য দেয়া হয়। ইতোমধ্যে ভারত এলপিজি পরিবহন শুরু করেছে। ত্রিপুরা থেকে বাংলাদেশ ১০০ মেগাওয়াট বিদ্যুত আমদানি করছে। এছাড়া শীঘ্রই আরও ৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুত ত্রিপুরা থেকে আমদানি শুরু হবে। বাংলাদেশ আশা করছে এছাড়াও একই গ্রিড লাইন দিয়ে আরও ৩৪০ মেগাওয়াট বিদ্যুত আমদানি হবে। বিষয়টি নিয়ে উভয় দেশ আলোচনা চালিয়ে আসলেও এখনও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি। ভারতীয় কোম্পানি ওএনজিসি বাংলাদেশের সাগরে তেল গ্যাস অনুসন্ধান করছে। এই অনুসন্ধান কার্যক্রম নিয়েও জ্বালানি সংলাপে আলোকপাত করা হবে। ভারতের কোম্পানি পেট্রোনেট বাংলাদেশে একটি এলপিজি প্লান্ট স্থাপন করতে চায়। এ বিষয়ে সংলাপে আলোচনা হবে। এছাড়াও ভারতে বাংলাদেশের জ্বালানি খাতের কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা নিয়েও সংলাপে আলোচনা হবে।
×