ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

অমিত চন্দ্র দাস

বিশ্ববিদ্যালয় বনাম বিদ্যাবিপণি

প্রকাশিত: ০৪:১১, ১৬ মার্চ ২০১৭

বিশ্ববিদ্যালয় বনাম বিদ্যাবিপণি

সমাজে বিত্তবানদের বিলাসিতার শেষ নেই। কখনও কখনও তাদের এই বিলাসিতা সামাজিক ব্যাধিতে পরিণত হয়। সামাজিক মর্যাদার যত নিয়ামক রয়েছে তার মধ্যে বিদ্যা অন্যতম। জমি-জমা, টাকা-কড়ি, গাড়ি-বাড়ি, ধনদৌলতের মতো বিত্তবানরা বিদ্যাকেও অর্জন করতে চায় যেনতেন প্রকারে। এই ভোগবাদী বিদ্যাবিলাসীরা কোন উপায়ন্তর না পেয়ে শেষ পর্যন্ত অধুনা প্রতিষ্ঠিত প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় নামক বিদ্যাবিপণিতে এসে হাজির হয় অর্থের বিনিময়ে চাহিদামাফিক সনদ সংগ্রহে। আমি ঢালাওভাবে বলব না যে, প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে সামাজিক ক্ষতির কারণ কিংবা এটা প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের বিরুদ্ধে আমার ব্যক্তিগত বিষোদ্গারও নয়। বিদ্যাকে প্রসাধনী কিংবা ঘর সাজানোর আসবাবপত্র ভাবা সমীচীন নয়, এটাই বলতে চাই। যার যে যোগ্যতা নেই সেটা একজন কেবলমাত্র সনদের মাধ্যমে দাবি করতে পারে না। তার জন্য যথোপযুক্ত মেধা, মনন ও চেষ্টা থাকা চাই। আমার টাকা কড়ি আছে, রাজনৈতিক ক্ষমতা রয়েছে তাহলে আমি বিদ্যাবিলাসী বা বিদ্যোৎসাহী হব না কেন। এই বাতিক থেকে আমাদের বেরিয়ে আসতে হবে। প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়াকে আমি বিত্তবানদের বিলাসিতা বলছি এই কারণে আমি যখন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছি সেই তুলনায় প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ভর্তি ফি অনেকগুণ বেশি। যেখানে আমার মতো একজন অতি দরিদ্র ছাত্র পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়া এখনকার মতো এত টাকা দিয়ে প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনার কল্পনাও করতে পারতাম না। প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়গুলো সাধারণত প্রতিষ্ঠিত হয়ে থাকে বাণিজ্যিক লাভের উদ্দেশ্যে। সেখানে আর্থিকভাবে অসচ্ছল শিক্ষার্থীর প্রবেশাধিকার সচেতনভাবেই নস্যাত করা হয়। এহেন বিদ্যাবিপণিগুলোর নামও বেশ চমকপ্রদ। বেশিরভাগ নব্যধনীর দুলাল-দুলালীরা সম্পূর্ণ সচেতনভাবে কোন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ভর্তি পরীক্ষায় অকৃতকার্য হয়ে ভর্তি হতে ব্যর্থ হয় তখন তারা সমাজে শিক্ষিত বিদ্বান হিসেবে পরিচয় দানের জন্য প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে হাজির হয়। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর পড়ার মান ও মানহীনতা নিয়ে তখন তাদের কোন মাথা ব্যথা থাকে না। যেনতেন প্রকারে ডিগ্রী অর্জন করাই তাদের লক্ষ্য হয়ে থাকে। কতিপয় প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশে সুনামের সঙ্গে তাদের কার্যক্রম চালিয়ে আসছিল কিন্তু সেগুলো এখন রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি ও মৌলবাদ, জঙ্গীবাদে জড়িয়ে পড়ছে যা আমাদের আঁতকে ওঠার মতো খবর। বিশ্ববিদ্যালয়ের মানদ- বা বিশ্বজনীন শিক্ষা নিশ্চিত করা কঠিন এ কথা সকলেই বিশ্বাস করবেন, কেননা বাংলাদেশের অলিতে-গলিতে, আনাচে-কানাচে ব্যাঙের ছাতার মতো যে হারে প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় গড়ে উঠছে সেখানে মান বজায় রাখা কখনই সম্ভব নয়। আশার কথা দেরিতে হলেও সরকারের সংশ্লিষ্ট শিক্ষা কর্তৃপক্ষ ইউজিসির টনক নড়েছে। সাইনবোর্ডসর্বস্ব কাঠামোহীন বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর বিরুদ্ধে পদক্ষেপ গ্রহণ করছে। শিক্ষা একটি সংবেদনশীল জাতীয় বিষয়। এটিকে নিয়ে কোন প্রকার ছলচাতুরী বা বাণিজ্য করা বা করতে দেয়া কখনই উচিত নয়। যেমন- একজন কসাইকে দিয়ে তো আর সার্জনের কাজ হবে না। তাকে নিশ্চয় কেউ অপাররেশন থিয়েটারে রোগীর দেহে অপারেশন পরিচালনার দায়িত্ব অর্পণ করবে না জেনেশুনে। আমরা তো সকলেই জানি শিক্ষাকে বাদ দিয়ে বা অবহেলা করে দেশের কোন উন্নয়ন বা উন্নতি সম্ভব নয়। তাই বিদ্যাব্যবসায়ীদের বিদ্যাবাণিজ্যের এই অপকৌশলকে আসুন সকলে মিলে প্রতিহত করি। চন্দ্রনাথ ডিগ্রী কলেজ, নেত্রকোনা থেকে
×