ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

কলাপাড়ায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রধানরা জিম্মি এক শিক্ষা কর্মচারীর কাছে

প্রকাশিত: ০৫:৫০, ১৫ মার্চ ২০১৭

কলাপাড়ায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রধানরা জিম্মি এক শিক্ষা কর্মচারীর কাছে

নিজস্ব সংবাদদাতা, কলাপাড়া, ১৪ মার্চ ॥ মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসে দেড়যুগ কলাপাড়ায় চাকরি করা অফিস সহকারী কাম মুদ্রাক্ষরিক নেছার উদ্দিনের কাছে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রধানরা জিম্মি হয়ে পড়েছে। তার সীমাহীন ঘুষ-দুর্নীতির দৌরাত্ম্য থেকে পরিত্রাণ চেয়ে ২৮ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রধান ফের লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। তাও এক মাস পেরিয়ে গেছে। কিন্তু তার অদৃশ্য খুঁটির জোরে অপকর্ম চালিয়ে যাচ্ছেন। তাকে অন্যত্র বদলি করার দাবিটি পর্যন্ত সংশ্লিষ্ট উর্ধতন কর্তৃপক্ষ আমলে নেয়নি। ফলে শিক্ষকদের কাছে এ কর্মচারী এখন আতঙ্কে পরিণত হয়েছে। লিখিত অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে, সরকার বিনামূল্যে শিক্ষার্থীদের বই দিলেও তা সংগ্রহে নেছার উদ্দিনকে বইপ্রতি পনের পয়সা করে দিতে হয়। এমনকি ঢাকা থেকে বই আনার খরচ বাবদ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রতি ৫০০ থেকে এক হাজার টাকা করে দিতে বাধ্য করা হয়। উপবৃত্তি প্রদানে প্রতিষ্ঠান প্রতি দুই হাজার টাকা আদায় করা হয়। শিক্ষক-কর্মচারীর নতুন এমপিও, টাইম স্কেল, ইনডেক্স ডিলেট ও সংশোধনীসহ অনলাইনে আবেদন দশ থেকে পনের হাজার টাকা আদায় করা হয়। প্রতিষ্ঠানের সাধারণ তথ্য জমাদানে ৫০০ থেকে দেড় হাজার, উপবৃত্তির আপীল ফরম জমাদানে দুই হাজার টাকা, ইএমআইএস ও ব্যানবেইজ বার্ষিক জরিপ হার্ডকপি জমাদানে ৬০০ টাকা, মাসিক বেতনের রিটার্ন ফরমে ২০০ টাকা, সেকায়েপ কর্তৃক এসিটি শিক্ষক পাওয়ার আবেদন/চুক্তি অগ্রায়নে প্রতিষ্ঠান প্রতি আট হাজার টাকা দিতে বাধ্য করা হয়। এসব অপকর্ম ছাড়াও উপবৃত্তির টিউশন ফি, আইসিটি গ্রান্ট. পিটিএ গ্রান্টসহ সব কাজে নেছারুদ্দিনকে আর্থিক যোগান দিতে হয়। নইলে কোন কাজ সম্পাদন করতে পারেন না শিক্ষকরা। এমন দুর্নীতি আর জিম্মিদশা থেকে প্রতিকার চেয়ে পহেলা ফেব্রুয়ারি কলাপাড়ায় দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদকের) গণশুনানি চলাকালে শিক্ষক জুনায়েত হোসেন একটি লিখিত অভিযোগ উত্থাপন করেন। জুনায়েত নেছার উদ্দিনের বিরুদ্ধে এন্তার অভিযোগ তুলে ধরেন। এ কর্মচারীর অনিয়ম-দুর্নীতির প্রতিকার চেয়ে ২০০৯ সালে ৩৮ শিক্ষক যৌথ স্বাক্ষরে লিখিত অভিযোগ দেয়া হয়। কিন্তু অদৃশ্য শক্তির কারণে তার বিরুদ্ধে কোন কার্যকর ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। ভুক্তভোগী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রধানগণ জানান, ১৯৯৮ সাল থেকে রহস্যজনকভাবে নেছার উদ্দিন কলাপাড়ায় কর্মরত রয়েছেন। করছেন ফ্রি-স্টাইলে সব অপকর্ম। এরপরও কোন প্রতিকার না পেয়ে ফের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রধানরা ১৪ ফেব্রুয়ারি ফের লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। কিন্তু তাও মাস পেরিয়ে যাচ্ছে। শিক্ষকরা নেছার উদ্দিনকে অন্যত্র দ্রুত বদলি করে নিরপেক্ষ তদন্ত দাবি করেন। অভিযুক্ত নেছার উদ্দিন জানান, তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ মিথ্যা। উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা কাজী রুহুল আমিন বরাবরের মতো জানান, বিষয়টি তদন্ত করে উর্ধতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা মতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে। তবে একাধিক শিক্ষক জানান, অভিযুক্ত শিক্ষকদের সঙ্গে রফা করতে উল্টো এ শিক্ষা কর্মকর্তা চেষ্টা করে যাচ্ছেন।
×