ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

গণহত্যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি আদায়ে সরকারকে অনুরোধ

প্রকাশিত: ০৫:৩৭, ১৬ মার্চ ২০১৭

গণহত্যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি আদায়ে সরকারকে অনুরোধ

কূটনৈতিক রিপোর্টার ॥ বাংলাদেশে ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে গণহত্যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির লক্ষ্যে বিভিন্ন দেশের পার্লামেন্টে প্রস্তাব গ্রহণ করতে হবে। এই লক্ষ্যে সেসব দেশের সরকারকে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে অনুরোধ জানাতে হবে। বুধবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির পক্ষ থেকে এসব প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। ২৫ মার্চ সারা বিশ্বে আন্তর্জাতিকভাবে গণহত্যা দিবস হিসেবে স্বীকৃতির বিষয়ে বুধবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আলোচনা করতে আসেন একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির নেতৃবৃন্দ। এ সময় তারা পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম ও পররাষ্ট্র সচিব এম শহীদুল হকের সঙ্গে এ বিষয়ে আলোচনা করেন। একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির পক্ষ থেকে বেশ কয়েকটি প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। তাদের প্রস্তাবে বলা হয়, বাংলাদেশের গণহত্যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির জন্য বিভিন্ন দেশের সরকারকে আনুষ্ঠানিকভাবে অনুরোধ জানাতে হবে, যাতে তারা তাদের পার্লামেন্টে এই মর্মে একটি প্রস্তাব গ্রহণ করে। ভারত, নেপাল, ভুটান, রাশিয়া, ও পূর্ব ইউরোপের দেশগুলোসহ যেসব দেশ ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের গণহত্যার প্রতিবাদ ও নিন্দা করেছিল তাদের অনুরোধ করা হলেই এ বিষয়ে তারা পার্লামেন্টে প্রস্তাব গ্রহণে সম্মত হবে বলে আমরা বিশ্বাস করি। এছাড়া ইউরোপ, উত্তর ও দক্ষিণ আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়া এবং এশিয়ার অন্যান্য দেশে বাংলাদেশের গণহত্যা সম্পর্কে সচেতনতা সৃষ্টির জন্য পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় প্রবাসী বাঙালী এবং নির্মূল কমিটির মতো সংগঠনগুলোর সহযোগিতা চাইতে পারে। নির্মূল কমিটির প্রস্তাবে আরও বলা হয়, বাংলাদেশে গণহত্যা সম্পর্কে একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি ও মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর এবং অন্যান্য গবেষকরা যা লিখেছেন সেগুলোসহ এ সংক্রান্ত আলোকচিত্র ও প্রামাণ্যচিত্র বাংলাদেশের সকল কূটনৈতিক মিশন, বিদেশে আমাদের সকল দূতাবাস, বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশ সম্পর্কে আগ্রহী আইনপ্রণেতা, গবেষক ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান, মানবাধিকার সংগঠন এবং জাতিসংঘের বিভিন্ন দফতরে পাঠানো প্রয়োজন। ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির পক্ষ থেকে পররাষ্ট্র মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী ও সচিবকে জানানো হয়েছে, একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সপ্তম জাতীয় সম্মেলনে গৃহীত এক প্রস্তাবে ১৯৭১ সালের গণহত্যার শিকার ৩০ লাখ শহীদের স্মৃতি চিরসবুজ রাখার জন্য বাংলাদেশসহ সারা পৃথিবীতে ৩০ লাখ বৃক্ষরোপণ কর্মসূচী গ্রহণ করেছে। এ বিষয়ে ভারতসহ অন্যান্য দেশের সমমনা ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান আগ্রহ প্রকাশ করেছে। আগামী ২৫ মার্চ রাষ্ট্রপতি বঙ্গভবনে ২৫টি বৃক্ষরোপণ করে নির্মূল কমিটির এই কর্মসূচী উদ্বোধন করবেন। সরকারী সহযোগিতা পেলে এই কর্মসূচীর মাধ্যমে সারা বিশ্বে বাংলাদেশের গণহত্যার বিষয়টি তুলে ধরতে পারবেন বলেও জানিয়েছেন নির্মূল কমিটির নেতৃবৃন্দ। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে এই আলোচনায় একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবির, সহ-সভাপতি ও ইতিহাসবিদ মুনতাসীর মামুন, সাধারণ সম্পাদক কাজী মুকুল প্রমুখ নেতারা উপস্থিত ছিলেন। আলোচনা শেষে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে শাহরিয়ার কবির বলেন, বাংলাদেশে গণহত্যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির জন্য একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি দীর্ঘদিন ধরে কাজ করে আসছে। এ বিষয়ে আলোচনার জন্য পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আমরা এসেছি। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে লিখিতভাবে বেশ কয়েকটি প্রস্তাব দেয়া হয়েছে বলেও তিনি জানান। এ সময় সাংবাদিকদের আরেক প্রশ্নের উত্তরে শাহরিয়ার কবির বলেন, একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধে শহীদ ভারতীয় সেনাদের সম্মাননা জানাতে তাদের স্বজনদের হাতে বাংলাদেশের ঘোষিত অর্থ তুলে দিতে মানা করেছে দেশটির সরকার। তিনি জানান, বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে মিত্রবাহিনী হিসেবে যোগ দেয়া ভারতীয় সেনাবাহিনীর মধ্যে যারা শহীদ হয়েছেন তাদের স্বজনদের অর্থ দিতে মানা করে নয়াদিল্লী বলেছে, ঘটনার ৪৬ বছর পর দেড় হাজারেরও বেশি ভারতীয় শহীদ সেনার উত্তরাধিকারের মাঝে অর্থ বণ্টনে সমস্যা দেখা দিতে পারে। শাহরিয়ার কবির বলেন, আমরা জেনেছি, প্রায় ৪৬ বছর পর শহীদ সেনাদের প্রকৃত উত্তরাধিকার খুঁজে অর্থ দেয়ার ক্ষেত্রে গোলমাল বেঁধে যেতে পারে। তাই ভারত শুধু সম্মাননা ক্রেস্ট দিতে বলেছে স্বজনদের।
×