ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

নিরাপত্তার কারণ দেখিয়ে আদালতে হাজির করা হয়নি মুফতি হান্নানকে

প্রকাশিত: ০৫:৩৭, ১৬ মার্চ ২০১৭

নিরাপত্তার কারণ দেখিয়ে আদালতে হাজির করা হয়নি মুফতি হান্নানকে

শংকর কুমার দে ॥ ফাঁসির আসামি হরকাতুল জিহাদ আল ইসলামী বাংলাদেশের (হুজি-বি) প্রধান মুফতি আবদুল হান্নান ও শীর্ষ জঙ্গী শরীফ শাহেদুল আলম ওরফে বিপুলকে নিরাপত্তার কারণ দেখিয়ে বুধবার একুশে আগস্ট গ্রেনেড হামলার মামলার শুনানির দিনে বিশেষ আদালতে হাজির করা হয়নি। বুধবার বিচারক শাহেদ নুরুদ্দিনের দ্রুত বিচার-১ আদালতে একুশে আগস্ট গ্রেনেড হামলার মামলার শুনানিতে মুফতি হান্নানসহ ২১ আসামিকে হাজির করার নির্ধারিত দিন ছিল। মুফতি হান্নান ও শরীফ শাহেদুল আলম বিপুলকে ছাড়া অপর ১৯ আসামিকে হাজির করা হয় আদালতে। শীর্ষ এই দুই জঙ্গীকে আদালতে হাজির না করার বিষয়টিতে নিরাপত্তার কারণ দেখিয়ে চিঠি দিয়েছেন কাশিমপুর হাইসিকিউরিটি কারাগার কর্তৃপক্ষ। পুলিশ, কারাগার ও আদালত সূত্রে এ খবর জানা গেছে। কারাগার সূত্র জানান, দশ দিন আগে ব্রিটিশ হাইকমিশনার আনোয়ার চৌধুরীর ওপর গ্রেনেড হামলার দায়ে হরকাতুল জিহাদ (হুজি) প্রধান ফাঁসির আসামি মুফতি হান্নানসহ ১৯ আসামিকে আদালত থেকে কারাগারে নেয়ার সময়ে প্রিজনভ্যানে হামলা চালিয়ে তাদের ছিনিয়ে নেয়ার চেষ্টা করে। নিরাপত্তার কারণ দেখিয়ে হুজি প্রধান মুফতি হান্নানকে বিশেষ আদালতে হাজির করার বিষয়টি আদালতের কাছে চিঠি লিখে জানান কাশিমপুর হাই সিকিউরিটি প্রিজনস কর্তৃপক্ষ। এরপর বুধবার পূর্ব নির্ধারিত দিনে একুশে আগস্ট গ্রেনেড হামলার মামলায় মুফতি হান্নানসহ দুই শীর্ষ জঙ্গীকে আদালতে হাজির করা হয়নি। কারাগার সূত্রে জানা গেছে, কারাকর্তৃপক্ষের লেখা চিঠিতে বলা হয়, নিরাপত্তার কারণে হুজি-বি প্রধান মুফতি হান্নান ও শীর্ষ জঙ্গী শরীফ শাহেদুল আলম ওরফে বিপুলকে আদালতে হাজির করা হয়নি। আদালত যদি নির্দেশ দেয় তবে কারাকর্তৃপক্ষ আদালতে হাজির করবে। এজন্য পুলিশ কর্তৃপক্ষকে পর্যাপ্ত প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা দিতে হবে। তবে মুফতি হান্নানকে হাজির করবে কারাগার কর্তৃপক্ষ। আদালতের অনুমতি নিয়েই মুফতি হান্নানসহ দুই শীর্ষ জঙ্গীকে আদালতে হাজির করা হয়নি। জানতে চাইলে সরকার পক্ষের একুশে আগস্ট মামলার প্রধান আইনজীবী এ্যাডভোকেট সৈয়দ রেজাউর রহমান জানান, বুধবার একুশে আগস্ট গ্রেনেড হামলার মামলার শুনানির পূর্ব নির্ধারিত দিন ছিল। মুফতি হান্নানসহ দুই আসামিকে হাজির করা হয়নি। নিরাপত্তার কারণে দুই আসামিকে আদালতে হাজির করা হয়নি। একুশে আগস্ট মামলার ২১ আসামির মধ্যে ১৯ জনকে হাজির করা হয়েছে। পরবর্তী শুনানির তারিখ সোমবার। কাশিমপুর হাইসিকিউরিটি কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার মিজানুর রহমানের কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি কোন মন্তব্য করবেন বলে জানান। গাজীপুর জেলার পুলিশ সুপার কার্যালয়ের একজন পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, কারাগার কর্তৃপক্ষ মুফতি হান্নানসহ আসামিদের আদালতে হাজির করার বিষয়ে আবেদন করেননি। পুলিশ কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করা হলে পর্যাপ্ত ও প্রয়োজনীয় নিরাপত্তার ব্যবস্থা করে আসামিদের আদালতে হাজির করার বিষয়টি পুলিশ কর্তৃপক্ষের দায়িত্ব। পুলিশ সূত্র জানান, গত ৬ মার্চ গাজীপুরের টঙ্গীতে প্রিজনভ্যানে হামলা চালিয়ে ফাঁসির দ-প্রাপ্ত জঙ্গী নেতা মুফতি হান্নানকে ছিনিয়ে নেয়ার চেষ্টা চালিয়েছে তার সহযোগী জঙ্গীরা। সিলেটে সাবেক ব্রিটিশ হাইকমিশনার আনোয়ার চৌধুরীর ওপর গ্রেনেড হামলার দায়ে হরকাতুল জিহাদ (হুজি) নেতা মুফতি হান্নানসহ তিন জনকে মৃত্যুদ- দেয়া হয়েছে। গত ৬ মার্চ বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের টঙ্গী সরকারী কলেজ গেট এলাকায় মুফতি হান্নানসহ ১৯ আসামিকে বহনকারী দুটি প্রিজনভ্যানে হামলা চালানো হয়। প্রিজনভ্যান দুটি ঢাকা থেকে কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগারে ফিরছিল। ঘটনাস্থল থেকে মোস্তফা কামাল (২২) নামের এক যুবককে আটক করা হয়। অন্য দুই হামলাকারী পালিয়ে যায়। এই বিষয়ে টঙ্গী মডেল থানায় মামলা হয়েছে। মামলাটি পুলিশের পাশাপাশি গোয়েন্দাাও তদন্ত করছেন। আটক মোস্তফা ময়মনসিংহ জেলার পশ্চিম তারাকান্দার মোজাম্মেলের ছেলে বলে জানা গেছে। ঘটনাস্থল থেকে বিস্ফোরিত ককটেলের স্পিøন্টার, অবিস্ফোরিত ককটেল এবং উগ্রবাদীদের ব্যবহৃত একটি ব্যাগ উদ্ধার করা হয়েছে। গোয়েন্দা সংস্থার একজন কর্মকর্তা জানান, মৃত্যুদ-াদেশপ্রাপ্ত আসামি ও নিষিদ্ধঘোষিত জঙ্গী সংগঠন হরকাতুল জিহাদের (হুজি) শীর্ষ নেতা মুফতি হান্নান ও তার সহযোগী শরীফ সাহেদুল আলম বিপুলকে ছিনিয়ে নেয়ার ছক সম্পর্কে আগেই জেনে গিয়েছিল গোয়েন্দারা। তার পরও দুর্ধর্ষ এ হামলাটি ঠেকাতে ব্যর্থ হয়েছে তারা। হামলার অংশ হিসেবে সম্প্রতি কাশিমপুর কারাগার ও এর আশপাশের এলাকা রেকিও করে জঙ্গীরা। আনসারুল্লাহ বাংলাটিমের প্রশিক্ষিত একটি দলের সহযোগিতায় এ হামলার ছক কষে জঙ্গীরা। পরিকল্পনায় যুক্ত থাকার অভিযোগে তিন জঙ্গীকে সম্প্রতি গ্রেফতারও করেছে পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইউনিট। পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের একজন কর্মকর্তা বলেন, দুটি প্রিজনভ্যানের একটিতে ফাঁসির দ-প্রাপ্ত উগ্রবাদী নেতা মুফতি হান্নান ছিলেন। তাকে ছিনিয়ে নিতেই উগ্রবাদীরা এ হামলা চালিয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। গত ২৩ ফেব্রুয়ারি এ মামলায় মৃত্যুদন্ডের রায় পুনর্বিবেচনার (রিভিউ) আবেদন করেছেন মুফতি হান্নানসহ তিন আসামি। অপর দুই আসামি হলেনÑ হরকাতুল জিহাদ আল ইসলামী বাংলাদেশের (হুজি-বি) সদস্য শরীফ শাহেদুল আলম ওরফে বিপুল ও দেলোয়ার হোসেন ওরফে রিপন। ২০০৪ সালের ২১ মে সিলেটে হযরত শাহজালাল (রহ.)-এর মাজারে বাংলাদেশে নিযুক্ত তৎকালীন ব্রিটিশ হাইকমিশনার আনোয়ার চৌধুরীর ওপর গ্রেনেড হামলা হয়।
×