ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

ইলিশের উৎপাদন বেড়েছে

প্রকাশিত: ০৩:৩৬, ১৪ মার্চ ২০১৭

ইলিশের উৎপাদন বেড়েছে

দেশে ইলিশের উৎপাদন বেড়েছে, এটি একটি সুসংবাদ বটে। ২০০২-৩ অর্থবছরে যেখানে ইলিশ উৎপাদিত হয়েছে ১ লাখ ৯১ হাজার টন, সেখানে গত ২০১৫-১৬ অর্থবছরে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩ লাখ ৯৫ হাজার টনে। মাত্র দশ বছরের ব্যবধানে ইলিশের উৎপাদন বেড়েছে ২ লাখ টনের বেশি। সরকার তথা মৎস্য অধিদফতরের নেয়া নানামুখী পদক্ষেপের ফলেই ইলিশের এই উৎপাদন বৃদ্ধি। তবে এর সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এটি এখনও কাক্সিক্ষত উৎপাদন নয়। তা না হওয়ার প্রধান কারণ কারেন্ট ও বেহুন্দি জাল দিয়ে জাটকা আহরণ বন্ধ করতে না পারা। এ অবস্থায় ‘জাটকা ইলিশ ধরব না, দেশের ক্ষতি করব না’ এই প্রতিপাদ্য নিয়ে ১১-১৭ মার্চ পালিত হচ্ছে ইলিশ রক্ষা সপ্তাহ। এর জন্য মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় গ্রহণ করেছে ৯০০ কোটি টাকার প্রকল্প। প্রকল্প অনুমোদন হলে সারাদেশে বিশেষ করে ইলিশ আহরণের স্থানগুলোতে সরেজমিন অভিযান চালিয়ে এসব জাল পুড়িয়ে ফেলা হবে। তাতে করে ইলিশ উৎপাদন আরও বাড়বে বলে মনে করছে সংশ্লিষ্ট মহল। ইলিশ উৎপাদনে বাংলাদেশ বর্তমান বিশ্বে রোল মডেল, এমনকি মৎস্য উৎপাদনও। চতুর্থ স্থান অধিকারী বাংলাদেশ তবুও তো সামুদ্রিক মৎস্য সম্পদ আহরণে অনেক পিছিয়ে আছে। সুবিশাল বঙ্গোপসাগরের বিপুল অর্থনৈতিক সীমানা থেকে এখন পর্যন্ত খুব কমই মৎস্য সম্পদ আহরিত হয়ে থাকে। আগামীতে এই অফুরান মৎস্য সম্পদ আহরণ করতে পারলে দেশ অনেক এগিয়ে যাবে মৎস্য সম্পদে। অবশ্য ইলিশও প্রধানত সামুদ্রিক ও সমুদ্র উপকূলীয় মাছ। মোহনার মাধ্যমে ইলিশ মিঠা পানির নদ-নদীতে প্রবেশ করে থাকে প্রজনন মৌসুমে। আর তখনই ধুম পড়ে যায় জাটকা তথা পোনা ইলিশ আহরণের। যে কোন মূল্যে এটা বন্ধ করতে পারলে ইলিশের উৎপাদন বহুগুণ বাড়বে নিঃসন্দেহে। মনে রাখতে হবে, জাতীয় পর্যায়ে অর্থনৈতিক দিক থেকেও গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে ইলিশ। মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) ১ শতাংশ প্রবৃদ্ধি আসে ইলিশ থেকে। আরও একটি শ্লাঘার বিষয় এই যে, ইলিশ উৎপাদনকারী ১১টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশ ব্যতিরেকে অন্য ১০টি দেশেই কমেছে ইলিশের উৎপাদন। একমাত্র বাংলাদেশেই প্রতিবছর ইলিশের উৎপাদন বাড়ছে ৯-১০ শতাংশ হারে। মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের তথ্যমতে, আগে দেশের ২১টি উপজেলার নদ-নদীতে পাওয়া যেত ইলিশ। বর্তমানে ১২৫টি উপজেলার নদী-নদীতে সন্ধান মিলেছে ইলিশের। এমনকি হাকালুকি ও মেদির হাওড়েও পাওয়া গেছে ইলিশ। সার্বিকভাবে নদ-নদী ও জলাশয় কমে যাওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে এটি একটি ইতিবাচক দিক। দেশে মোট মৎস্য উৎপাদনের প্রায় ১১ ভাগই ইলিশ। উপকূলীয় মৎস্যজীবী সম্প্রদায়ের প্রায় পাঁচ লাখ লোক ইলিশ আহরণে সরাসরি জড়িত। এছাড়া ২০ থেকে ৯৫ লাখ লোক জড়িত পরিবহন, বিক্রয়, জাল ও নৌকা তৈরি, বরফ উৎপাদন, প্রক্রিয়াজাতকরণ, রফতানি ইত্যাদির প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ কাজে। ইলিশের উৎপাদন মৌসুমে পূর্ণিমা-অমাবস্যার জো’র সময়ে মা ইলিশ ও জাটকা আহরণ নিষিদ্ধকালীন ক্ষতিগ্রস্ত জেলেদের ভিজিএফ কর্মসূচীর আওতায় চাল দেয়ার পাশাপাশি বিকল্প আয় ও কর্মসংস্থানের কথাও ভাবা হচ্ছে। তবে সবকিছুর ওপরে জনসচেতনতা। গণমাধ্যম এ ক্ষেত্রে ইতিবাচক অবদান রাখতে পারে, রাখছেও। সর্বস্তরের মানুষ যদি জাতীয় একটি অত্যন্ত সম্ভাবনাময় পণ্য ইলিশের সুরক্ষা ও সংরক্ষণের ব্যাপারে সচেতন হয় তাহলেই এর উৎপাদন বৃদ্ধি নিশ্চিত করা সম্ভব। বাঙালীর ইতিহাস, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির অন্যতম একটি অপরিহার্য উপাদান হলো ইলিশ। এর যতœ ও সুরক্ষার দায়িত্ব সকলের।
×