ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

সুনামগঞ্জে ফসল রক্ষা বাঁধ

নির্মাণে ব্যাপক অনিয়ম

প্রকাশিত: ০৪:২৯, ১৬ মার্চ ২০১৭

নির্মাণে ব্যাপক অনিয়ম

নিজস্ব সংবাদদাতা, সুনামগঞ্জ, ১৫ মার্চ ॥ সুনামগঞ্জের ৪৬ হাওড়ে ফসল রক্ষা বাঁধ নির্মাণ কাজে চলছে ব্যাপক দুর্নীতি ও অনিয়ম। গত বছরের ১৫ ডিসেম্বর হাওড়ের ফসল রক্ষা বাঁধ নির্মাণের কাজ শুরু হওয়ার কথা। কিন্তু এই নির্ধারিত সময়ে জেলার হাওড়গুলোতে বাঁধ রক্ষার কাজ শুরু হয়নি। প্রতি বছরই পাউবোর এই গাফিলতির কারণে কৃষকের হাজার হাজার হেক্টর জমি আগাম বন্যায় তলিয়ে যায়। এ বছরও পাউবোর কর্মকর্তাদের দুর্নীতির কারণে ফসল রক্ষা বাঁধগুলোর কাজ ফেব্রুয়ারি-মার্চ মাস থেকে শুরু হয়েছে। বাঁধ নির্মাণের কাজ শুরু হওয়ার পর থেকেই বিল উত্তোলন করে পিআইসি-ঠিকাদার ও পাউবোর কর্মকর্তারা ভাগবাটোয়ারা নিয়ে ব্যস্ত। তাদের এই ভাগবোটোয়ার ফলে সম্প্রতি পাহাড়ী ঢলে ধর্মপাশার ৭টি হাওড় তলিয়ে গেছে। কৃষকদের উত্তেজনা দেখে স্থানীয় পিআইসি ও ঠিকাদাররা স্থানীয় কৃষকদের ফসলি জমি কেটে মানবসৃষ্ট দানবরূপী এস্কেভেটর দিয়ে তড়িঘড়ি করে চলছে লুটপাটের মহাযজ্ঞ। নির্ধারিত জায়গায় নির্দেশিত কমিশন দিয়ে চলছে এই লুটপাট উৎসব। গত বছর বোরো মৌসুমের শুরুতেই তলিয়ে যায় জেলার নলুয়া হাওড়, দেখার হাওড়, বরাম হাওড়, খড়ছা হাওড় শনির হাওড়, খাংলার হাওড়, মইয়ার হাওড়, চন্দ্রসোনা তালসহ প্রায় অর্ধশতাধিক হাওড়ের সাড়া বছরের একমাত্র বোরো ফসল। ফসলহানিতে দিশেহারা কৃষকদের গত বছরের ক্ষত না শুকাতেই এবার আবারও সুনামগঞ্জে হাওড় এলাকায় আগাম বন্যা প্রতিরোধ ও নিষ্কাশন উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় হাওড়ের বাঁধের নির্মাণকাজ কাজে চলছে লুটপাট-কমিশন ভাগাভাগির যত আয়োজন। নির্ধারিত সময় পেরিয়ে গেলও এখনও কাজ হয়নি ৩০ ভাগ। তবে পাওবোর দাবি ৫০ ভাগ থেকে ৫৫ ভাগ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। গত তিনদিনের আকাশের কালো মেঘ আর থেমে থেমে চলা বৃষ্টি দেখে উড়া-কোদাল নিয়ে নিজেরাই বাঁধ রক্ষায় নেমে পড়েছেন কৃষকরা। কৃষকদের ফসলি জমির ক্ষতি করে মাঠি দিলেও নিম্নমানের কাজ করায় হতাশ হয়ে পড়েছেন তারা। স্থানীয় কৃষকরা বলছেন হাওড় রক্ষা বাঁধে নামমাত্র মাটি ফেলে পিআইসি ও ঠিকাদাররা হুমকির মুখে রেখেছে জেলার সবকটি হাওড়ের বোরো ফসল। হতাশায় হাওড় পাড়ের কৃষকেরা এসব অনিয়ম-দুর্নীতির প্রতিবাদে সভা সমাবেশ মানববন্ধনসহ নানা প্রতিবাদী কর্মসূচী পালন করলেও টনক নড়ছে না যথাযথ কর্তৃপক্ষের। শুধু তাই নয়, পাউবোর এই দুর্নীতির বিরুদ্ধে হাওড়ের ফসল রক্ষা বাঁধ নির্মাণ কাজের অগ্রগতি ও পর্যবেক্ষণ পরবর্তী সংবাদ সম্মেলন করেছে হাওড় এ্যাডভোকেসি প্লাটফর্ম (হ্যাপ)। সম্মেলনে হ্যাপের যুগ্ম আহ্বায়ক মোঃ শরিফুজ্জামান লিখিত বক্তব্যে বলেন জেলার সবগুলো হাওড়ের হুমকির মুখে থাকা বাঁধগুলোর বাস্তব অবস্থার পর্যবেক্ষণ প্রতিবেদন তুলে ধরেন। তিনি জেলা প্রশাসকের উদ্ধৃতি দিয়ে বলেন এখনও ১২টি বাঁধের কাজ শুরুই হয়নি। জেলার তাহিরপুর, ছাতক, জামালগঞ্জ, দোয়রা বাজার, বিশ্বম্ভরপুর, দিরাই, শাল্লাসহ ১১টি উপজেলার বিভিন্ন হাওড়ের বাঁধের কাজ হচ্ছে দায়সারা ভাবে। সরকার সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ, পিআইসি ও ঠিকাদারদের বিরুদ্ধে দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা না নেয়ায় সর্বস্তরের জনসাধারণের মাঝে চরম ক্ষোভ বিরাজ করছে। সুনামগঞ্জ জেলা কৃষি অফিস সূত্র জানা যায়, এ জেলার ১১টি উপজেলার ৪৬টি হাওড়ে আবাদি জমির পরিমাণ ৩ লাখ ৭৯ হাজার ২১৬ হেক্টর, আবাধ জমি-২,৭৬,৪৪৭ হেক্টর। তার মধ্যে প্রায় ২ লাখ ১৫ হাজারের অধিক হেক্টর জমিতে প্রতি বছরের ন্যায় এবারও বোরো ধান চাষ করা হয়েছে। আর বাকি জমিতে অন্যান্য ফসল। আর জেলার ৪৬টি হাওড়ের বাঁধ রক্ষায় পানি উন্নয়ন বোর্ড এডিপি প্রকল্পের অধীনে ২২৫টি পিআইসি এবং ৪৮টি প্যাকেজে ঠিকাদারদের মাধ্যমে ২৩০ কিলোমিটার বাঁধ নির্মাণ ও মাটি ভড়াটে কাজ করবে। পিআইসিতে ১০ কোটি ৭০ লাখ টাকা ও দরপত্রের মাধ্যমে কাজ আদায়ের জন্য ৪০ কোটি টাকার কাজ বরাদ্দ পেয়েছে পাউবো। এ ব্যাপারে পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আফসার উদ্দিন বাঁধ নির্মাণ কাজে বিলম্ব ও অনিয়ম-দুর্নীতি ত্রুটি বিচ্ছুতির কথা স্বীকার করেন। তিনি আরও বলেন, যারা এই দুর্নীতি ও অনিয়মের সঙ্গে জড়িত তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া হবে।
×