ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

মাদকের ভয়াল ছোবল

প্রকাশিত: ০৪:২৫, ১৪ মার্চ ২০১৭

মাদকের ভয়াল ছোবল

নিজস্ব সংবাদদাতা, কলাপাড়া, ১৩ মার্চ ॥ মাদকের ভয়াল ছোবলে যুবসমাজ থেকে শুরু করে কিশোর-কিশোরী পর্যন্ত এখন অনিরাপদ হয়ে পড়েছে। যুবসমাজ মাদকসেবী থেকে পরিণত হচ্ছে মাদক বিক্রেতায়। চোলাই মদ, গাঁজা থেকে শুরু করে ইয়াবা, বাবাসহ বিভিন্ন ধরনের মাদকের এখন রমরমা বাণিজ্য চলছে। স্কুলগামী ছাত্রীরা পর্যন্ত মাদকের নেশায় আসক্ত হয়ে পড়ছে। অতিসম্প্রতি খেপুপাড়া মডেল মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের এক ছাত্রী ক্লাস চলাকালে মাদক সেবনের দায়ে স্কুল থেকে বহিষ্কার হয়েছে। কোন কোন পারিবারের সবাই আবার মাদক বিক্রিতে নেমেছে। পর্যটন কেন্দ্র কুয়াকাটা থেকে শুরু করে দুটি পৌরসভা ও ১২টি ইউনিয়নে মাদকের করালগ্রাস থেকে বিপথগামী যুবসমাজসহ গোটা সমাজ ব্যবস্থাকে রক্ষা করতে এখন পুলিশসহ আইন প্রয়োগকারী সংস্থা এবং সুধীসমাজ উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছে। পুলিশ তাদের অভিযানের মাত্রাও বাড়িয়ে দিয়েছে। সর্বশেষ সোমবার অনুষ্ঠিত আইনশৃঙ্খলার সভায় মাদক নির্মূলে বিভিন্ন স্পট চিহ্নিত করে সামাজিক সচেতনতার পাশাপাশি কঠোর আইন প্রয়োগের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। মাদকের ভয়াল থাবার চিত্র ফুটে উঠেছে ফেব্রুয়ারি মাসে কলাপাড়া এবং মহিপুর থানায় দায়েরকৃত মামলার পরিসংখ্যানে। দুই থানায় মোট ৩৩টি মামলা দায়ের হয়েছে। তার মধ্যে ১১টি মাদকের। আইনশৃঙ্খলার সভায় বক্তারা বলেন, এখন মেয়েদের মধ্যে মাদক ছড়িয়ে গেছে। কিছু পরিবারের মূল আয়ের উৎস মাদক। এক শিক্ষকের মেয়ে মাদক সেবন করে স্কুলে আসে। মধুপাড়া এবং হাঁড়িপাড়ায় চোলাই মদ তৈরি ও বিক্রি হয়। মুক্তিযোদ্ধা বাজারে প্রকাশ্যে মাদকসেবীদের আড্ডা বসে। চলে জুয়ার জমজমাট আসর। মেলাপাড়া গ্রামের ইদ্রিসের বাড়িতে চলে মাদকসহ জুয়ার আসর। হাজীপুরে ব্রিজের নিচে ইয়াবা সেবনকারীদের আড্ডা বসে। পৌর শহরের কবি নজরুল ইসলাম সড়কে মাদকসেবীদের আড্ডা বসে সন্ধ্যার পরে। গোডাউন ঘাট, সিকদার সড়ক, ফেরিঘাট, নাছনাপাড়া চৌরাস্তা, বঙ্গবন্ধু কলোনি, নীলগঞ্জ আবাসন, মেলাপাড়ার ছালাম হাওলাদারের ঘের, পাটুয়া বাজার, লোন্দা ঘাট, বানাতিবাজার, বাবলাতলা বাজার, ছোট বালিয়াতলী বাজার, চাপলী বাজার, লক্ষ্মীবাজার, চাকামইয়ার ব্রিজঘাট, মহিপুর ব্রিজের সংযোগ সড়কের পাশে এবং কুয়াকাটা পৌর এলাকায় কয়েকটি আবাসিক হোটেলে বসছে মাদকের বাজার। আলীপুর বাজারের সোহেল খাঁ বাহিনীর মাদক বিক্রি চলছে ফ্রি স্টাইলে। সোহেল হাইব্রিড ছাত্রলীগ এবং একাধিক মামলার আসামি। মাদকের ছোবল এমন পর্যায়ে চলে গেছে যে, ২৪ ফেব্রুয়ারি মুক্তিযোদ্ধা মেমোরিয়াল ডিগ্রী কলেজের বার্ষিক পিকনিক চলাকালে মদ, ইয়াবা খেয়ে মাতাল অবস্থায় ওই কলেজের কয়েক ছাত্র একই কলেজের কয়েক ছাত্রীকে উত্ত্যক্ত করে। এদের কাছে তখন জীবননাশক অস্ত্র ছিল বলে কলেজ অধ্যক্ষ কালিম উল্লাহ নিশ্চিত করেছেন। এমনকি অভিযুক্ত এসব শিক্ষার্থীকে কলেজ থেকে বহিষ্কারের চিঠি দেয়া হয়েছিল। পরবর্তীতে সালিশ বৈঠকে শাস্তিমূলক ব্যবস্থার মধ্য দিয়ে বিষয়টির সমাধান করা হয়। আর এ মাদকসেবী এবং জুয়াড়িরা অর্থের যোগান দিতে কৃষকের গবাদিপশু পর্যন্ত চুরি করে বিক্রি করছে। কৃষক সর্বস্বান্ত হয়ে যাচ্ছে। মাদকের নেশার অর্থ যোগান দিতে ছিনতাই-চুরি বেড়ে গেছে।
×