ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

টি ইসলাম তারিক

‘মেসিকে ছাড়িয়ে যাচ্ছেন নেইমার’

প্রকাশিত: ০৬:০৮, ১৫ মার্চ ২০১৭

‘মেসিকে ছাড়িয়ে যাচ্ছেন নেইমার’

পুরো বিশ্বজুড়ে এখন নেইমার বন্দনা। এই ব্রাজিলিয়ান সুপারস্টারের নৈপুণ্যে ভর করেই অসাধ্য সাধন করেছে বার্সিলোনা। চ্যাম্পিয়ন্স লীগের ইতিহাসে ফিরে আসার রেকর্ড গড়ে পৌঁছে গেছে কোয়ার্টার ফাইনালে। শেষ ষোলোর দ্বিতীয় লেগের ম্যাচে পিএসজির বিরুদ্ধে গোলের পর গোল করার পরও স্বপ্ন ফিকে ছিল কাতালানদের। অবিশ্বাস্যভাবে স্বপ্নটা সত্যি করেছেন সেলেসাও তারকা। ম্যাচ শেষ হওয়ার দুই মিনিট আগে বিস্ময়জাগানিয়া ফ্রিকিকে বার্সাকে চাঙ্গা করার পর অতিরিক্ত সময়ের প্রথম মিনিটে পেনাল্টি থেকে গোল করেন। তখনও ম্যাচ শেষ হলে বিদায় নিতে হতো বার্সাকে। কিন্তু শেষ মিনিটে নেইমারের ফ্রিকিক থেকেই পা ছুয়ে বিশ্বরেকর্ড গড়া পূরণ করেন সার্জেই রবার্টো। ম্যাচের একটা পর্যায়ে বার্সাকে ম্লান হচ্ছিল! তখন দলকে একাই টেন তোলেন নেইমার। ফিরে আসার পুরো গল্পের নায়ক সে। তাইতো বিশ্বজুড়ে নেইমারের প্রশংসা। সাবেক ও বর্তমান তারকারা বলছেন, নেইমারের নৈপুণ্যেই অসাধ্য সাধন। প্রথম লেগে চার গোলে পিছিয়ে পড়ার পরই বার্সার বিদায় দেখেছিলেন বেশিরভাগ মানুষ। তখনও বিশ্বাস হারাননি নেইমার। জোর গলায় বলেছিলেন, ‘যদি আমাদের ১ শতাংশও সম্ভাবনা থাকে, তাহলে ৯৯ শতাংশ বিশ্বাস নিয়ে আমরা ঝাঁপিয়ে পড়ব’। কথা রেখেছেন টগবগে যুবক। পিএসজিকে মরণ কামড় দিয়ে বিশ্বরেকর্ডের সারথী হয়েছেন তিনি। ম্যাচ শেষে তাই নেইমারের মুখে বিশ্বাসের জয়গানই ছিল। বলেন, আমরা শেষ মুহূর্তটি পর্যন্ত বিশ্বাস ধরে রেখেছি। আর যদি আমরা বিশ্বাস করি, সেভাবেই খেলি, তাহলে বার্সাকে রোখা দুঃসাধ্য! আমার জীবনের সেরা ম্যাচ এটি। অনিন্দ্য সুন্দর ম্যাচের কলঙ্ক হয়ে আছেন জার্মান রেফারি ডেনিজ আইটকিন। এই ভদ্রলোক এখন যেন বিশ্বচোর! পিএসজি সমর্থকরা অন্তত তাকে এভাবেই সম্বোধন করছেন। তাদের দাবি, ডেনিজ দু’টি পেনাল্টিসহ আরেকটি গোল বার্সাকে উপহার দিয়েছে! তার দেয়া সিদ্ধান্তগুলো ম্যাচের ভাগ্য কতটা বদলেছে এটা সবাই জানে। আর এ কারণেই নিজের ভাগ্যটাই বদলে যেতে পারে ডনিজের। চ্যাম্পিয়ন্স লীগ ও ইউরোপা লীগের ম্যাচ রেফারিদের দায়িত্ব বণ্টনের ভারটা পিয়েরলুইজি কলিনার কাঁধে। উয়েফার রেফারিং প্রধান নির্ধারণ করবেন ডেনিজ আগামী কিছুদিন আর কোন বড় ম্যাচের দায়িত্ব পাবেন কি না। তবে এখন পর্যন্ত যে ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে, এ মৌসুমে হয়তো আর কোন ম্যাচের দায়িত্ব পাবেন না এই জার্মান রেফারি। কিছুদিন সাইডলাইনে দাঁড়িয়ে থাকাটাই হয়তো ভাগ্যে আছে তার। ডেনিজের শাস্তির কারণ বার্সার পাওয়া দ্বিতীয় পেনাল্টি। রিপ্লেতে দেখা গেছে, ব্রাজিলিয়ান ডিফেন্ডার মার্কিনহোসের সঙ্গে আলতো ছোঁয়া লেগেছিল লুইস সুয়ারেজের। তাতেই ডাইভ দিয়ে পড়ে যান সুয়ারেজ। যতটা না ফাউল হয়েছে, সুয়ারেজ তার চেয়ে বেশি পরিস্থিতির ফায়দা লুটেছেন। মানে পুরোদোস্তর অভিনয় করেছেন সুয়ারেজ! উরুগুইয়ান তারকার নাটক থেকে পাওয়া পেনাল্টিতে বার্সার হয়ে পঞ্চম গোল করেন নেইমার। এটা নিয়েই সমালোচনার ঝড় চলছে। ক্রোয়েশিয়ার কোচ তো সুয়ারেজকে অভিনয় করার আহ্বান জানিয়েছেন। বিশ্বের নানাপ্রান্তে আরও অনেকেই সুয়ারেজকে অভিনেতা বলছেন। তবে কড়া মন্তব্যে লার্স ল্যাজেরব্যাকের ধারের কাছেও কেউ যেতে পারেননি। এই সুইডিশ কোচ কিছুতেই মানতে পারছেন না এ সিদ্ধান্ত। তিনি বলেন, এটা খুব বাজে ব্যাপার হলো যে এমন ম্যাচের ভাগ্য একটা ডাইভই নির্ধারণ করে দিল। ফুটবল বিশ্বের জন্য আমার খারাপ লাগছে। আমার খুব রাগ হয়েছে। এটা তো সুয়ারেজ-নাটক হলো! গোলের পাশে আমরা তাহলে রেফারি কেন রাখছি, যদি এটাই দেখতে না পায়। ফিফা সভাপতি জিয়ান্নি ইনফান্টিনো বিতর্কের মধ্যে যাননি। কৌশলের আশ্রয় নিয়ে তিনি সুন্দর ফুটবলের প্রশংসা করেছেন। মানে বার্সার নয়নাভিরাম ফুটবলের। ইনফান্টিনো বলেন, একটা অসাধারণ ম্যাচ দেখেছে সবাই। এটা দেখিয়ে দিল ফুটবল আসলে কতটা দুর্দান্ত খেলা। এমন ম্যাচে অনেক কিছুই ঘটতে পারে। কিন্তু সবকিছু ছাপিয়ে ফুটবলেরই জয় হয়েছে। আর নেইমার যা করেছে তা সত্যিই অবিশ্বাস্য। এদিকে ফ্রান্সের সাবেক কোচ রেমন্ড ডমেনেখ জানিয়েছেন, নেইমার ও সুয়ারেজের সঙ্গে মান বজায় রেখে খেলতে পারছেন না মেসি। পিএসজির বিরুদ্ধে ম্যাচে মেসি ছিলেনÑ নিজের ছায়া হয়ে! এমনই দাবি করেছেন ডমেনেখ। এতে করে ‘এমএসএন’ এর ধারও কমছে বলে মনে করেন তিনি। শুধু তাই নয়, অনেকে মনে করছেনÑ মেসিকে ছাড়িয়ে যাচ্ছেন নেইমার। সম্প্রতি এ নিয়ে মেসিকে খোঁচা দিয়েছেন তার চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডো। এক সাক্ষাতকারে সি আর সেভেন আকারে-ইঙ্গিতে জানিয়েছেন, বর্তমানে মেসির চেয়ে নেইমারই ভাল! পিএসজির বিরুদ্ধে ম্যাচে বার্সার রূপকথার গল্পের রূপকার নেইমার। স্বপ্ন ফিকে হয়ে যাওয়া ম্যাচে কাতালানদের প্রাণ ফিরিয়েছেন সেলেসাও সুপারস্টার। পুরো ম্যাচে অবিশ্বাস্য পারফরমেন্স প্রদর্শন করেন ২৫ বছর বয়সী এই ফরোয়ার্ড। ম্যাচ শেষে নেইমার বলেন, এটা আমার ক্যারিয়ারের সেরা ম্যাচ। এ ধরনের ম্যাচ আমি আগে কখনই খেলিনি। যে অভিজ্ঞতা আমার হয়েছে তাতে একটি কথাই বলতে চাই আমি দারুণ ফর্মে আছি। আমি জানি আমরা ইতিহাস রচনা করেছি। আমাদের মতো দল যে কোন কিছুই করতে পারে। শেষ পর্যন্ত বিশ্বাসটা ধরে রাখতে পেরেছি বলে সবাইকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি। এমন ঘটনা জীবনে খুব বেশিবার আসে না। অনেকে বিশ্বাস করতে পারেনি যে আমরা পারব, তবে আমরা সেটা করে দেখিয়েছি। ব্রাজিলিয়ান সুপারস্টার বলেন, আমরা যদি বিশ্বাস রেখে খেলি, তাহলে বার্সাকে থামানো অসম্ভব। মহাকাব্যিক ম্যাচে বার্সাকে আসলে জিতিয়েছেন নেইমার। কাতালান শিবিরে ছিলেন মেসি, সুয়ারেজের মতো মহাতারকাও। কিন্তু শেষ পর্যন্ত হিরো বনে গেছেন সেলেসাও তারকা। নিজে জোড়া গোল করেছেন, একটি পেনাল্টি আদায় করে দিয়েছেন, বার্সার জয়সূচক গোলও নেইমারের নিখুঁত ফ্রি কিকের সৌজন্যে। সবখানেই নেইমারের নাম। একসময় নিস্তেজ হয়ে যাওয়া বার্সাকে জাগিয়ে তোলার কারিগরও তিনি। এ কারণেই নেইমারের প্রশংসায় পঞ্চমুখ সবাই। এই ন্যু-ক্যাম্পেই ১৯৯৯ সালে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড ইনুজরি টাইমে দুটি গোল করে বেয়ার্ন মিউনিখকে হারিয়ে শিরোপা জিতেছিল। এই ম্যাচটি যেন ছিল তারই প্রতিফলন। এছাড়া ২০০৫ সালে লিভারপুলও ফাইনালে এসি মিলানের কাছে ৩-০ গোলে পিছিয়ে থেকে দ্বিতীয়ার্ধে ম্যাচ জয় করেছিল। উচ্ছ্বসিত বার্সা কোচ লুইস এনরিকে বলেন, এটা এমন একটি রাত যা ভাষায় প্রকাশ করা কঠিন। আমার কাছে এটা নাটক নয়, ভয়ের সিনেমার মতোই। এই ধরনের ম্যাচ একজন খেলোয়াড় বা কোচ হিসেবে ন্যু-ক্যাম্পে আমি খুব কমই দেখেছি। এই ম্যাচটি খেলোয়াড় ও সমর্থকদের আস্থার বিষয়টিই প্রমাণ করেছে। এনরিকে বলেন, ৪-০ গোলে হারের পর যারা আমাদের ওপর বিশ্বাস রেখেছিল, তাদের ধন্যবাদ। এই জয় তাদের জন্য উৎসর্গ করছি। কেননা বার্সিলোনা হার্লেম গ্লোবট্রটার্স নয় (প্রদর্শনী ম্যাচ খেলে বেড়ানো বাস্কেটবল দল), এটাই ফুটবল।
×