ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

মাহমুদুল্লাহর পর মুমিনুল!

প্রকাশিত: ০৬:০৩, ১৫ মার্চ ২০১৭

মাহমুদুল্লাহর পর মুমিনুল!

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ কলম্বোয় আজ নিজেদের শততম টেস্ট খেলতে নামছে বাংলাদেশ। বন্ধুপ্রতীম প্রতিপক্ষের ঐতিহাসিক এ ম্যাচ স্মরণীয় করে রাখতে আয়োজনের কমতি রাখছে না স্বাগতিক শ্রীলঙ্কান বোর্ড (এসএলসি)। অথচ যাদের জন্য এত আড়ম্বরতা সেই বাংলাদেশ শিবিরেই কিনা গুমোট হাওয়া! শুরুটা মাহমুদুল্লাহ রিয়াদের বাদ পড়া দিয়ে। দীর্ঘদিন পর সাদা পোশাকের দল থেকে ছিটকে গেছেন টাইগারদের সময়ের অন্যতম সেরা এই টপঅর্ডার ব্যাটসম্যান। গুমোট হাওয়ায় এবার তুষের আগুন হয়ে জ্বলে ওঠার মতো খবর, প্রাথমিক দলে থাকলেও মুমিনুল হকের মূল একাদশে জায়গা নাও হতে পারে। হ্যাঁ, ঠিকই পড়ছেন মুমিনুল। সেই মুমিনুল যাকে সাদা পোশাকের ক্রিকেটে ‘বাংলাদেশের ব্র্যাডম্যান’ বলে ডাকা হয়। বোর্ডের (বিসিবি) নির্ভরযোগ্য সূত্রের খবর, ঐতিহাসিক এক শ’ নম্বর টেস্টে টেস্ট স্পেশালিস্ট ব্যাটসম্যানকে ছাড়াই দল সাজানো হতে পারে। অধিনায়ক মুশফিকুর রহীম কিপিং ছাড়ায় উইকেটের পেছনে এখন লিটন কুমার দাস। ফিট হয়ে ফিরেছেন ক্ল্যাসিক্যাল ওপেনার ইমরুল কায়েস। ধীরে ধীরে ফর্ম খুঁজে পাওয়া সৌম্যর ব্যাটেও ভালকিছুর ইঙ্গিত। গল থেকে ফিরে কলম্বোয় প্রস্তুতি পর্বে কোচ হাতুরুসিংহে সৌম্য সরকারকে নিয়ে যেভাবে ঘণ্টার পর ঘণ্টা ব্যয় করেছেন, তাতে হার্ডহিটার এই উইলোবাজের ফেরার সম্ভাবনা প্রবল। তিন পেসারের পরিবর্তে একজন বাড়তি স্পিনার হিসেবে তাইজুল ইসলামকে নেয়া হলে মুমিনুলের জায়গা কোথায়? প্রাপ্ত সূত্রের খবর বাস্তব হলো মাহমুদুল্লাহর পর টেস্টে জায়গা হারাচ্ছেন মুমিনুলও। সেক্ষেত্রে একাদশে অটোমেটিক পছন্দ নয় সদস্য তামিম ইকবাল, ইমরুল কায়েস, সৌম্য সরকার, মুশফিকুর রহীম, সাকিব আল হাসান, লিটন কুমার দাস, মেহেদী হাসান মিরাজ, মুস্তাফিজুর রহমান ও তাসকিন আহমেদ। মুমিনুল, সাব্বির, তাইজুল ও শুভাশীষের মধ্য থেকে দু’জন বাদ পড়বেন। কলম্বোর প্রেমাদাসা স্টেডিয়ামের ইতিহাস বলে, শেষ তিনদিনে এখানে স্পিনাররাই বেশি সফল হবেন। জীবনের প্রায় দুই দশক এই মাঠে কাটানো হাতুরুও সেটি ভাল করে জানেন। তাই ঘূর্ণিবলে মিরাজ-সাকিবের সঙ্গী হতে পারেন একমাত্র স্পেশালিস্ট স্পিনার তাইজুল। আর গল টেস্টে ব্যর্থতার পর সাব্বিরকে নিয়ে কোচের মনোযোগ মিলিয়ে নিলে বাদ পড়ছেন মুমিনুল। প্রথম ম্যাচের দুই ইনিংসে ৭ ও ৫ রান করে আউট হয়েছেন। তার আগে ভারত সফরে একমাত্র টেস্টে ১২ ও ২৭। নিউজিল্যান্ডে ওয়েলিংটন টেস্টের প্রথম ইনিংসে হাফ সেঞ্চুরি (৬৪) পেলেও দ্বিতীয় ইনিংসে সাজঘরে ফেরেন মাত্র ২৩ রান করে। শেষ পাঁচ ইনিংসে সেটিই ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে এতেই কি মুমিনুলের মতো স্পেশালিস্ট ব্যাটসম্যানকে উপেক্ষা করা যায়? ২২ টেস্টের ক্যারিয়ারে যার সেঞ্চুরি ৪ ও হাফ সেঞ্চুরি ১১টি, গড় ৪৬.৮৮। এরপরও সত্যি সত্যি যদি আজ একাদশে তার জায়গা না হয়, তবে ঐতিহাসিক শততম টেস্টে আর সব ছাপিয়ে এ সবই আলোচনার খোরাক হয়ে থাকবে। যার শুরুটা ওই মাহমুদুল্লাহকে দিয়ে। ফর্মহীনতায় যে কেউ বাদ পড়তেই পারেন। তবে আলোচনাটা সমালোচনায় রূপ নেয়। প্রথমে বলা হয়, তাকে দেশে ফেরত পাঠানো হবে। অথচ টেস্টের পর ওয়ানডে ও টি২০ সিরিজ। রঙিন পোশাকের সংক্ষিপ্ত ফরমেটে মাহমুদুল্লাহ এখনও অদ্বিতীয়। যদিও সেদিনই বিতর্কটাকে থামিয়ে দিয়ে বোর্ড (বিসিবি) প্রধান নাজমুল হাসান পাপন জানিয়েছেন, অভিজ্ঞ অলরাউন্ডারকে একসঙ্গে তিন ফরমেট থেকে বাদ দেয়া হয়নি। মঙ্গলবারই ঘোষিত ওয়ানডে দলে মাহমুদুল্লাহর অন্তর্ভুক্তিতে সেটিই সত্যি হয়। অথচ শ্রীলঙ্কা সফরে ম্যানেজার খালেদ মাহমুদ সুজনের বক্তব্যে বড় রকমের বিতর্ক তৈরি হয়েছিল। দ্বিতীয় টেস্টের দল ঘোষণার পরই তিনি বলেছিলেন, ‘কলম্বো টেস্ট শুরুর আগেই ওকে দেশে ফেরত পাঠানো হচ্ছে। যেহেতু ম্যাচ পাচ্ছে না রিয়াদকে তাই ম্যানেজমেন্ট ওকে শ্রীলঙ্কায় রাখার প্রয়োজন মনে করছে না।’ আবার রাতেই দেশে থাকা বোর্ড প্রধান পাপন জানান, ‘ম্যানেজমেন্ট বা আমাদের পক্ষ থেকে ওকে ফেরত পাঠানোর প্রশ্নই আসে না। সামনে ওয়ানডে আছে, ওর থাকার কথা। অন্যরকম কিছু হলে আমি অন্তত জানতাম।’ এক পর্যায়ে তিনি এমনও বলেন, ‘রিয়াদের ওয়ানডে দল থেকে বাদ পড়াÑ আমার সঙ্গে আলাপ না করে কেউ করবে এটা আমার মনে হয় না। ও একজন সিনিয়র ক্রিকেটার, অনেক অবদান আছে, এ রকম হওয়ার কথা নয়। হতে পারে কোন ম্যাচে কম্বিনেশনের কারণে কেউ ঢুকবে, কেউ বাদ পড়বে। কিন্তু একেবারে সফরের স্কোয়াডে না থাকার কথা নয়।’
×