ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

ব্রেক্সিটের পথ সুগম করল পার্লামেন্ট

প্রকাশিত: ০৫:০৭, ১৫ মার্চ ২০১৭

ব্রেক্সিটের পথ সুগম করল পার্লামেন্ট

ইইউর সঙ্গে যুক্তরাজ্যের থাকা না থাকা নিয়ে দীর্ঘ আইনী লড়াই শেষে ব্রেক্সিট বিলটি পাস করেছে ব্রিটেনের পার্লামেন্ট। পার্লামেন্টের উচ্চকক্ষ, হাউস অব লর্ডস আর্টিকেল-৫০ পার্লামেন্টে পাস করার পর ইইউ ছাড়তে যুক্তরাজ্যের এখন আর কোন বাধা রইল না। রয়্যাল এসেন্ট বা রানীর সম্মতি পেলে এই বিলটি মঙ্গলবারই আইনে পরিণত হবে বলে আশা করা হচ্ছে। তবে যুক্তরাজ্যে বসবাসরত ইইউ নাগরিকদের অধিকার নিশ্চিত করবার বিষয়টি নিয়ে সরকারের উপরে কিছুটা চাপ রয়েছে। খবর বিবিসির। যুক্তরাজ্যে প্রায় ৩০ বছর ধরে বাস করছেন ফরাসী নাগরিক এন-লর ডন্সকি। যুক্তরাজ্যে ইইউর যে প্রায় ৩০ লাখ নাগরিক বসবাস করছে তাদের সংগঠন ‘দ্য থ্রি মিলিয়ন’ এর সহকারী চেয়ারপার্সনও তিনি। এই বিল পাস হওয়ায় তিনি হতাশা প্রকাশ করেন। এন-লর ডন্সকি বলেছেন, ভোটের কথা শুনে আমার মন বিষাদে ছেয়ে গেছে। এর অর্থ হলো আমরা যারা এখন যুক্তরাজ্যে বাস করছি, রাজনৈতিক আলোচনার টেবিলে দরকষাকষির জন্য তাদেরই আসলে ব্যবহার করা হবে এবং এই ক্ষেত্রে আমাদের নিজেদের আর কিছুই বলারও থাকবে না। তবে সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ইইউ নাগরিকরা যারা যুক্তরাজ্যে বসবাস করছেন তাদের অধিকার নিশ্চিত করার বিষয়ে সরকার আন্তরিক। পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ হাউস অব কমন্সের পর উচ্চকক্ষও এটি পাস করায় প্রধানমন্ত্রী টেরেসা মের জন্য ইইউ ছাড়ার প্রক্রিয়া শুরু করতে আর কোন বাধা রইল না। ব্রেক্সিটমন্ত্রী ডেভিড ডেভিস এক বিবৃতিতে বলেছেন, আমরা এখন আমাদের দেশের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনার দ্বারপ্রান্তে। প্রধানমন্ত্রী টেরেসা মে ৩১ মার্চের মধ্যে ব্রেক্সিট প্রক্রিয়া শুরু করার ঘোষণা দিয়ে রেখেছেন। ডেভিস বলেন, আমরা এ মাসের শেষেই পরিকল্পনা অনুযায়ী আর্টিকেল ফিফটি প্রয়োগ করে গোটা দেশের স্বার্থেই কার্যকর ফল বয়ে আনতে পারব। রানীর অনুমোদন পাওয়া মাত্রই প্রধানমন্ত্রী মে দুই বছরের ব্রেক্সিট আলোচনা শুরু করতে প্রস্তুত হয়ে যাবেন এবং তিনি সময় নষ্ট না করেই তা করতে পারেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। তবে মে তার ঘোষিত সময়সীমার আগে কিছু করবেন না বলেই ইঙ্গিত দিয়েছেন তার মুখপাত্র। স্কটল্যান্ডের ফার্স্ট মিনিস্টার নিকোলা স্টার্জন স্কটিশদের স্বাধীনতার জন্য ২০১৮ কিংবা ২০১৯ সালের শুরুর দিকে নতুন করে আরেকটি গণভোটের দাবি করায় এবং যুক্তরাজ্যে বসবাসরত ইইউ নাগরিকদের অধিকার নিশ্চিত করা নিয়ে চাপের কারণে ব্রেক্সিট প্রক্রিয়া শুরুর বিষয়টি নিয়ে জটিলতায় ছিলেন মে। কিন্তু পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ হাউস অব কমন্সে ইইউপন্থী কনজারভেটিভ এমপিদের বিরোধিতা এবং উচ্চকক্ষ হাউস অব লর্ডসে লিবারেল ডেমোক্র্যাটদের বিরোধিতা দুইই ঠেকাতে সফল হন মে। হাউস অব লর্ডস ইইউ নাগরিকদের অধিকারের শর্ত ২৭৪-১৩৫ ভোটে নাকচ করে। আর এর আগে হাউস অব কমন্সে এ শর্ত ৩৩৫-২৮৭ ভোটে নাকচ হয়। লিবারেল ডেমোক্র্যাট লর্ড কাটেস বলেছেন, সরকার যুক্তরাজ্যে বসবাসরত ইইউ নাগরিকদের অধিকারের প্রশ্নে ছাড় দিতে ব্যর্থ হয়েছে। ফলে এ বিষয়টিতে সংশোধনীর দাবি নিয়ে এগিয়ে যাওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। এদিকে স্কটল্যান্ডের মুখ্যমন্ত্রী নিকোলা স্টার্জন এক ঘোষণায় জানিয়েছেন, স্কটিশদের স্বাধীনতার লক্ষ্যে দেশটিতে নতুন করে আরেকটি গণভোটের জন্য কর্তৃপক্ষের কাছে অনুমতি চাইবেন তিনি। ব্রিটেন ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে বের হয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়ার প্রেক্ষিতে এই গণভোট প্রয়োজন বলে উল্লেখ করেন তিনি। কারণ স্কটল্যান্ডের বহু মানুষ ইইউতে থেকে যাওয়ার পক্ষে রায় দিয়েছিল। স্টার্জন বলেছেন, স্কটিশরা যদি সত্যিই এমনটি চায় তাহলে যুক্তরাজ্য থেকে বের হওয়ার লক্ষ্যে ২০১৯ সালের আগেই এই গণভোট অনুষ্ঠিত হতে হবে।
×