ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

প্রবাসী কল্যাণমন্ত্রী

টিআইবির রিপোর্ট মিথ্যা, বিদেশে শ্রমবাজারের জন্য ক্ষতিকর

প্রকাশিত: ০৫:৩৫, ১৫ মার্চ ২০১৭

টিআইবির রিপোর্ট মিথ্যা, বিদেশে শ্রমবাজারের জন্য ক্ষতিকর

স্টাফ রিপোর্টার ॥ অভিবাসন খাতের অনিয়ম ও দুর্নীতি নিয়ে টিআইবির প্রতিবেদনকে মিথ্যা বানোয়াট হিসেবে উল্লেখ করে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রী নুরুল ইসলাম বিএসসি বলেন, এটা সরকারকে বেকায়দায় ফেলার ষড়যন্ত্র। আমরা বিষয়টিকে গুরুত্বের সঙ্গে দেখছি। টিআইবির প্রতিবেদনের আনুষ্ঠানিকভাবে কড়া প্রতিবাদ জানানো হবে। মালয়েশিয়ায় কর্মী নিয়োগে বাংলাদেশে কোন সিন্ডিকেট নেই। মালয়েশিয়ায় সিন্ডিকেট থাকলে থাকতে পারে। আমরা কোন সিন্ডিকেটে বিশ্বাসী না। তবে আমরা নতুন বাজার তৈরির করার কাজ করে যাচ্ছি। ইতোমধ্যে জাপানের ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশন (আইএম জাপান) ৫শ’ ডাক্তারসহ বিভিন্ন পেশাজীবী খাতে সাড়ে ৬শ’ লোক নিয়োগ দিতে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করেছে। এছাড়া সংযুক্ত আরব আমিরাতের বাজার খোলার চেষ্টা চলছে। মঙ্গলবার ইস্কানস্থ প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ে আরবিএম’র সঙ্গে মতবিনিময় কালে তিনি এ কথা বলেন। প্রবাসী কল্যাণ ভবনে আয়োজিত প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান বিষয়ক রিপোর্টারদের সংগঠন রিপোর্টার্স ফর বাংলাদেশী মাইগ্রেন্টস’র (আরবিএম) নবগঠিত কমিটির সভাপতি ফিরোজ মান্নার সভাপতিত্বে মতবিনিময় অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন মন্ত্রণালয়ের সচিব বেগম শামছুন্নাহার, বিএমইটির মহাপরিচালক সেলিম রেজা, যুগ্ম সচিব মোঃ মুহসীন চৌধুরী, আরবিএমের সহ-সভাপতি আনিছুর রহমান, সাধারণ সম্পাদক মাসউদুল হক, যুগ্ম সম্পাদক ওয়াসিম উদ্দীন ভুইয়া, আরাফাত আরা, মাসুদ করিম, কেরাম উল্লাহ বিপ্লব, শরীফুল হাসান প্রমুখ। মতবিনিময় অনুষ্ঠানে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রী নুরুল ইসলাম বিএসসি বলেন, বাংলাদেশ থেকে শ্রম অভিবাসন প্রক্রিয়ায় সুশাসনের প্রচ- অভাব রয়েছে দাবি করে সম্প্রতি ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) এক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। তাদের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ থেকে বিদেশগামী পুরুষদের ৯০ শতাংশই দুর্নীতি ও অনিয়মের শিকার। আর ভিসা বা চাহিদাপত্র কিনতে শুধু ২০১৬ সালেই ৫ হাজার ২৩৪ কোটি টাকা পাচার হচ্ছে। একইভাবে সৌদি আরবসহ বিভিন্ন দেশের গ্রুপ ভিসার নিয়োগ অনুমতি নিতে মন্ত্রণালয়ে গড়ে ওঠা সিন্ডিকেটকে ১৩ থেকে ১৫ হাজার টাকা ঘুষ দিতে হয়। বিএমইটির বহির্গমন শাখায়ও ছাড়পত্র নেয়ার আগে কর্মীদের ঘুষ দিতে হয়। দালালদের প্রাধান্যে বাংলাদেশ থেকে শ্রম অভিবাসনের প্রক্রিয়াটি জটিল। প্রতিবেশী যেকোন দেশের চেয়ে বিদেশ যেতে বাংলাদেশীদের বেশি খরচ হয়। টিআইবির মনগড়া তথ্য দিয়ে যে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে তা মিথ্যা বানোয়াট। সরকারকে বেকায়দায় ফেলার জন্য এটি একটি ষড়যন্ত্র ও চক্রান্ত। সরকারের অর্জনকে খর্ব করতেই টিআইবি এ কাজ করেছে। আমরা পুরো প্রতিবেদনটি হাতে পেয়েছি। প্রতিবেদনের প্রতিটি লাইনের ব্যাখ্যা দিয়ে কড়া প্রতিবাদ জানানো হবে। টিআইবির প্রতিবেদনের কারণে জনশক্তির বাজার ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে বলে মন্ত্রী উল্লেখ করেন। মালয়েশিয়ায় কর্মী নিয়োগে সিন্ডিকেটের বিষয়ে তিনি বলেন, বাংলাদেশে জনশক্তি রফতানিকারকদের কোন সিন্ডিকেট নেই। মালয়েশিয়ায় থাকলে থাকতে পারে। আমরা কোন সিন্ডিকেট চিনি না। মালয়েশিয়ায় কর্মী নিয়োগ শুরু হয়েছে। এখানে জনশক্তি রফতানিকারক সব প্রতিষ্ঠানই কাজ করবে। বৈধ জনশক্তি রফতানিকারক এক হাজার ৮১ জনের নামের তালিকা মালয়েশিয়া পাঠিয়েছি। এখন মালয়েশিয়া নির্ধারণ করবে তারা কোন কোন জনশক্তি রফতানিকারকদের দিয়ে কর্মী নেবে এটা তাদের বিষয়। তবে দেশে কোন সিন্ডিকেট নেই। মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট কয়েকজনের বিরুদ্ধে নিয়োগ অনুমতি বাণিজ্য ও অতিরিক্ত অভিবাসন ব্যয়ে সৌদি আরবে কর্মী পাঠানোর বিষয়ে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান সচিব বেগম শামছুন্নাহার বলেন, আমরা টিআইবির সম্পূর্ণ প্রতিবেদন মন্ত্রণালয়ের সব বিভাগীয় প্রধানদের কাছে পাঠিয়েছি। তারা যাচাই-বাছাই করে মতামত দেয়ার পর এর প্রতিবাদ জানানো হবে। মালয়েশিয়ার বিষয়টি উল্লেখ করে তিনি বলেন, এই বাজারটি দীর্ঘদিন বন্ধ ছিল। পরে জিটুজির মাধ্যমে মাত্র ২৭ হাজার টাকা ব্যয়ে ১০ হাজারের বেশি কর্মী নিয়োগ হয়। ওই প্রক্রিয়াটি দেশীয় ও মালয়েশিয়ার বেসরকারী খাতের প্রভাবে জিটুজি পদ্ধতি অকার্যকর হয়ে যায়। এরপর আরও একটি চুক্তি করা হয়। নতুন চুক্তির নাম জিটুজি প্লাস। এই চুক্তির মাধ্যমে সরকারী ও বেসরকারীভাবে কর্মী নিয়োগ হচ্ছে মালয়েশিয়ায়। সিন্ডিকেট আছে কিনা এটা মুখ্য বিষয় নয়। বাজারে কর্মী যাচ্ছে এটাই মুখ্য। মতবিনিময় অনুষ্ঠানে বৈদেশিক কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি) মহাপরিচালক সেলিম রেজা বলেন, বর্তমানে বাংলাদেশের শ্রমবাজারগুলো খুব ভাল অবস্থায় রয়েছে। সবকিছু ঠিক থাকলে এ বছর ১০ লাখের বেশি কর্মী বিদেশে পাঠানো সম্ভব।
×