ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

হোয়াইটওয়াশ এড়ানোর চ্যালেঞ্জ বাংলাদেশের

প্রকাশিত: ০৬:০২, ১৫ মার্চ ২০১৭

হোয়াইটওয়াশ এড়ানোর চ্যালেঞ্জ বাংলাদেশের

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ আজ বাংলাদেশের ক্রিকেটে এক ঐতিহাসিক দিন। কারণ নিজেদের শততম টেস্টে মাঠে নামবে বাংলাদেশ দল। এই অবিস্মরণীয় মাইলফলক অর্জনের সাক্ষী হতে যাচ্ছে কলম্বোর পি. সারা ওভাল। এখানেই আজ সকাল ১০টা ৩০ মিনিটে সিরিজের দ্বিতীয় ও শেষ টেস্টে শ্রীলঙ্কার মুখোমুখি হবে বাংলাদেশ দল। গলে অনুষ্ঠিত প্রথম টেস্টে ২৫৯ রানে হেরে যাওয়ার পর এবার হোয়াইটওয়াশ এড়ানোর লড়াই মুশফিকুর রহীমদের। এমন একটি ঐতিহাসিক মাইলফলকের ম্যাচের জন্য বিশেষ আয়োজন থাকছে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) ও শ্রীলঙ্কা ক্রিকেটের (এসএলসি) পক্ষ থেকে। তবে যে মাইলস্টোনই হোক মাঠের লড়াইটা আগের মতোই কঠিন চ্যালেঞ্জের থাকছে সফরকারী বাংলাদেশের জন্য। আর এই সিরিজ বাঁচানোর শততম টেস্টে বাংলাদেশ স্কোয়াডে থাকছে বেশ কয়েকটি পরিবর্তন। দারুণ কিছু করে সিরিজ বাঁচাতে পারবে বাংলাদেশ? ২০০০ সালের ১০ নবেম্বর ঢাকার বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে ভারতের বিরুদ্ধে নিজেদের অভিষেক টেস্ট খেলতে নামে বাংলাদেশ দল। ১৬ বছর ৫ মাস পর ১০০তম টেস্ট খেলতে আজ পি. সারা ওভালে শ্রীলঙ্কার মুখোমুখি হচ্ছে তারা। ১৮৭৭ সালে অস্ট্রেলিয়া ও ইংল্যান্ডের মধ্যকার ম্যাচ দিয়ে টেস্ট ক্রিকেটের আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রা শুরু হয়েছিল। এরপর কেটে গেছে ১৪০ বছর। এখন বিশ্বের টেস্ট খেলুড়ে দেশের সংখ্যা ১০। এর মধ্যে সর্বশেষ দল হিসেবে টেস্ট মর্যাদা পেয়েছে বাংলাদেশ। বর্তমান যুগে ক্রিকেট প্রতিযোগিতা অনেক বেড়ে গেছে। কিন্তু বাংলাদেশ দল সে অনুসারে খুব কমই খেলার সুযোগ পায়। এ কারণে সমালোচনা অব্যাহত থাকে বাংলাদেশের কম খেলাটা। কিন্তু সেই দলটাই শততম টেস্ট খেলার দিক থেকে রেকর্ড গড়তে যাচ্ছে। কারণ এত কম সময়ে আর কোন দলই ১০০ টেস্ট খেলতে পারেনি। বাংলাদেশের আগে শততম টেস্ট খেলতে সবচেয়ে কম সময় নিয়েছিল শ্রীলঙ্কা। তাদের সময় লেগেছিল ১৮ বছর ৩ মাস ২৯ দিন। আর দীর্ঘ সময় ধরে স্বেচ্ছায় ক্রিকেট থেকে নির্বাসনে থাকার কারণে সবচেয়ে বেশি সময় লেগেছিল দক্ষিণ আফ্রিকার। প্রোটিয়াদের ১০০ টেস্ট খেলতে সময় লেগেছিল ৫৯ বছর ১১ মাস ২২ দিন। এরপর সবচেয়ে বেশি সময় লেগেছে নিউজিল্যান্ডের, ৪২ বছর ২ মাস ১৪ দিন। জিম্বাবুইয়ের শততম টেস্ট খেলতে সময় লেগেছে ২৪ বছর ১২ দিন। প্রথম টেস্ট খেলা দুই দল অস্ট্রেলিয়া এবং ইংল্যান্ডের সময় লেগেছে যথাক্রমে ৩৫ বছর ২ মাস ১৩ দিন এবং ৩৫ বছর ৩ মাস ১৭ দিন। এছাড়া ওয়েস্ট ইন্ডিজের ৩৬ বছর ৮ মাস ৫৯ দিন, ভারতের ৩৫ বছর ১৯ দিন ও পাকিস্তানের ২৬ বছর ৪ মাস ২৩ দিন লেগেছে টেস্ট খেলার সেঞ্চুরি হাঁকাতে। তবে প্রথম ১০০ টেস্টে বাংলাদেশের সাফল্যের হারই সবচেয়ে কম। সেদিক থেকে সবার ওপরে অস্ট্রেলিয়া ও ইংল্যান্ড। এমনকি ব্যাটিং-বোলিং গড়ের দিক থেকেও বাংলাদেশের অবস্থান সবার নিচে। কম সময়ে বেশি টেস্ট খেলার কারণেই এখনও দীর্ঘ পরিসরে শক্তিমত্তায় অন্য দলগুলোর সঙ্গে পেরে ওঠেনি বাংলাদেশ দল। আর সে কারণেই এখন পর্যন্ত প্রতিটি টেস্ট ম্যাচের আগে শঙ্কায় থাকতে হয় পরাজয়ের। জয় পাওয়াটা একেবারেই দুষ্প্রাপ্য। ৯৯ টেস্টে ৭৬ ম্যাচই হেরেছে বাংলাদেশ। ড্র করেছে ১৫টি আর জিততে পেরেছে মাত্র ৮টি। এর মধ্যে দুর্বল জিম্বাবুইয়ের বিরুদ্ধে ৫ জয়, ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে ২ জয় এবং ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে ১ জয়। বাকি ৬ দলের কাউকে হারাতে পারেনি বাংলাদেশ একাধিকবার মোকাবেলা করেও। বিশেষ করে শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে বাংলাদেশের পারফর্মেন্স সবচেয়ে হতাশার। এখন পর্যন্ত ১৭ টেস্ট খেলে মাত্র দুটি ড্র করতে পেরেছে, বাকি ১৫ টেস্টেই হেরে গেছে একতরফাভাবে। অথচ আশ্চর্যজনক কয়েকটি রেকর্ড আছে এই লঙ্কানদের বিরুদ্ধেই। টেস্টে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ দলীয় সংগ্রহ ৬৩৮ রান শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে ২০১৩ সালের মার্চে গলে। আবার টেস্টে নিজেদের সর্বনিম্ন দলীয় সংগ্রহ ৬২ রানও শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে ২০০৭ সালে কলম্বোয়। আবার ওই কলম্বোতেই মোহাম্মদ আশরাফুল অভিষেক টেস্টে সেঞ্চুরি হাঁকিয়ে ইতিহাসের সর্বকনিষ্ঠ সেঞ্চুরিয়ান। সেই লঙ্কানদের বিরুদ্ধে টানা পরাজয়ের বৃত্তটা থেকে বেরোতে পারেনি বাংলাদেশ দল। এবার অনেক আত্মবিশ্বাস নিয়ে শ্রীলঙ্কা গেলেও গলে অনুষ্ঠিত প্রথম টেস্টে তেমন আহামরি কোন নৈপুণ্য দেখাতে পারেনি মুশফিকুর রহীমরা। ব্যাটিং এবং বোলিংয়ের সঙ্গে ফিল্ডিংয়েও দেখা গেছে আগের সেই পুরনো চিত্র। টানা ব্যর্থতার জন্য ঐতিহাসিক এই টেস্ট খেলা হচ্ছে না অভিজ্ঞ মাহমুদুল্লাহ রিয়াদের। একাদশের বাইরে থাকবেন তিনি দলের হোয়াইটওয়াশ লজ্জা এড়ানোর লড়াইয়ে। এছাড়া দলের সঙ্গে যোগ হওয়া ইমরুল কায়েস নিশ্চিতভাবেই তামিম ইকবালের সঙ্গে উদ্বোধন করবেন। সেক্ষেত্রে পরের দিকে ব্যাট করতে হবে তরুণ ওপেনার সৌম্য সরকারকে। তিনি গল টেস্টের উভয় ইনিংসে দুর্দান্ত ব্যাটিং করে অর্ধশতক হাঁকিয়েছিলেন। এছাড়া একাদশে আরও দু’য়েকটি পরিবর্তন আসতে পারে। টেস্ট স্পেশালিস্ট হিসেবে তকমা পাওয়া মুমিনুল হক সৌরভ তেমন সুবিধা করতে পারছেন না সাম্প্রতিক সময়ে। তার বদলে একাদশে ঢুকে যেতে পারেন সাব্বির রহমান। অর্থাৎ বদলে যাওয়া একটি একাদশ নামবে ঐতিহাসিক এ শততম টেস্টে। এ ম্যাচে দারুণ কিছু করার জন্য মুখিয়ে থাকা ক্রিকেটাররাও চাইছেন জয়। আর বাংলাদেশের ক্রিকেটপ্রেমী মানুষ তো সেটা সবসময়ই প্রত্যাশা করে। এখন প্রত্যাশার প্রতিফলন মাঠেই দেখা যাবে মুশফিকবাহিনীর নৈপুণ্যের মাধ্যমে।
×