ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

স্বামীর খোঁজে বাউফলে এসে পৈশাচিকতার শিকার নববধূ

প্রকাশিত: ০৫:৩৬, ১৬ মার্চ ২০১৭

স্বামীর খোঁজে বাউফলে এসে পৈশাচিকতার শিকার নববধূ

নিজস্ব সংবাদদাতা, বাউফল, ১৫ মার্চ ॥ গাজীপুর থেকে স্বামীকে খুঁজতে পটুয়াখালীর বাউফলে এসে পৈশাচিক নির্যাতনের শিকার হয়েছেন ফাহিমা আক্তার হ্যাপী (২০) নামে এক নববধূ। খবর পেয়ে পুলিশ বুধবার দুপুরে ওই নববধূকে উদ্ধার এবং ঘটনায় জড়িত লিটন (৩৫) নামে একজনকে আটক করে থানায় নিয়ে আসে। নববধূ হ্যাপী জানান, তার বাড়ি ময়মনসিংহ সদরের কালিবাড়ি রোডের চর এলাকায়। বাবার নাম জামাল উদ্দিন। গত ৬ মাস ধরে তিনি গাজীপুর এএসআর নামের একটি গার্মেন্টেসে ফিনিশিং অপারেটর হিসেবে চাকরি করছেন। একই গার্মেন্টেসে প্রশাসন বিভাগের সুপার ভাইজার হিসেবে চাকরি করতেন পটুয়াখালী সদর উপজেলার কমলাপুর ইউনিয়নের ভয়লা গ্রামের আবদুল হক সিকদারের ছেলে আল-আমিন সিকদার (২২)। একে অপরের সঙ্গে পরিচয়ের সুবাদে তারা পরস্পর প্রেমে জড়িয়ে পড়েন। ৫ মাস ধরে চলে তাদের প্রেম। এরপর গত ২ মার্চ তারা বিয়ে করে মাওনা চৌরাস্তায় সেলিম মিয়ার বাড়িতে একটি রুম ভাড়া করে বসবাস শুরু করেন। ৫ মার্চ তার স্বামী আল-আমিন বিশেষ প্রয়োজনে তার কাছ থেকে ৫০ হাজার টাকা নিয়ে বাড়ি চলে আসেন। এরপর থেকে ঘটনার আগের দিন পর্যন্ত স্বামীর সঙ্গে তার যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন থাকে। একপর্যায়ে স্বামীর খোঁজে কাবিনের কাগজে উল্লেখিত ঠিকানা মোতাবেক সোমবার গাজীপুর থেকে ঢাকা আসেন এবং ওই দিনই সন্ধ্যায় সদরঘাট থেকে একটি দোতলা লঞ্চযোগে মঙ্গলবার সকালে পটুয়াখালী এসে নামেন। এরপর এক আইনজীবীর মাধ্যমে তার স্বামীর ভগ্নিপতি লিটনের মোবাইল নম্বর পেয়ে যোগাযোগ করেন। সন্ধ্যার দিকে তার স্বামী ও স্বামীর ভগ্নিপতি এসে তাকে ভায়লা গ্রামের বাড়ির কথা বলে বাউফলের আদাবাড়িয়া ইউনিয়নের কাশিপুর বাঁধ এলাকায় ভগ্নিপতির বাসায় নিয়ে যায়। এরপর স্বামী ও ভগ্নিপতি লিটন মিলে স্বেচ্ছায় তালাক দেয়ার জন্য তার (হ্যাপী) ওপর চাপ প্রয়োগ করে এবং ভয়ভীতি দেখায়। এই প্রস্তাবে রাজি না হলে তারা উভয়ে হ্যাপীর ওপর শারীরিক নির্যাতন চালায়। এই অবস্থায় তারা হ্যাপীর মুখের মধ্যে চামচ ঢুকিয়ে দেয়। এতে তার ঠোঁট কেটে যায়। এভাবে দফায় দফায় তার ওপর নির্যাতন চালানো হয়। এতেও তিনি তালাক দিতে রাজি না হওয়ায় সবাই মিলে গামছা দিয়ে তার হাত-পা ও মুখ বেঁধে তাকে হত্যার চেষ্টা চালায়। এ সময় জীবন বাঁচাতে তাদের প্রস্তাবে রাজি হন হ্যাপী। পরের দিন বুধবার সকালে প্রকৃতির ডাকে সাড়া দেয়ার কথা বলে তিনি বাসার সামনে রাস্তার দিকে দৌড় দেন। এ সময় স্বামী আল-আমিন ও তার ভগ্নিপতি তাকে ধরার জন্য পিছু নেয়। রাস্তায় এসে তিনি চিৎকার করলে স্থানীয় লোকজন এসে তাকে উদ্ধার করে এবং ভগ্নিপতি লিটনকে হাতেনাতে আটক করলে তার স্বামী আল-আমিন পালিয়ে যায়। খবর পেয়ে ওই দিন দুপুরে বাউফল থানার এসআই সাইদুর রহমান ও এসআই টিপু লাল ঘটনাস্থলে গিয়ে নির্যাতিতাকে উদ্ধার করেন এবং লিটনকে আটক করে থানায় নিয়ে আসেন। এ ব্যাপারে বাউফল থানার ওসি আযম খান ফারুকী বলেন, হ্যাপীর বাবাকে খবর দেয়া হয়েছে। তিনি আসার পরে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে। হ্যাপীকে নিরাপদ হেফাজতে রাখা হয়েছে।
×