ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

ময়মনসিংহ জেলা পরিষদ উচ্চ বিদ্যালয়

ত্রিমুখী দ্বন্দ্বে অচলাবস্থা

প্রকাশিত: ০৪:২৬, ১৪ মার্চ ২০১৭

ত্রিমুখী দ্বন্দ্বে অচলাবস্থা

স্টাফ রিপোর্টার, ময়মনসিংহ ॥ চাকরির মেয়াদ পূর্ণ হওয়ার পর প্রধান শিক্ষকের থাকা ও না থাকা নিয়ে উচ্চ আদালতে পাল্টাপাল্টি মামলার ঘটনায় অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়েছে ময়মনসিংহ জেলা পরিষদ উচ্চ বিদ্যালয়ে। এ নিয়ে শিক্ষক ও অভিভাবকসহ বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সদস্যরা ত্রিমুখী দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়ায় ব্যাহত হচ্ছে পাঠদান। উদ্বেগ-উৎকণ্ঠাসহ চরম অনিশ্চয়তায় বিদ্যালয় ছাড়ছে শিক্ষার্থীরা। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে ২০১৬ সালের নবেম্বর মাস থেকে বেতনভাতা বন্ধ রয়েছে বিদ্যালয়ের শিক্ষক ও কর্মচারীদের। ফলে চার মাস ধরে অমানবিক দিন যাপন করছে শিক্ষক ও কর্মচারীরা। কবে নাগাদ এই সঙ্কটের সমাধান হবে বলতে পারছে না কেউই। ময়মনসিংহ জেলা শিক্ষা অফিসার রফিকুল ইসলাম জানিয়েছেন, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সর্বশেষ পরিপত্র অনুযায়ী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের অবসর গ্রহণের পর মেয়াদ বাড়ানোর কোন সুযোগ নেই। স্থানীয় সূত্র জানায়, ময়মনসিংহ জেলা পরিষদ উচচ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ফজলুর রহমান মিয়ার চাকরির মেয়াদ শেষ হয়েছে ২০১৬ সালের ২৪ মার্চ। কিন্তু এর আগে ২২ ফেব্রুয়ারি তারিখে বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি এ্যাডভোকেট জহিরুল হক খোকার কাছে প্রধান শিক্ষক তার চাকরির মেয়াদ বাড়ানোর আবেদন করেন। একইভাবে ২০১৬ সালের ১০ মার্চ ঢাকা বোর্ডের চেয়ারম্যানের কাছে প্রধান শিক্ষক তার চাকরির মেয়াদ বৃদ্ধির আবেদন করেন। এসবের বাইরে প্রধান শিক্ষক তার চাকরির মেয়াদ বাড়াতে একই বছরের ২৯ ফেব্রুয়ারি বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভা ডাকেন। সভায় কমিটির সাত সদস্যের মধ্যে অভিভাবক প্রতিনিধি মোসলেম উদ্দিন আহমদ, রফিকুল ইসলাম রতন, জোছনা বেগম এবং শিক্ষক প্রতিনিধি অঞ্জনা রানী কু-ু প্রধান শিক্ষকের মেয়াদ বাড়ানোর বিরোধিতা করেন এবং মেয়াদ না বাড়ানোর পক্ষে মত দেন। অভিযোগ উঠেছে, বিরোধিতাকারী চার সদস্যের স্বাক্ষর জালসহ প্রধান শিক্ষক পরে ভুয়া রেজ্যুলেশন তৈরি করে বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সকল সদস্য তার মেয়াদ বাড়ানোর পক্ষে মত দিয়েছে এমন কাগজপত্র বোর্ডে জমা দেন ১০ মার্চ। ঢাকা বোর্ড কর্তৃপক্ষ বিধি মোতাবেক প্রধান শিক্ষকের মেয়াদ বাড়ানোর সুযোগ নেই উল্লেখ করে ৭ এপ্রিল এক পত্রে বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষকের কাছে ১৫ কার্যদিবসের মধ্যে দায়িত্বভার বুঝিয়ে দিতে নির্দেশ দেয়। এমন নির্দেশনা পেয়ে প্রধান শিক্ষক উচ্চ আদালতে রিট পিটিশন দায়ের করেন। উচ্চ আদালত ১৮ এপ্রিল এক আদেশে বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতিকে আইনানুগভাবে বিষয়টি নিষ্পত্তির নির্দেশ দেয়। ঢাকা বোর্ড কর্তৃপক্ষ এবং বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির একাংশ প্রধান শিক্ষককে তাগিদ দিয়েও সমস্যার নিষ্পত্তি করতে পারেনি। ইতোমধ্যে প্রধান শিক্ষক বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতির সহায়তায় বোর্ড থেকে বিদ্যালয় পরিচালনার জন্য নয়া কমিটি অনুমোদন নেন গত ১০ অক্টোবর। নয়া এই কমিটির বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে অভিভাবক প্রতিনিধি মোসলেম উদ্দিন উচ্চ আদালতে রিট করলে ২৩ অক্টোবর আদালত এক আদেশে নয়া কমিটির কার্যক্রম ৬ মাসের জন্য স্থগিত করে দেয়। বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির নয়া সভাপতি জহিরুল হক খোকা বিধি সম্মতভাবে বিষয়টি নিষ্পত্তি না করে ১৩ অক্টোবর এক পত্রে ঢাকা বোর্ডের চেয়ারম্যানের কাছে প্রধান শিক্ষকের মেয়াদ বাড়াতে পুনরায় অনুরোধ করেন। অভিভাবক প্রতিনিধি এই ঘটনায় শিক্ষা সচিব ও ঢাকা বোর্ডের চেয়ারম্যানকে উকিল নোটিস দেন। উচ্চ আদালতে পাল্টাপাল্টি রিট ও উকিল নোটিস প্রদানসহ ত্রিমুখী দ্বন্দ্বে অচলাবস্থা তৈরি হয়। প্রচার রয়েছে প্রধান শিক্ষক ও বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির অসাধু কয়েক সদস্যের অপকর্ম ফাঁস হয়ে যাবে আশঙ্কা থেকেই প্রধান শিক্ষক ক্ষমতা হস্তান্তর না করে টালবাহানা করে সময়ক্ষেপণ করছেন। অবিলম্বে সমস্যা সমাধানের দাবিসহ প্রধান শিক্ষকের পদ ছাড়ার দাবিতে ক্লাস বর্জন করে প্রতীকী কর্মবিরতি পালন করছে শিক্ষকেরা। এ ব্যাপারে প্রধান শিক্ষক দাবিদার ফজলুর রহমান মিয়া জানান, প্রধান শিক্ষক পদে নিয়োগ না হওয়া পর্যন্ত সভাপতি তাকে এই পদে রাখতে সুপারিশ করেছেন। তবে তিনি প্রধান শিক্ষকের পদ আঁকড়ে থাকতে চান না। তাহলে উচ্চ আদালতে রিট করেছেন কেন? এ প্রশ্নে তিনি জানান, সভাপতির নির্দেশে এটি করা হয়েছে।
×