ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

দু’এক বছরের মধ্যেই গ্যাস সঙ্কট থাকবে না ॥ তোফায়েল

প্রকাশিত: ০৫:৩৬, ১৬ মার্চ ২০১৭

দু’এক বছরের মধ্যেই গ্যাস সঙ্কট থাকবে না ॥ তোফায়েল

বিশ্ববিদ্যালয় রিপোর্টার ॥ বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ বলেছেন, দ্রুত গ্যাস ও বিদ্যুত সমস্যা সমাধান হবে। দেশে এখন বড় সঙ্কট হচ্ছে গ্যাস। আগামী দুই এক বছরের মধ্যেই গ্যাস সঙ্কট থাকবে না। ২১ সালের মধ্যে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুত সুবিধা দিতে চায় আওয়ামী লীগ সরকার। তাই আমাদেরও রিনিউএবল সিস্টেমের দিকে বিনিয়োগ বাড়াতে হবে। বুধবার বিকেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে সপ্তদশ নবায়নযোগ্য শক্তি ও সবুজ জ্বালানি এক্সপো’র অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। বাংলাদেশ সোলার এনার্জি সোসাইটির সহযোগিতায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শক্তি ইনস্টিটিউট অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। এসময় আরও উপস্থিত ছিলেন, ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র সাইদ খোকন। তোফায়েল আহমেদ বলেন, রানাপ্লাজার পরে আমরা কঠিন অবস্থার মধ্যে পড়ে যাই। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আমরা সেই সঙ্কট কাটিয়ে উঠেছি। গার্মেন্টসে আমাদের সাড়ে চার মিলিয়ন কর্মসংস্থান হয়েছে। পর্যায়ক্রমে দেশে যত ফ্যাক্টরি আছে সবগুলোকে গ্রীন ফ্যাক্টরিতে রূপান্তরিত করা হবে। সরকার গত আট বছরে আটটি বড় বড় বিদ্যুতকেন্দ্র স্থাপন করেছে যা দেশের বিভাগীয় শহরের ৬৮ শতাংশ মানুষকে গ্রীন বিদ্যুত সুবিধা দিচ্ছে। আমরা এগিয়ে যাচ্ছি। এগিয়ে যাব। বাংলাদেশ হবে বিশ্বের কাছে রোলমডেল। সাঈদ খোকন বলেন, সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে শহর পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখার কাজ চলছে। শহর পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখার জন্য অনেক উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। আমরা যে উদ্যোগ নিয়েছি তা আরও গতিশীল করতে হবে। পাশাপাশি আমলাতান্ত্রিক জটিলতাও দূর করেতে হবে। শহরের বর্জ্য শক্তি উৎপাদনের কাজে লাগাতে হবে। এর আগে সকালে ৪-দিনব্যাপী ১৭তম জাতীয় নবায়নযোগ্য শক্তি ও গ্রীন এক্সপো-১৭ প্রদর্শনীর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রীর বিদ্যুত, জ্বালানি এবং খনিজ সম্পদ বিষয়ক উপদেষ্টা ড. তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী। এবারের এই প্রদর্শনীর প্রতিপাদ্য হচ্ছে- “বাংলাদেশে নবায়নযোগ্য শক্তির জন্য দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা ২০১৭-২০৫০”। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিকের সভাপতিত্বে এই প্রদর্শনীর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন, বাংলাদেশ সোলার এনার্জি সোসাইটির প্রেসিডেন্ট অধ্যাপক ড. মোঃ ইব্রাহীম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শক্তি ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক ড. সাইফুল হক, জার্মানির নেগাওয়াট রেভল্যুশনের প্রতিষ্ঠাতা ম্যাথিয়াস গেলবার, ফরমানুল ইসলাম, মোঃ হেলাল উদ্দিন, মোঃ আনোয়ারুল ইসলাম সিকদার এবং ড. এস এম নাসিফ শামস প্রমুখ। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তৌফিক-ই-এলাহী চৌধুরী নবায়নযোগ্য শক্তিসহ সব বৈজ্ঞানিক গবেষণায় মানুষের ব্যবহারিক সুবিধার দৃষ্টিভঙ্গিকে প্রাধান্য দেয়ার পরামর্শ দেন। তিনি বলেন, কী গবেষণা করলে দেশ লাভবান হবে, মানুষ লাভবান হবে এবং মানুষের কাছে প্রয়োগযোগ্য হবে। তা ভেবেই অগ্রসর হতে হবে। আমরা অনেক দূরের অবশ্যম্ভাবী বিষয় নিয়ে ভাবব, সেটাও আমাদের স্বপ্নের বাইরে থাকবে না, কিন্তু আমাদের মাটির কাছে যেগুলো আছে সেগুলোকে সমাধান করব। দু’য়ের সমন্বয়ে কাজ করলে আমরা কেবল নিজেদের পথচলাটাকে সহজ করব না, পৃথিবীর অন্য অনেক দেশের পথচলাকে সহজ করে দেব। ইনোভেশন, ইনকিউবেশন ও ইন্ট্রোপ্রেনিওরশিপ এই তিনের সমন্বয় সাধনের ওপর গুরুত্ব দিয়ে তিনি বলেন, আমরা আমাদের আবিষ্কারকে সংরক্ষণ করব এবং উদ্যোগ নেয়ার মাধ্যমে বাণিজ্যিক পর্যায়ে নিয়ে যাব। খাবার অপচয়ের প্রসঙ্গে তৌফিক-ই-এলাহী চৌধুরী বলেন, পৃথিবীর উন্নত দেশগুলোতে খাদ্য অপচয়ের পরিমাণ এক-তৃতীয়াংশ। তার বিপরীতে আফ্রিকায় এখন দুর্ভিক্ষ চলছে। সে কারণে আমরা যদি আমাদের চিন্তার মধ্যে পরিবর্তন আনতে পারি, তাহলে অনেক দূর এগিয়ে যেতে পারব। পৃথিবীর প্রতি, আমাদের পরিবেশের প্রতি লক্ষ্য রেখে আমাদের সাশ্রয়ী হতে হবে। আমার যদি বেশি হয় তাহলে অন্যের সঙ্গে শেয়ার করব। এই দৃষ্টিভঙ্গিটা আমাদের খুব প্রয়োজন। তিনি আরও বলেন, তিন বছর আগ থেকে আমরা নবায়নযোগ্য শক্তিকে কৃষি কাজের সেচের ক্ষেত্রে ব্যবহারের জন্য কাজ করে যাচ্ছি। আমরা সেচের জন্য সোলার প্যানেল বসানোর কাজ করছি। একই সঙ্গে গ্রামের মানুষের জন্য সুপেয় পানির ব্যবস্থা করার ক্ষেত্রে সৌরবিদ্যুত ব্যবহারের উদ্যোগ নিয়ে কাজ চলছে। অধ্যাপক মুহাম্মদ ইব্রাহীম বলেন, গৃহস্থালিতে সৌরবিদ্যুত সিস্টেম বসানোর সংখ্যার জন্য বিশ্বসভায় বাংলাদেশের একটা অবস্থান আছে, সেটা নিয়ে আমরা বড়াই করতেই পারি। কিন্তু সেটার যোগান কিন্তু সীমাবদ্ধ। এ কারণে এটাকে টেকসই একটা পর্যায়ের নেয়ার জন্য এটা গ্রিডে যুক্ত করা নিয়ে ভাবতে হবে। আমাদের নবায়নযোগ্য শক্তির বড় অংশ আসে বায়ু থেকে। সেটার বাইরে সৌরশক্তি থেকে অধিকমাত্রায় বিদ্যুত প্রাপ্তির বিষয় নিয়ে গবেষণা করার সময় এখন এসেছে। ম্যাথিয়াস গেলবার বলেন, নবায়নযোগ্য শক্তির ব্যবহারের দিকে ঝোঁকার পাশাপাশি আমাদের আচরণগত পরিবর্তনটার জরুরী। সেটা করতে পারলে আমাদের জ্বালানির ব্যবহার কয়েকগুণ কমে যাবে। বাংলাদেশ গৃহস্থালিতে সৌরশক্তির সিস্টেম বসানোর ক্ষেত্রে চ্যাম্পিয়ন, আমার আশা তারা কৃষিখাত, সুপেয় পানির প্রাপ্তিসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে সৌরশক্তি ব্যবহারে চ্যাম্পিয়ন হবে। অধ্যাপক আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক বলেন, নিজের পরিবেশ নিজে ঠিক রাখা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। সেটার সঙ্গে সঙ্গে অপচয়ও রোধ করতে হবে। আমরা একটা অংশ অপচয়ের কারণে অন্যরা সেটা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। চারদিন ব্যাপী এক্সপোতে নবায়নযোগ্য শক্তি নিয়ে বিভিন্ন প্যানেল আলোচনার পাশাপাশি থাকছে কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের নিয়ে বিতর্ক এবং নবায়নযোগ্য শক্তি অলিম্পিয়াড। পাশাপাশি চলবে নবায়নযোগ্য শক্তি উৎপাদনকারী বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের প্রদর্শনী।
×