ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

উড়াল সড়কে দুর্ঘটনা

প্রকাশিত: ০৪:০৪, ১৬ মার্চ ২০১৭

উড়াল সড়কে দুর্ঘটনা

মালিবাগে রবিবার রাতে নির্র্মীয়মাণ উড়াল সড়কের গার্ডার পড়ে ১ শ্রমিক নিহত এবং দুই কর্মকর্তা-কর্মচারী আহত হওয়ার ঘটনাটি মর্মান্তিক। অঘটনটি দিনেরবেলায় হলে পরিণতি আরও ভয়াবহ হতে পারত। সরেজমিন পরিদর্শনে দেখা যায়, মগবাজার-মৌচাক উড়াল সড়কের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান জাতীয় নির্মাণ বিধিমালা আদৌ মানছে না। অন্যদিকে সংশ্লিষ্ট সরকারী কর্তৃপক্ষও নিয়মিত দেখভালে দেখাচ্ছে গাফিলতি। যথাসময়ে শেষ না হওয়ায় প্রকল্পের ব্যয়ভার ইতোমধ্যে বেড়েছে শত কোটি টাকার ওপর। পাশাপাশি স্থানীয় অধিবাসী, ব্যবসায়ী ও পথচারীদের প্রতিদিনের অসহনীয় যানজটসহ জীবনের ঝুঁকি ও দুর্ভোগ তো আছেই। বিশেষজ্ঞদের মতে, আদৌ কোন নিয়মকানুন না মেনে বছরের পর বছর ধরে নির্মাণ কাজ চালানোর কারণেই বার বার ঘটছে দুর্ঘটনা, হতাহত হচ্ছে মানুষ। গত বছরের মার্চে এই উড়াল সড়কের রডের আঘাতে মারা যান একজন শ্রমিক। ২০০০ সালে সায়েন্স ল্যাবরেটরি এলাকায় সেতুর গার্ডার পড়ে মারা যান পথচারী মাগুরা টেক্সটাইলের এক কর্মকর্তা। একই বছর নতুনবাজার মার্কিন দূতাবাসের সামনে সেতু ভেঙ্গে মারা যান তিন পথচারী। ২০১২ সালের ২৪ নবেম্বর চট্টগ্রামের বহদ্দারহাট উড়াল সড়কের গার্ডার ভেঙ্গে মারা যান ১২ জন। দুঃখজনক হলো, এর পরও পরিস্থিতির কোন উন্নতি হয়নি। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো আন্তর্জাতিক বিধিমালা দূরে থাক, বাংলাদেশে ১৯৯৩ সালে প্রণীত জাতীয় নির্মাণ বিধিমালাও মান্য করে না। ফলে এড়ানো যাচ্ছে না দুর্ঘটনা ও দুর্ভোগ। ঢাকা ট্রান্সপোর্ট কো-অর্ডিনেশন বোর্ডের (ডিটিসিবি) ১৯৯৯ সালের সমীক্ষা অনুযায়ী, যানজট নিরসনে ২০টি পয়েন্টে ফ্লাইওভার, আন্ডারপাস, বাস বে, বাস টার্মিনাল, পার্কিং এরিয়া প্রভৃতি নির্মাণের প্রস্তাব করা হয়। এরই অংশ হিসেবে নির্মিত হয় মহাখালী, মেয়র হানিফ ও খিলগাঁও ফ্লাইওভার। স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতরের অধীনে মগবাজার-মৌচাক ফ্লাইওভার প্রকল্প অনুমোদন পায় ২০১১ সালে। এ পর্যন্ত ঠিকই আছে। তবে তিন দফায় এ প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানো হয়। তাতে স্বভাবতই বেড়ে যায় নির্মাণ ব্যয়। বিভিন্ন সময়ে নির্মাণ কাজের মধ্যেই ত্রুটিবিচ্যুতি ধরা পড়ে নক্সায়। চলে ভাঙ্গা-গড়ার খেলা। গণমাধ্যমে এ নিয়ে বিস্তর সমালোচনা হয়েছে। কেননা, এর পেছনে আদৌ সৎ উদ্দেশ্য ছিল না। এই প্রকল্পের মেয়াদ তিন দফা বাড়ানোর ফলে ব্যয় বেড়ে দাঁড়ায় এক হাজার ২১৯ কোটি টাকা। এর পাশাপাশি ছিল অসহনীয় ও অকহতব্য জনদুর্ভোগ। কেননা দীর্ঘ উড়াল সড়কের দু’পাশে বিস্তর স্থাপনা, ব্যবসা-বাণিজ্য, শিল্প-কারখানা, স্কুল-কলেজ-হাসপাতাল, আবাসন, ফ্ল্যাটবাড়ি, গলি, তস্যগলিতে প্রায় প্রতিদিন লেগে থাকে তীব্র যানজট। রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ি ও বন্ধের তাৎক্ষণিক নিষেধাজ্ঞা। বৃষ্টি ও বর্ষায় পানি জমে গেলে জনদুর্ভোগ হয় অবর্ণনীয়। এতেও শেষ রক্ষা হলে কথা ছিল। এখন পর্যন্ত পুরো প্রকল্পের কাজ শেষ হয়েছে ৭০ শতাংশ। সুতরাং জনদুর্ভোগ এখনই কমবে, এমন বলা যাচ্ছে না। যে কোন পরিকল্পনা সুষ্ঠু, সমন্বিত, জনস্বার্থসংশ্লিষ্ট, সর্বোপরি ব্যয়সাশ্রয়ী হওয়া অত্যাবশ্যক। দুঃখজনক হলো সরকারী প্রতিষ্ঠানগুলো প্রায়ই তা মনে রাখে না। আর সে কারণেই যে প্রকল্প ২০১৫ সালের মধ্যে শেষ হওয়ার কথা, তা তিন দফা মেয়াদ বাড়িয়েও ২০১৭ সাল নাগাদ শেষ করা যায় না। সঙ্গত কারণেই এতে করে বাড়ে জনদুর্ভোগ, দুর্ঘটনা ও প্রকল্প ব্যয়। দুর্নীতি-অনিয়মও পায় প্রবেশাধিকার। আর উন্নয়নে শ্লথগতি পরিলক্ষিত হলে সাধারণ মানুষকে পড়তে হয় সমূহ আর্থিক ঝুঁকির মুখে। ফ্লাইওভার নির্মাণ করতে গিয়ে দু’পাশের ব্যবসা-বাণিজ্য যে লাটে উঠেছে, তার কথা কেউ মনে রাখে না। নিচের খানাখন্দে ভর্তি রাস্তাগুলোর অবস্থাও শোচনীয়। আরও যা দুঃখজনক, নির্মাণ কাজে গাফিলতির জন্য মানুষের মৃত্যুর খবরও আছে। আগামীতে রাজধানীতে মেট্রোরেল, পাতালরেলসহ আরও ফ্লাইওভার নির্মিত হতে যাচ্ছে। খুব ভাল। তবে যেন সময়ের কাজ যথাসময়ে শেষ হয় এবং জনদুর্ভোগ ও দুর্ঘটনা এড়ানো যায়।
×