ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

ভুক্তভোগীর অভিমত;###;নীহার আফরিন

সমাজ ভাবনা ॥ বিষয় ॥ প্রাইভেট ইউনিভার্সিটি

প্রকাশিত: ০৪:১০, ১৬ মার্চ ২০১৭

সমাজ ভাবনা ॥ বিষয় ॥ প্রাইভেট ইউনিভার্সিটি

কোথায় পড়াশোনা করো? এর উত্তরে যখন বলি প্রাইভেট ইউনিভার্সিটিতে, প্রশ্নকর্তার মুখে একটাই শব্দ ওহ, প্রাইভেট! হ্যাঁ, এমন প্রতিক্রিয়া হয় যখন বলি আমি প্রাইভেট ইউনিভার্সিটির একজন ছাত্রী। ইউনিভার্সিটি প্রাইভেট হোক বা হোক পাবলিক, এর আছে নিজস্ব একটি বৈশিষ্ট্য। ইউনিভার্সিটি এমন একটি উচ্চ-শিক্ষা প্রতিষ্ঠান যেখানে চার-বছর পর ফল প্রাপ্তি সাপেক্ষে একজন গ্রাজুয়েট স্টুডেন্টকে দেয়া হয় একটি সনদ-পত্র। অবশ্য যখন সে সনদ-পত্র হয় প্রাইভেট ইউনিভার্সিটির তবে তা পড়ে থাকে চাকরি বাজারের সর্ব-নিম্ন স্থলে! ধারণাটা একটু পরিবর্তন করা যাক, বাংলাদেশে পাবলিক ও প্রাইভেট-ইউনিভার্সিটির নাম্বারের দিক থেকে। গত কয়েক বছর ধরে দেখা যাচ্ছে পাবলিক-ইউনিভার্সিটির সাথে প্রাইভেট-ইউনিভার্সিটি এক থেকে দশের মধ্যে অবস্থান করে আসছে। ব্রাক ও নর্থ-সাউথ-ইউনিভার্সিটি যেন সে লিস্টের প্রথম পাঁচের মধ্যে, দুটিই স্বনামধন্য প্রাইভেট ইউনিভার্সিটি। তবে বাংলাদেশে যে ৩৭টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় আছে, তারা কি দয়া করে এই দুইটি প্রাইভেট ইউনিভার্সিটিকে জায়গা করে দিয়েছে! নিশ্চয়ই নয়। বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয় আইন ২০১০-এর ৪ ধারায় বলা হয়েছে, ‘প্রতিটি প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে জাতি, ধর্ম, গোত্র, শারীরিক-প্রতিবন্ধী, নির্বিশেষে সকল ছাত্র-ছাত্রী শিক্ষা গ্রহণ করতে পারবে।’ যখন একজন ছাত্র ১২ বছর শিক্ষা জীবন অতিক্রম করে উচ্চ-শিক্ষার জন্য দেশের সর্বোচ্চ-বিদ্যাপিঠ পাবলিক-ইউনিভার্সিটিতে কোন কারণে নিজের সিটটি পেতে ব্যর্থ হয়, তখন তার ভরসা হয়ে ওঠে প্রাইভেট-ইউনিভার্সিটি। আমাদের সংবিধানে শিক্ষা গ্রহণে কোন বাধা নেই। বরং আর্টিক্যাল ১৫ (ক) তে বলা আছে শিক্ষা মৌলিক-অধিকার। সে মৌলিক-অধিকারের বেশির ভাগ যোগান দেয় প্রাইভেট-ইউনিভার্সিটি। সে উচ্চ-শিক্ষার যোগান কতটা মানসম্মত তা দেখার জন্য আছে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন। এ প্রতিষ্ঠান প্রতিটি প্রাইভেট-ইউনিভার্সিটিকে নিয়ন্ত্রণ করছে। যতক্ষণ পর্যন্ত না প্রতিষ্ঠানটি ঘোষণা দেয় নির্দিষ্ট নামের ইউনিভার্সিটি যেনতেনো উপায়ে সনদ দিয়ে যাচ্ছেÑ ততক্ষণ কি ভাবে বলা যায় ইউনিভার্সিটিটি বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে সনদ-প্রদান করছেঅর্থের বিনিময়ে! হাতে গোনা কয়েকটি ইউনিভার্সিটি অর্থের বিনিময়ে সনদ দিয়ে থাকে, এটি সত্য। তাদের কারণে সব প্রাইভেট- ইউনিভার্সিটিকে কেন দায় বহন করতে হবে? ঝড়ে গাছের একটি ডাল ভেঙে গেল মানে গাছটি নিহত হয় নি। বরং গাছটি এখনো সম্ভাবনাময় হয়ে নতুন ভাবে, নতুন আঙ্গিকে আরো শাখাপ্রশাখার জন্ম দিতে পারে। প্রাইভেট-ইউনিভার্সিটি বা পাবলিক-ইউনিভার্সিটির প্রশ্ন না। প্রশ্ন হচ্ছে উন্নত-শিক্ষার মাধ্যমে কিভাবে আমাদের প্রিয় দেশটি শিক্ষিত-রাষ্ট্র হিসাবে এগিয়ে যেতে পারে অদূর ভবিষ্যতে। প্রাইভেট ও পাবলিক ইউনিভার্সিটির শিক্ষার মান-উন্নয়ন নিয়ে ভাবার সময় চলে এসেছে। আমাদের যুক্তিগুলো কোন অঙ্গকে বাদ দেয়ার জন্য নয়, বরং মান-উন্নয়ন বিবেচনাটিই এখানে প্রাধান্য পাবে। তা না হলে চিল কান নিয়েছে শুনে কানে হাত না দিয়ে দৌড়ে বেড়াতে হবে অদৃশ্য চিলের পিছনে! সাউথ-ইস্ট ইউনিভার্সিটি, ঢাকা থেকে
×