ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

গরুর মাংস আর ভোজ্যতেলে বাড়ল মূল্যস্ফীতি

প্রকাশিত: ০৫:১২, ১৫ মার্চ ২০১৭

গরুর মাংস আর ভোজ্যতেলে বাড়ল মূল্যস্ফীতি

স্টাফ রিপোর্টার ॥ রাজধানীর হোটেল-রেস্টুরেন্টগুলোতে গরুর মাংসের টুকরা সম্প্রতি আরও ছোট হয়েছে, কিন্তু দাম বেড়েছে। বাজার থেকে প্রতি কেজি মাংস কিনতে হচ্ছে ৪৮০ থেকে ৫২০ টাকায়। সম্প্রতি এক লাফে গরুর মাংসের দাম বেড়েছে কেজিপ্রতি প্রায় ৪০ টাকা। গরুর মাংস অনেক আগেই নিম্ন আয়ের মানুষদের নাগালছাড়া হয়েছে। গরুর মাংসের এ মূল্য বৃদ্ধি এবার প্রভাব ফেলেছে মূল্যস্ফীতিতের লাগামে। যে কারণে নতুন বছরের প্রথম মাসের ধারাবাহিকতায় মূল্যস্ফীতি বেড়েছে ফেব্রুয়ারিতেও। গত মাসে পয়েন্ট টু পয়েন্ট ভিত্তিতে সাধারণ মূল্যস্ফীতি হয়েছে ৫ দশমিক ৩১ শতাংশ, যা জানুয়ারিতে ছিল ৫ দশমিক ১৫ শতাংশ। মঙ্গলবার শেরেবাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) মূল্যস্ফীতি সংক্রান্ত হালনাগাদ তথ্য সাংবাদিকদের সামনে তুলে ধরেন পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। মূল্যস্ফীতি বাড়ার কারণ ব্যাখ্যা করে মন্ত্রী বলেন, ফেব্রুয়ারি মাসে বিশেষ করে গরুর মাংস ও ভোজ্যতেলের দাম বেড়ে যাওয়ায় অন্য খাদ্যপণ্যের দাম কিছুটা বেড়েছে। এতে সার্বিক মূল্যস্ফীতি কিছুটা বেড়েছে। আন্তর্জাতিক বাজারে ভোজ্যতেলের দাম বাড়ায় দেশেও এর প্রভাব পড়েছে। তবে সাম্প্রতিক বছরগুলোর গড় মূল্যস্ফীতির হিসাব তুলে ধরে মন্ত্রী বলেন, ফেব্রুয়ারি মাসে মূল্যস্ফীতি কিছুটা বাড়লেও গড় মূল্যস্ফীতি কমেছে। গত ১২ মাসে (মার্চ ২০১৬ থেকে ফেব্রুয়ারি ২০১৭) গড় মূল্যস্ফীতি হয়েছে ৫ দশমিক ৪১ ভাগ, যা তার আগের ১২ মাসে ছিল ৬ দশমিক ১৫ ভাগ। সে তুলনায় এই ১২ মাসে গড় মূল্যস্ফীতি অনেক কমেছে। চলতি অর্থবছরের বাকি মাসগুলোতে মূল্যস্ফীতি বাজেটে নির্ধারিত লক্ষ্য ৫ দশমিক ৫০ শতাংশের মধ্যেই থাকবে বলে মন্ত্রী মনে করেন। এর আগে জানুয়ারি মাসে মূল্যস্ফীতি বাড়ার পেছনে মোটা চালের দাম বৃদ্ধি ও শিক্ষা ব্যয়কে কারণ হিসেবে দেখিয়েছিলেন পরিকল্পনামন্ত্রী। বিবিএসের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, ফেব্রুয়ারিতে খাদ্যপণ্যের মূল্যস্ফীতি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬ দশমিক ৮৪ শতাংশে, যা তার আগের মাসে ছিল ৬ দশমিক ৫৩ শতাংশ। তবে খাদ্যবহির্ভূত পণ্যের মূল্যস্ফীতি কমেছে। গত মাসে এ উপ-খাতে মূল্যস্ফীতি দাঁড়িয়েছে ৩ দশমিক শূন্য ৭ শতাংশে, যা তার আগের মাসে ছিল ৩ দশমিক ১০ শতাংশ। বিবিএস বলছে, খাদ্যবহির্ভূত উপ-খাত যেমনÑ পরিধেয় বস্ত্রাদি, জ্বালানি, বাড়িভাড়া, আসবাবপত্রের দাম বাড়ায় মূল্যস্ফীতি বেড়েছে। এদিকে শহরের তুলনায় সাধারণ মূল্যস্ফীতির চাপ গ্রামে বেড়েছে। ফেব্রুয়ারিতে এটি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫ দশমিক ১৪ শতাংশে, যা তার আগের মাসে ছিল ৪ দশমিক ৯২ শতাংশ। গ্রামে মূল্যস্ফীতি বাড়াকে ইতিবাচক বলেই মনে করেন পরিকল্পনামন্ত্রী। তিনি বলেন, গ্রামীণ অর্থনীতি এখন আগের চেয়ে শক্তিশালী। গ্রামের মানুষের আয় বাড়ছে। কৃষকেরা ফসলের ভাল দাম পাচ্ছেন। সার্বিকভাবে গ্রামের মানুষের ক্রয়ক্ষমতাও বেড়েছে। তাই এই বাড়াটা ভাল। গ্রামে খাদ্যপণ্যের মূল্যস্ফীতি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬ দশমিক ৬৬ শতাংশে, যা তার আগের মাসে ছিল ৬ দশমিক ২৮ শতাংশ। তবে খাদ্যবহির্ভূত পণ্যের মূল্যস্ফীতি কিছুটা কমে দাঁড়িয়েছে ২ দশমিক ৪৬ শতাংশে, যা তার আগের মাসে ছিল ২ দশমিক ৫২ শতাংশ। এদিকে শহরে সার্বিক মূল্যস্ফীতি পয়েন্ট টু পয়েন্ট ভিত্তিতে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫ দশমিক ৬২ শতাংশে, যা তার আগের মাসে ছিল ৫ দশমিক ৫৭ শতাংশ। খাদ্যপণ্যের মূল্যস্ফীতি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭ দশমিক ২২ শতাংশে, যা তার আগের মাসে ছিল ৭ দশমিক ১১ শতাংশ। খাদ্যবহির্ভূত পণ্যের মূল্যস্ফীতি ৩ দশমিক ৯১ শতাংশে স্থিতিশীল রয়েছে। আবার মানুষের আয় কতটা বাড়ল কিংবা কমল, তা জাতীয় মজুরি হার সূচক দিয়ে বোঝানো হয়। পয়েন্ট টু পয়েন্ট ভিত্তিতে মানুষের মজুরি বৃদ্ধির হার কিছুটা বেড়েছে। বিবিএসের জাতীয় মজুরি হার সূচকে দেখা গেছে, জানুয়ারি মাসে মজুরি বৃদ্ধির হার ছিল ৬ দশমিক ৬৫ শতাংশ, ফেব্রুয়ারিতে তা বেড়ে হয়েছে ৬ দশমিক ৮৮ শতাংশ। অর্থাৎ সার্বিক মূল্যস্ফীতির তুলনায় মজুরি হার বেশি থাকায় ফেব্রুয়ারি মাসে মানুষের ক্রয়ক্ষমতার ওপর খুব বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়েনি।
×