নিজস্ব সংবাদদাতা, মংলা ॥ দক্ষিণাঞ্চলের সর্ববৃহত্তম খাদ্যগুদাম মংলার সাইলোতে সরকারের বিদেশ থেকে আমদানি করা গম নিয়ে ভিড়তে পারেনি বিদেশী জাহাজ। সাইলো জেটি এলাকায় নাব্য সংকটের কারণে ২২ হাজার মেট্রিক টন গম নিয়ে বহিঃনোঙরে অবস্থান করেই গম খালাস কাজ শুরু হয়েছে। এ ছাড়া নতুন নির্মিত এ সাইলোর দক্ষ জনবল না থাকা ও কারিগরি সমস্যার কারণে ধীরগতিতে চলছে লোডিং কাজ। কারিগরি ত্রুটির কারণে গম লোডিংয়ের দুটি পয়েন্টের একটি নাম মাত্র সচল থাকলেও অপরটি অচল হয়ে আছে। এ অবস্থায় সাইলো উদ্বোধনের পর প্রথমবারের মতো গম নিয়ে আসা জাহাজের খালাস কাজে বিড়ম্বনা দেখা দিয়েছে। এতে জাহাজ কর্তৃপক্ষ, শিপিং এজেন্ট, স্টিভিডরসসহ সংশ্লিষ্টরা মোট অঙ্কের টাকার আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েছেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, আপৎকালীন দুর্যোগ মোকাবেলায় প্রায় সাড়ে ৫ শ’ কোটি টাকা ব্যয়ে মংলার জয়মনিতে ৫০ হাজার মেট্রিক টন খাদ্যশস্য ধারণ ক্ষমতার অত্যাধুনিক এ সাইলোটি নির্মিত হয়। গত বছরের ২৭ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রী আনুষ্ঠানিকভাবে এ সাইলোর উদ্বোধন করেন। এ সময় লাইটার যোগে পরীক্ষামূলক ৪০৬ টন গম গুদামজাত করা হয়। এ সাইলোর জন্য সরকারীভাবে বিদেশ থেকে আমদানিকৃত গমের প্রথম চালান নিয়ে গত ৯ মার্চ মংলা বন্দরে ভিড়েছে জাহাজ।
রাশিয়া থেকে আসা গমবোঝাই এমভি ‘নর্ডলেক্স’ নামের পানামার পতাকাবাহী এ জাহাজটি বন্দরের পশুর চ্যানেলের হারবাড়িয়া বহিনোঙরে অবস্থান করছে। প্রথমবারের মতো আসা গমবাহী জাহাজটি নাব্য সমস্যার কারণে সাইলোর জেটিতে ভিড়তে পারেনি। ফলে ম্যাদার ভ্যাসেল থেকে ছোট লাইটার যোগে খালাসের পর সাইলো জেটিতে লোডিং কাজ শুরু করা হয়। মঙ্গলবার বিকেল ৪টায় গম লোডিং শুরু হলেও ধীরগতি নিয়ে বিড়ম্বনার মধ্যে পড়েছেন সংশ্লিষ্টরা। সাইলো জেটির দুটি লোড পয়েন্টের একটি অচল হয়ে আছে। অপরটি চললেও কিছুক্ষণ পর পর বন্ধ হয়ে থাকছে। দক্ষ জনবল না থাকায় এ অবস্থা বিরাজ করছে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা। গম নিয়ে আসা বিদেশী জাহাজটির স্থানীয় শিপিং এজেন্ট সেভেস সীর্সের খুলনাস্থ ম্যানেজার মোঃ শামিম হোসেন জানান, জাহাজটি ২২ হাজার মেট্রিক টন গম নিয়ে বন্দরে আসে। এ গম খালাস করতে ৪ থেকে ৫ দিন সময় লাগতে পারে। কিন্তু সাইলোর লেডিং পয়েন্টের ধীরগতিতে বিদেশী জাহাজটি নির্ধারিত সময় বন্দর ত্যাগ করতে পারছে না। এ জাহাজের শ্রমিক নিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান মেসার্স ইউনিয়ন এন্টারপ্রাইজের ম্যানেজিং পার্টনার এস এম মোস্তাক জানান, ম্যাদার ভ্যাসেল থেকে লাইটারে দ্রুতগতিতে গম খালাস করা হলেও সাইলোর কারিগরি ত্রুটির কারণে লোডিংয়ে ধীরগতি চলছে। তিনি জানান অত্যাধুনিক এ সাইলোর প্রযুক্তি অনুযায়ী চব্বিশ ঘণ্টায় ২ হাজার মেট্রিক টন গম লোডিং করার কথা থাকলেও তা পেরে উঠছে না কর্তৃপক্ষ।
মঙ্গলবার বিকেল ৪টা থেকে গতকাল বুধবার সকাল ৬টা পর্যন্ত ১৪ ঘণ্টায় মাত্র ৪২৬ টন গম লোডিং করা হয়েছে। তিনি আরও জানান, গম নিয়ে একাধিক লাইটার সাইলো জেটির লেডিং পয়েন্টে যাওয়ার অপেক্ষায় রয়েছে। কিন্তু গম লোডিংয়ের ধীরগতিতে নির্ধারিত সময় খালাস করা সম্ভব হচ্ছে না। আর এ জন্য তিনি সাইলোর কারিগরি ত্রুটি ও দক্ষ জনবল সঙ্কটকে দায়ী করেন। এ অবস্থা চলতে থাকলে গমবাহী ম্যাদার ভ্যালেস কর্তৃপক্ষ, শিপিং এজেন্ট ও স্টীভিডরর্স এবং লাইটার কর্তৃপক্ষকে মোটা অঙ্কের আর্থিক ক্ষতি গুনতে হবে। তবে এ বিয়ষে সাইলোর ইনডোর বিভাগের প্রকৌশলী অরূপ জানান, সাইলোর লোডিং পয়েন্টে যথানিয়মে কাজ চলছে। তবে কোন প্রকার ত্রুটির থাকার কথা অস্বীকার করে তিনি আউটডোর বিভাগে যোগাযোগ করার পরামর্শ দেন। তবে এ বিষয়ে মংলা সহকারী উপখাদ্য পরিদর্শক নাহিদুল ইসলাম জানান, তারা শুধু আমদানিকৃত গমের গুণগতমান পরীক্ষা করেই জাহাজ থেকে খালাস ও লোডিংয়ের অনুমতি প্রদান করেছেন। কিন্তু সাইলোর অভ্যন্তরের ত্রুটিসহ অন্য কোন বিষয়ে অবগত নয় বলে জানান তিনি।
