ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

শেকৃবিতে সাদা ভুট্টার চাষ

সুস্বাদু ও প্রোটিনসমৃদ্ধ খাদ্য, এক সেচেই ভাল ফলন

প্রকাশিত: ০৫:৪৩, ১৬ মার্চ ২০১৭

সুস্বাদু ও প্রোটিনসমৃদ্ধ খাদ্য, এক সেচেই ভাল ফলন

বশিরুল ইসলাম ॥ দেশে খাদ্যাভ্যাসে চাল আর গমের প্রাধান্য লক্ষণীয়। এই চাল আর গমের ওপর চাপ কমাতে রাজধানীর শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে (শেকৃবি) সফলভাবে চাষ করা হচ্ছে সাদা ভুট্টা। গত তিন বছর ধরে শেকৃবির কৃষিতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক ড. মোঃ জাফর উল্লাহ ভারত, চীন ও দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে সাদা ভুট্টার জাত এনে বাংলাদেশের আবহাওয়ায় উৎপাদনের জন্য গবেষণা চালান। কৃষি গবেষণা ফাউন্ডেশনের অর্থায়নে এবার তিনি সফলভাবে উৎপাদন করেন এই সাদা ভুট্টা। এই ভুট্টা খেতে সুস্বাদু এবং প্রোটিন সমৃদ্ধ। এর তৈরি আটা হলুদ ভুট্টার আটার চেয়ে মিহি। পৃথিবীর বহু দেশে সাদা ভুট্টা অন্যতম প্রধান খাদ্য হিসেবে সমাদৃত। শুধু তাই নয়, এই ভুট্টা থেকে এ পর্যন্ত ৩০টির বেশি খাদ্যদ্রব্য উদ্ভাবন করা হয়েছে। শীঘ্রই নতুন এই জাতটি অবমুক্ত করা হবে বলে আশাবাদী গবেষকরা। ঢাকা, বরিশাল, দিনাজপুর, নিলফামারী, বান্দরবান, রংপুর অঞ্চলে পরীক্ষামূলক আবাদের পর নতুন জাতটির ভাল ফলন পেয়েছেন কৃষি বিজ্ঞানীরা। এ ব্যাপারে অধ্যাপক ড. মোঃ জাফর উল্লাহ বলেন, সারা বিশে^ মানব খাদ্য হিসেবে যে ভুট্টার চাষাবাদ করা হয় তার দানার রং সাদা। এ ভুট্টার স্বাদ চাল ও গমের মাঝামাঝি। সাদা ভুট্টার আটা মিহি এবং চাল ও গম থেকে যে সব খাবার তৈরি করা হয় সাদা ভুট্টার আটা থেকেও সেই সব খাবার তৈরি করা য়ায়। গমের মেশিনে সাদা ভুট্ট্ার আটা ভাঙ্গানো যায়। বর্তমানে দেশে যে ভুট্টার চাষাবাদ করা হয় তা হলুদ রংয়ের। এ ভুট্টার প্রায় সবটুকুই পশু-পাখির খাদ্য হিসেবে ব্যবহৃত হয়। এই জাতটির প্রধান বৈশিষ্ট্য প্রচলিত অন্য জাতগুলোর মতো এই ভুট্টা চাষে তিন বা চারটি সেচের প্রয়োজন হবে না। একটি মাত্র সেচ দিয়ে একই রকম ফলন পাওয়া যাবে। এর ফলে কৃষকের উৎপাদন খরচ বহুলাংশে কমে যাবে। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে পানির লেয়ার নিচে নেমে যাওয়ার অসুবিধা ভোগ করতে হবে না কৃষকদের। এছাড়া নতুন এই জাতটির অপর বৈশিষ্ট এটি উৎকৃষ্ট মানের প্রোটিনসমৃদ্ধ। অধ্যাপক জাফর উল্লাহ আরও বলেন, দেশে বর্তমানে ধান আর গম থেকে যে খাদ্য শস্য উৎপন্ন হয় তা প্রতিবছর যে হারে বাড়ে সে হার ২০৫০ সালের পর স্থিত জনসংখ্যার তুলনায় অনেক কম হবে বলে ধারণা করা হয়। কারণ ধান ও গম সি-থ্রি প্রজাতির হওয়ার এদের উৎপাদনশীলতা ভুট্টার তুলনায় কম। ভুট্টা একটি সি-ফোর প্রজাতি যার উৎপাদনশীলতা ধান ও গমের তুলনায় অনেক বেশি। তাছাড়া, প্রতি হেক্টরে ধানের ফলন ৫ আর গমের ফলন ৩ টন। আর ভুট্টার ফলন ৭ টনের উপরে। সে কারণে ২০৫০ সালের ধান আর গম হতে উৎপাদিত খাদ্য শস্য যথেষ্ট হবে না। এ জন্য ২০৫০ সালের পর খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হলে ভুট্টাকে আমাদের খাদ্য তালিকায় নিয়ে আসতে হবে। পরিসংখ্যান বলছে, বাংলাদেশে বর্তমানে তিন লাখ হেক্টর জমিতে ২২ লাখ টন হলুদ ভুট্টা উৎপন্ন হয়। হলুদ ভুট্টায় অধিক ক্যারোটিন থাকে। তাই উৎপাদিত ভুট্টার বেশির ভাগই মুরগি ও মাছের খাবার হিসেবে ব্যবহৃত হয় খামারগুলোতে। ভুট্টার এ ক্যারোটিন শরীরে অধিক পুষ্টি চাহিদা মেটালেও তা খাদ্যদ্রব্যের স্বাদ কমিয়ে দেয়। তাই, স্বাদপ্রিয় এ দেশের মানুষ ঝুঁকেছে ভাত ও গমের দিকে। স্বাদ বেশি হওয়ায়, সারা বিশ্বে মানুষের খাদ্য হিসেবে হলুদ ভুট্টার চেয়ে সাদা ভুট্টার চাহিদা বেশি। তাই পর্যাপ্ত জমিতে সাদা ভুট্টার আবাদ করা গেলে চাপ কমবে চাল ও গমের। এমনটাই মনে করছেন সংশ্লিষ্ট গবেষকরা।
×