ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

টেস্ট থেকে বাদ পড়ে আলোচনায় মাহমুদুল্লাহ

প্রকাশিত: ০৬:০৭, ১৫ মার্চ ২০১৭

টেস্ট থেকে বাদ পড়ে আলোচনায় মাহমুদুল্লাহ

সত্যিকারের টেস্টপ্রেমী মানুষ বলবেন, এতদিন কেন বাদ পড়েননি মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ। ওয়ানড-টি২০-তে যেমন তেমন, সম্প্রতি সাদা পোশাকের অভিজাত ক্রিকেটে বড্ড মলিন তিনি। গুরুত্বপূর্ণ পজিশনে ব্যাটিং করেও বেশ কিছুদিন ধরে নিজের ছায়া হয়ে আছেন। অবশেষে বাদই পড়তে হলো। কলম্বোয় নিজেদের ঐতিহাসিক শততম টেস্ট খেলছে মুশফিকুর রহীমের দল। আকর্ষণীয় অলরাউন্ডার মাহমুদুল্লাহর বাদ পড়াটা সেখানে অন্যতম আলোচিত। ফর্মহীতায় যে কেউ বাদ পড়তে পারেন। তবে আলোচনাটা সমালোচনায় রূপ নেয়। প্রথমে বলা হয়, তাকে দেশে ফেরত পাঠানো হবে। অথচ টেস্টের পর ওয়ানডে ও টি২০ সিরিজ। রঙ্গিন পোশাকের সংক্ষিপ্ত ফরমেটে মাহমুদুল্লাহ এখনও অদ্বিতীয়। যদিও সেদিনই বিতর্কটাকে থামিয়ে দিয়ে বোর্ড (বিসিবি) প্রধান নাজমুল হাসান পাপন জানিয়েছেন, অভিজ্ঞ অলরাউন্ডারকে একসঙ্গে তিন ফরমেট থেকে বাদ দেয়া হয়নি। ২০০৭ সালের ২৫ জুলাই শ্রীলঙ্কার কলম্বোতে স্বাগতিকদের বিপক্ষে ওয়ানডে দিয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে আগমন। দুই বছর পর ২০০৯ সালের ৯ জুলাই টেস্টে অভিষেক হয় মাহমুদুল্লাহর। কিংসটাউনে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সে ম্যাচে ব্যাটিং যেন বিভীষিকা ছিল তার জন্য। দুই ইনিংসে যে মাত্র ১৭ (৯+৮) রান করতে পেরেছিলেন। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে শুরুর সেই হতশ্রী অবস্থা কিছুটা কাটিয়ে উঠতে পেরেছিলেন ওয়ানডেতে। সিরিজের চতুর্থ ম্যাচে অপরাজিত ৪৯ রানের ইনিংস, ষষ্ঠ ম্যাচেই পেয়েছিলেন প্রথম অর্ধশতক। নিজের খেলা তৃতীয় টেস্টে ৬৯ রানের ইনিংস এসেছিল তার ব্যাট থেকে। পরের টেস্টেই খেলেছিলেন অপরাজিত ৯৬ রানের দারুণ এক ইনিংস। ঠিক পরের টেস্টেই মাহমুদুল্লাহর ব্যাট থেকে এসেছিল ১১৫ রানের ঝলমলে এক ইনিংস। ২০১০ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি হ্যামিল্টনে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে খেলা ওই ইনিংসই হয়ে আছে এখনও তার সেরা টেস্ট ইনিংস। তারচেয়েও বিস্ময়কর, ওই ইনিংসের পর আরেকটি টেস্ট সেঞ্চুরিও আসেনি! দিনের হিসাবে ৭ বছর ২৪ দিন পেরিয়ে গেছে! এত দীর্ঘ সময়েও আর টেস্ট সেঞ্চুরির উল্লাসে মাততে পারেননি মাহমুদুল্লাহ। অথচ দলে তিনি গুরুত্বপূর্ণ একজন ব্যাটসম্যান। অভিষেকের পর টেস্টে এখনও পর্যন্ত ১৩টি অর্ধশতক পেয়েছেন মাহমুদুল্লাহ। শতক ওই একটাই। তার ওই ১৩ অর্ধশতকের একটি আটকেছিল নব্বইয়ের ঘরে, সত্তরের ঘরে দুটি এবং ষাটের ঘরে ছয়টি। টপঅর্ডারের ব্যাটসম্যান এত দীর্ঘ সময় ধরে সেঞ্চুরির দেখা পাচ্ছেন না, এ নিয়ে নিশ্চয়ই কথা উঠবে। কিংবা সেঞ্চুরির হিসাব যদি একপাশে সরিয়েও রাখা হয়, তবেও তো মাহমুদুল্লাহর টেস্ট পরিসংখ্যান আহামরি ধরনের কিছুই নয়। এখন পর্যন্ত টেস্ট খেলেছেন ৩৩টি। ৬২টি ইনিংসে রান ১৮০৯, গড় ৩০.১৮, শতক একটি, অর্ধশতক ১৩টি। তার সাম্প্রতিক পারফর্মেন্স আরও করুণ! গত বছর (২০১৬) টেস্ট খেলেছেন দুটি। চার ইনিংসে রান মোটে ১১৫, গড় ২৮.৭৫, অর্ধশতকও নেই একটি (ইনিংসে সর্বোচ্চ ৪৭ রান)। চলতি বছর খেলা চার টেস্টের ৮ ইনিংসে করেছেন ১৮৮ রান, গড় ২৩.৫০, মাত্র এক অর্ধশতক (ইনিংসে ৬৪ রান, ফেব্রুয়ারিতে ভারতের বিপক্ষে)। সর্বশেষ ২০ টেস্ট ইনিংসে মাহমুদুল্লাহর অর্ধশতক মাত্র দুটি (শতক তো নেই-ই)! এসব ইনিংসে তার ব্যাট থেকে এসেছে ৫৭০ রান, গড় ২৮.৫! এবার ওয়ানডের দিকে দৃষ্টি দেয়া যাক। ১৩৪ ম্যাচে মাহমুদুল্লাহর ৩২.৮৫ গড়ে রান ২৮৫৮, অর্ধশতক ১৬টি, শতক দুটি। অর্থাৎ ১৩৪ ম্যাচের মাত্র ১৮টিতে সমীহ জাগানো ইনিংস এসেছে তার ব্যাট থেকে। এ বছর এখনও ওয়ানডে খেলেনি বাংলাদেশ। গত বছর ৯ ওডিআই ম্যাচে মাহমুদুল্লাহর ব্যাট থেকে দল পেয়েছে ২২৯ রান। গড় তার ক্যারিয়ার গড়ের চেয়েও করুণ! মাত্র ২৮.৬২। অর্ধশতক আছে দুটি। ওডিআই খেলার ৮ বছরে এসে পেয়েছিলেন নিজের ক্যারিয়ারের প্রথম সেঞ্চুরি (২০১৫ সালের মার্চে, নিউজিল্যান্ডে)। একটা সময় ছিল, যখন বাংলাদেশ দলের কেউ কেউ অব্যাহত খারাপ ফর্মেও দলে জায়গা হারাতেন না। আবার এমনও হয়েছে, কেউ কেউ দুয়েক ম্যাচে খারাপ খেললেই বাদ পড়ে গেছেন! এক্ষেত্রে মাহমুদুল্লাহ ‘সৌভাগ্যবান’! টানা খারাপ পারফর্মেন্স করেও দলে টিকে গেছেন তিনি। যেখানে শাহরিয়ার নাফীস, তুষার ইমরান, নাসির হোসেন, নাঈম ইসলামরা ঘরোয়া ক্রিকেটে রানের বন্যা বইয়ে দিয়েও দলে ডাক পান না, সেখানে ধারাবাহিক ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েও কেন মাহমুদুল্লাহ জায়গা হারাবেন না? এটা কি শাহরিয়ার, তুষার, নাসিরদের প্রতি অবহেলা নয়? তাদের সামর্থ্যকে অবজ্ঞা করা নয়? দীর্ঘ সাত বছরেও যে ব্যাটসম্যান টেস্টে সেঞ্চুরির দেখা পান না, ক্রিকেটের চরম প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ এই সময়ে তাকে বয়ে বেড়ানো কি বাংলাদেশের জন্য এত জরুরী? ওয়ানডের মাহমুদুল্লাহকে নিয়ে এখনও খুব বেশি প্রশ্ন ওঠেনি, কিন্তু টেস্টের মাহমুদুল্লাহ যে আর চলে না! টপঅর্ডারে গুরুত্বপূর্ণ পজিশনে ব্যাটিং মাহমুদুল্লাহর। তার ব্যর্থতায় দলের যে ক্ষতি হচ্ছে, এটা তো সত্য। কলম্বো টেস্ট থেকে বাদ পড়ার পর ম্যানেজার খালেদ মাহমুদ সুজন বলেছিলেন, মাহমুদুল্লাহকে দেশে পাঠিয়ে দেযা হবেÑ এ নিয়েই নতুন করে বিতর্ক তৈরি হয়। সুজন বলেন, ‘কলম্বো টেস্ট শুরুর আগেই ওকে দেশে ফেরত পাঠানো হচ্ছে। যেহেতু ম্যাচ পাচ্ছে না রিয়াদকে তাই শ্রীলঙ্কায় রাখার প্রয়োজন মনে করছে না টিম ম্যানেজমেন্ট।’ ম্যানেজারের এ কথাতেই ইঙ্গিত মেলে ওয়ানডে সিরিজেও থাকবেন না রিয়াদ। পরে বোর্ড প্রধানের বক্তব্যে বোঝা যায় কোথাও কোন ভুল হয়েছে। পাপন সেদিনই বলেন, ‘ম্যানেজমেন্ট বা আমাদের পক্ষ থেকে ওকে ফেরত পাঠানোর প্রশ্নই আসে না। সামনে ওয়ানডে আছে, ওর থাকার কথা। অন্যরকম কিছু হলে আমি অন্তত জানতাম।’ একপর্যায়ে তিনি এমনও বলেন, ‘রিয়াদের ওয়ানডে দল থেকে বাদ পড়া, আমার সঙ্গে আলাপ না করে কেউ করবে, এটা আমার মনে হয় না। ও একজন সিনিয়র ক্রিকেটার, অনেক অবদান আছে, এ রকম হওয়ার কথা নয়। হতে পারে কোন ম্যাচে কম্বিনেশনের কারণে কেউ ঢুকবে, কেউ বাদ পড়বে। কিন্তু একেবারে স্কোয়াডে না থাকার কথা নয়।’
×