ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

বিউটি পারভীন

ঐতিহাসিক শততম টেস্ট বাংলাদেশের

প্রকাশিত: ০৬:০৭, ১৫ মার্চ ২০১৭

ঐতিহাসিক শততম টেস্ট বাংলাদেশের

আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কাউন্সিলের (আইসিসি) টেস্ট সদস্য হওয়ার পর পেরিয়ে গেছে ১৭ বছর। টেস্ট খেলুড়ে দেশ হিসেবে ভারতের বিরুদ্ধে প্রথম ম্যাচ খেলে যাত্রা শুরুর পর এখন নিজেদের নতুন এক মাইলফলক স্পর্শ করল বাংলাদেশ ক্রিকেট। কলম্বোর পি. সারা ওভাল বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসে বিশেষভাবে লিপিবদ্ধ হয়ে থাকবে। কারণ এ মাঠেই স্বাগতিক শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে টেস্ট খেলতে নেমেছে বাংলাদেশ দল। ২০০০ সালে টেস্ট মর্যাদা প্রাপ্তির পর ১০০তম টেস্ট খেলার জন্য বাংলাদেশকে অপেক্ষা করতে হয়েছে ১৭ বছর। তবে সব টেস্ট খেলুড়ে দেশের মাটিতে গিয়ে খেলা হলেও বাদ ছিল ভারতের মাটিতে খেলা। সেটাও নিজেদের ৯৮তম টেস্টে হায়দরাবাদে খেলার মাধ্যমে হয়েছে। এবার হায়দরবাদে টেস্ট খেলেছে মুশফিকুর রহীমের দল। সাম্প্রতিক সময়ে দারুণ খেলতে থাকা দলটি অবশ্য সর্বশেষ কয়েকটি সফরে কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে। নিউজিল্যান্ড ও ভারত সফরে হারের পর শ্রীলঙ্কা সফরে প্রথম টেস্টেই গলে খেলতে নেমে হেরে গেছে ২৫৯ রানের বড় ব্যবধানে। এবার ঐতিহাসিক মাইলফলক ছোঁয়ার ম্যাচে ঘুরে দাঁড়ানো বড় অগ্নিপরীক্ষা দলের জন্য। কারণ এবার শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে জয়ের মোক্ষম সুযোগ বলেই মনে করছিলেন অনেকে। এমনকি অধিনায়ক মুশফিকুর রহীম ও কোচ চান্দিকা হাতুরাসিংহেও আত্মবিশ্বাস জানিয়েছিলেন জয়ের। নিজেদের প্রথম টেস্ট ঘরের মাটিতে খেলেছিল বাংলাদেশ। একমাত্র টেস্ট খেলতে সেবার বাংলাদেশে এসেছিল ভারত। ক্রিকেট ইতিহাসে সেটাও বিশেষ কারণে ছিল অবিস্মরণীয় একটা ব্যাপার। কারণ প্রথমবারের মতো দুই প্রতিপক্ষ বাঙালী অধিনায়ক মুখোমুখি হয়েছিলেন। বাংলাদেশের নাঈমুর রহমান দুর্জয় আর ভারতের পক্ষে কলকাতার সৌরভ গাঙ্গুলী। সেখান থেকে এবার শততম টেস্ট। তবে সেটা এবার খেলতে হবে ভিনদেশে। শ্রীলঙ্কার মাটিতে। কিন্তু বিশেষ এই অর্জনের মাইলফলকটা স্মরণীয় করে রাখার জন্য সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টে বিশেষ কিছু আয়োজন রাখছে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) ও শ্রীলঙ্কা ক্রিকেট (এসএলসি)। শততম এই টেস্টে দলের খেলোয়াড় ও কর্মকর্তাদের জন্য থাকছে স্মারক ক্যাপ, ক্রেস্ট ও ব্লেজার। যাতে লেখা থাকবে ‘শততম টেস্ট’। এছাড়া থাকছে বিশেষ স্যুভেনির। তবে দেশের মাটিতে এই ঐতিহাসিক ম্যাচ অনুষ্ঠিত হলে আয়োজনটা আরও বিশেষ কিছু আয়োজনের মাধ্যমে উৎসবমুখর করা হতো। যদিও প্রতিপক্ষ দলের শততম টেস্ট, কিন্তু শ্রীলঙ্কার নামটাও জড়িয়ে থাকবে রেকর্ডবুকে। এ কারণে এসএলসিও উভয় দলের খেলোয়াড়ের জন্য বিশেষ পদক দেবে। শ্রীলঙ্কার এটি ২৫৭তম টেস্ট। বিসিবির অনেক কর্মকর্তাই এ উপলক্ষে শ্রীলঙ্কা যাচ্ছেন। ম্যাচ শেষে থাকবে বিশেষ নৈশভোজ এসএলসির পক্ষ থেকে। এমনকি ম্যাচটি দেখার জন্য দেশের ৫শ’ শিশুকে মাঠে আসার ব্যবস্থা করছে তারা। গল টেস্টে একেবারে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় হেরে গেছে বাংলাদেশ দল। সেটি ছিল ৯৯তম টেস্ট। সবমিলিয়ে ৭৯ টেস্ট হেরেছে বাংলাদেশ, জিততে পেরেছে মাত্র ৮টি এবং ড্র আছে ১৫টি। শততম টেস্টকে বাড়তি মাত্রা দিতে পারবেন দলের ক্রিকেটাররা? সেটা বেশ কঠিনই হবে বাংলাদেশের জন্য। সাম্প্রতিক সময়ে টানা হারের বৃত্তে পড়ে যাওয়াটাই এর কারণ। আর গল টেস্ট ঘিরে অনেক প্রত্যাশা জমা হয়েছিল। সেই টেস্টে দলের বাজে নৈপুণ্য এখন ভাল করার পথে বড় বাধা। এর সঙ্গে বাংলাদেশ দলেও আসছে পরিবর্তন। ইতোমধ্যেই টানা বাজে নৈপুণ্যের মধ্যে থাকা মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ দ্বিতীয় টেস্ট থেকে ছিটকে পড়েছেন। দেশ থেকে দলের সঙ্গে যোগ দিতে শ্রীলঙ্কায় গেছেন ইমরুল কায়েস। সে কারণে এ ম্যাচে হয়ত তামিম ইকবালের সঙ্গে ইনিংস উদ্বোধনের দায়িত্বটা পাবেন তিনিই। আর গল টেস্টে ওপেনিংয়ে নামা সৌম্য চলে যাবেন ওয়ানডাউনে অথবা আরও নিচের দিকে। লিটন দাসের হাতেই থাকছে উইকেটকিপিংয়ের গ্লাভস। অধিনায়ক মুশফিকুর রহীম স্পেশালিস্ট ব্যাটসম্যান হিসেবে সাধারণ ফিল্ডার হিসেবেই মাঠে থাকবেন। প্রথম টেস্টে স্কোয়াডে থাকলেও খেলেননি পেসার কামরুল ইসলাম রাব্বি। তিনিও বাদ পড়েছেন পি. সারা ওভাল টেস্টে। এত কিছুর মধ্যে লঙ্কানদের বিরুদ্ধে ঘুরে দাঁড়ানো বেশ কঠিন। অথচ এবারই প্রথম শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে এমন একটি দলের বিরুদ্ধে টেস্ট খেলতে নেমেছে বাংলাদেশ যে দলটিতে নেই দুই কিংবদন্তি কুমার সাঙ্গাকারা ও মাহেলা জয়াবর্ধনে। এছাড়া নিয়মিত অধিনায়ক এ্যাঞ্জেলো ম্যাথুসও দল থেকে ছিটকে যান ইনজুরির কারণে। একেবারেই নবীন চেহারার দল হয়ে উঠেছে শ্রীলঙ্কা। কিন্তু এরপরও ঘরের মাটিতে লঙ্কানরাই জিতে গেল। আর বাংলাদেশ দল চিরাচরিত নিয়মে টেস্ট আঙ্গিনায় নিজেদের দুর্বলতা আরেকবার বুঝে গেল। এরপর হতাশা নিয়েই হাতুরাসিংহে বলেন, ‘টেস্ট ক্রিকেটে এখনও পায়ের নিচে মাটিটা খুঁজে পায়নি বাংলাদেশ দল। টেস্ট ক্রিকেটে এমন একটি দলকে নিয়ে আমরা অযথাই বেশি আশা করেছি।’ নিউজিল্যান্ড সফরে ২-০ ব্যবধানে হোয়াইটওয়াশ হয়ে ফেরার পর ভারত সফরে একমাত্র টেস্টে দারুণ খেলেছিল বাংলাদেশ দল। ম্যাচের ৫ দিনই ভাল লড়াই করেছে। যদিও হারতে হয়েছে, কিন্তু লড়াকু মনোভাব আত্মবিশ্বাসের জন্ম দিয়েছিল। সে কারণে নবীনদের নিয়ে নতুন করে গড়ে ওঠা লঙ্কানদের বিরুদ্ধে জয়ের প্রত্যাশা করছিল দল। কিন্তু কথায় সীমাবদ্ধ থাকলেও সেটা মাঠে পরিস্ফুট হয়ে উঠেনি। শেষ পর্যন্ত হেরে আবারও হোয়াইটওয়াশের শঙ্কায় দল। হারলেই ধবলধোলাইয়ের আরেকটি লজ্জা বরণ করতে হবে। সেটা ঠেকাতে হলে ন্যূনতম ড্র করতেই হবে। তবে সিরিজ বাঁচানোর জন্য জিততেই হবে শততম টেস্ট। ঐতিহাসিক ম্যাচটিকে আরও অবিস্মরণীয় ও ইতিহাসে স্বর্ণালী অক্ষরে লিপিবদ্ধ করার জন্য এটা দারুণ সুযোগ ক্রিকেটারদের। মুশফিক বাহিনী কি জ্বলে উঠতে পারবেন পি. সারা ওভালে? বাংলাদেশ দল সর্বাধিক ১৭ টেস্ট খেলেছে শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধেই। এরপর ১৪ টেস্ট খেলার অভিজ্ঞতা আছে জিম্বাবুইয়ের বিরুদ্ধে, ১৩ টেস্ট নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে। জিম্বাবুইয়ের বিরুদ্ধে সবচেয়ে বেশি ৫ টেস্ট জিতেছে বাংলাদেশ। ২টি জয় ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও ১টি জয় ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে। বাকি ৬ দলের বিরুদ্ধে জিততেই পারেনি বাংলাদেশ। পি. সারা ওভালে কি ঐতিহাসিক ম্যাচে অবিস্মরণীয় কিছু করতে পারবে মুশফিকুর রহীমের দল? ইতিহাসের পাতায় স্বর্ণাক্ষরে লিপিবদ্ধ হবে বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের নাম? সেটা সময়ই বলে দেবে।
×