ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

দুই হাজারের বেশি শূন্যপদ পূরণের উদ্যোগ

প্রকাশিত: ০৫:৩৫, ১৬ মার্চ ২০১৭

দুই হাজারের বেশি শূন্যপদ পূরণের উদ্যোগ

বিভাষ বাড়ৈ ॥ দুই হাজারেরও বেশি শূন্য পদের জন্য শীঘ্রই আসছে ৩৮তম বিসিএস পরীক্ষার বিজ্ঞপ্তি। ইতোমধ্যেই পদসংখ্যা চূড়ান্ত করে সরকারী কর্মকমিশনে (পিএসসি) সুপারিশ সম্বলিত সারসংক্ষেপ পাঠিয়েছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। দুই হাজার ৪২টি পদের জন্য চাহিদাপত্র দেয়া হলেও নিয়োগের সময় পদ আরও বাড়বে বলে জানা গেছে। পিএসসির চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ সাদিক বলেছেন, আমরা চাকরি প্রার্থীদের জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি দ্রুত সময় একটা ভাল কিছু করার। এ মুহূর্তে ৩৫তম বিসিএসের নন-ক্যাডার ছাড়াও ৩৬ ও ৩৭ বিসিএসের কাজ দ্রুত এগিয়ে চলছে। আমরা পদের চাহিদাপত্র পেয়েছি। শীঘ্রই ৩৮তম বিসিএসের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হবে। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, গত ডিসেম্বরে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, অধিদফতর ও সংস্থার চাহিদাপত্রের আলোকে পদসংখ্যা চূড়ান্ত করেছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। এরপর চূড়ান্ত সুপারিশ সম্বলিত একটি সারসংক্ষেপ কমিশনে পাঠিয়েছে মন্ত্রণালয়। তবে কয়েকটি পদে নিয়োগের বিষয়ে আইনগত সমস্যা পরিলক্ষিত হওয়ায় আরও যাচাই বাছাইয়ের জন্য পিএসসির পক্ষ থেকে সরকারের সংশ্লিষ্ট দফতরে সহযোগিতা চাওয়া হয়েছে। আগামী কয়েকদিনের মধ্যেই বিষয়টির ব্যাখ্যা পাওয়া যাবে বলে বলছেন কর্মকর্তারা। এবার দুই হাজার ৪২টি শূন্য পদের জন্য যে চাহিদাপত্র পিএসসিতে এসেছে তার মধ্যে প্রশাসন ক্যাডারের জন্য আছে ৩০০টি পদ, পররাষ্ট্র ক্যাডারের জন্য ২০টি, পুলিশ ক্যাডারের জন্য ১০০টি পদ। তবে শিক্ষা ক্যাডারের পদ থাকছে সবচেয়ে বেশি। বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারে ৯ শতাধিব পদ থাকবে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীনে পরিচালিত দুটি ক্যাডারে লোক নিয়োগ করা হবে। এর মধ্যে বিসিএস পুলিশ ক্যাডারের সহকারী পুলিশ সুপার পদে নিয়োগ দেয়া হবে ১০০ জনকে। বিসিএস আনসার ক্যাডারের অধীনে সহকারী পরিচালক, সহকারী জেলা কমান্ড্যান্ট ও ব্যাটালিয়ন উপ-অধিনায়ক পদে নিয়োগ দেয়া হবে ৩১ জনকে। বিসিএস নিরীক্ষা ও হিসাব ক্যাডারের সহকারী মহা-হিসাবরক্ষকের শূন্য পদ ১১টি। অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের বিসিএস কর ক্যাডারের সহকারী কর কমিশনারের শূন্য পদ ৯টি। পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় বিভাগের বিসিএস সমবায় ক্যাডারের এন্ট্রি পদ সহকারী নিবন্ধক পদে নিয়োগ দেয়া হবে দুজনকে। পরিকল্পনা বিভাগের বিসিএস ইকোনমিক ক্যাডারের সহকারী প্রধান পদে নিয়োগ পাবেন ৬ জন। দুইজন পরিসংখ্যান কর্মকর্তা নিয়োগ পাবেন বিসিএস পরিসংখ্যান ক্যাডারের অধীনে। রেলপথ মন্ত্রণালয়ের বিসিএস রেলওয়ে পরিবহন ও বাণিজ্যিক এবং বিসিএস রেলওয়ে প্রকৌশল ক্যাডারের অধীনে ১৭ জনকে নিয়োগ দেয়া হবে। এর মধ্যে সহকারী ট্রাফিক সুপারিনটেনডেন্ট পদে ৭, সহকারী নির্বাহী প্রকৌশলী ২, সহকারী যন্ত্র প্রকৌশলী ১, সহকারী সংকেত ও টেলিযোগাযোগ প্রকৌশলী ৩, সহকারী সরঞ্জাম নিয়ন্ত্রক ২ এবং সহকারী বৈদ্যুতিক প্রকৌশলীর ২টি পদ রয়েছে। সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের বিসিএস (সড়ক ও জনপথ) ক্যাডারের সহকারী প্রকৌশলী (সিভিল) পদে ৩ এবং সহকারী প্রকৌশলী যান্ত্রিক পদে দুজনকে নিয়োগ দেয়া হবে। তথ্য মন্ত্রণালয়ের বিসিএস তথ্য ক্যাডারের সহকারী পরিচালক, তথ্য কর্মকর্তা, গবেষণা কর্মকর্তার একটি, সহকারী পরিচালক অনুষ্ঠানের ৯টি, সহকারী বার্তা নিয়ন্ত্রকের ১৪টি এবং সহকারী বেতার প্রকৌশলীর ১১টি পদ শূন্য রয়েছে। পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের বিসিএস (বন) ক্যাডারে সহকারী বন সংরক্ষকের শূন্য পদ ২২টি। ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের বিসিএস ডাক ক্যাডারের সহকারী পোস্টমাস্টার জেনারেলের শূন্য পদ সাতটি। মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের বিসিএস মৎস্য ও বিসিএস পশুসম্পদ ক্যাডারের শূন্য পদ ৫২টি। এর মধ্যে খামার ব্যবস্থাপক ১০টি, উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা পাঁচটি, বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা দুটি, মাইক্রোবায়োলজিস্ট একটি, সম্প্রসারণ প্রশিক্ষক একটি, লিমনোলজিস্ট একটি, ভেটেরিনারি সার্জন বা থানা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তার ২৫টি পদ শূন্য রয়েছে। এছাড়া বিসিএস কৃষি ক্যাডারে ১৯১, বিসিএস স্বাস্থ্য ক্যাডারের সহকারী সার্জনের ২২০টি, সহকারী ডেন্টাল সার্জনের ৫টি এবং পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তার একটি পদে লোক নিয়োগ করা হবে। বিসিএস খাদ্যে পাঁচটি গণপূর্তে ৬টি পদে জনবল নিয়োগ দেয়া হবে ৩৮তম বিসিএসের মাধ্যমে। জানতে চাইলে পিএসসির চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ সাদিক জনকণ্ঠকে বলেন, আমরা তো কাজ করছি। ৩৫তম বিসিএসের ননক্যাডারের নিয়োগ এখনও শেষ হয়নি। এটি শেষ করে ৩৬তম বিসিএসের মৌখিক পরীক্ষা চলছে। ৩৭তম বিসিএসের পরীক্ষা আছে। এসব প্রক্রিয়া শেষ করতে কিছুটা সময় লাগছে। ৩৮ বিসিএসের বিষয়টি নিয়ে আমরা কাজ করছি। সময় লাগবে না। কারণ এখন একই সঙ্গে বেশ কয়েকটা বিসিএসের কাজও ভালভাবে করতে পারছি আমরা। এক প্রশ্নের জবাবে চেয়ারম্যান বলেন, অনেকে মনে করেন এখন পিএসসিতে পরীক্ষার জট। আসলে তা নয়। আগে একেকটা পরীক্ষার কাজ শেষ না করে অন্য কোন পরীক্ষার প্রক্রিয়ায় যাওয়া হতো না। ফলে নতুন বিসিএস পেতে সময় লাগত প্রার্থীদের। এখন তা নয়। একটার কাজ কিছু আগালেই অন্য বিসিএসের কাজ শুরু করতে পরছি আমরা। একই সঙ্গে তিনটি বিসিএসের কাজ যেমন এখন চলছে। এটা কোন জট নয়। বরং এতে সময় অনেক কম লাগছে। উপকৃত হচ্ছে প্রার্থীরা। চেয়ারম্যান বলছিলেন, আসলে কি, দেখে মনে হয় পিএসসি শুধু ২৭টি ক্যাডারের একটি বিসিএস পরীক্ষাই নেয়। কিন্তু এই পরীক্ষা নিতেই যে কত ধরনের পরীক্ষা ও প্রশ্ন প্রণয়ন ও বিতরণের মধ্য দিয়ে যেতে হয় তা অনেকেই ভাবেন না। শুধু শিক্ষা ক্যাডারেই ৭৯ রকমের প্রশ্ন করতে হয়। এসব পরীক্ষার খাতা নিরীক্ষণে সময় লাগে। ক্যাডার ছাড়াও নন-ক্যাডারের অনেক পরীক্ষা নিতে হয়। এটা হচ্ছে বাস্তবতা। অবশেষে আর্থিক স্বাধীনতা পাচ্ছে পিএসসি ॥ নানামুখী আলোচনার পর এবার আর্থিক স্বাধীনতা পাচ্ছে পিএসসি। ফলে মন্ত্রণালয় থেকে প্রাপ্ত বরাদ্দ কমিশন বিভিন্ন খাতে, এমনকি অন্তঃখাতে সমন্বয়পূর্বক ব্যয় করতে পারবে। অর্থ মন্ত্রণালয় ও পিএসসি সূত্রে জানা গেছে, আর্থিক স্বাধীনতা পাচ্ছে পিএসসি। এর আগে কমিশনের জন্য বরাদ্দকৃত অর্থ সরকারের পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যয়ের কোন সুযোগ ছিল না। জানা গেছে, জনপ্রশাসনমন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম পিএসসির আর্থিক স্বাধীনতার বিষয়ে গত বছরের ২৬ অক্টোবর এক আধা-সরকারী পত্রে অর্থমন্ত্রীকে জানান। সেখানে তিনি উল্লেখ করেন, বাংলাদেশ পাবলিক সার্ভিস কমিশন একটি সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান। সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে তার আর্থিক স্বাধীনতার বিষয়টি সংবিধান কর্তৃক স্বীকৃত। একই ধরনের আর একটি মাত্র প্রতিষ্ঠান আছে, তা হলো বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন। বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশনকে এরই মধ্যে বরাদ্দকৃত বাজেটের মধ্যে ব্যয় বিভাজনের আর্থিক স্বাধীনতা দেয়া হয়েছে। অর্থ মন্ত্রণালয় বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশনকে বরাদ্দকৃত বাজেটের মধ্যে অর্থ বিভাজনের ক্ষমতা দিয়ে যে প্রশংসার কাজটি করেছে, অনুরূপভাবে একই ধরনের একটি প্রতিষ্ঠান হিসেবে বাংলাদেশ পাবলিক সার্ভিস কমিশনকেও বরাদ্দকৃত বাজেটে বিভাজনের স্বাধীনতা দেয়ার অনুরোধ করছি। মন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের ওই উদ্যোগের অংশ হিসেবেই এখন বিষয়টির সমাধান হচ্ছে বলে জানিয়েছেন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা।
×