ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

ঘানাকে হারিয়ে পঞ্চম বাংলাদেশ

প্রকাশিত: ০৬:০১, ১৩ মার্চ ২০১৭

ঘানাকে হারিয়ে পঞ্চম বাংলাদেশ

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ গ্রুপ পর্বে ব্যর্থতার কারণে সেমিফাইনাল খেলা হয়নি বাংলাদেশের। যে কারণে স্বাগতিকদের খেলতে হয় স্থান নির্ধারণী ম্যাচ। সেখানে দু’টি ম্যাচেই জয় কুড়িয়ে নিয়েছে বাংলাদেশ জাতীয় হকি দল। আর তাতেই বিশ্ব হকি লীগ রাউন্ড-টুতে পঞ্চম স্থান অধিকার করেছে লাল-সবুজের দেশ। রবিবার টুর্নামেন্টের শেষদিনে পঞ্চম স্থান নির্ধারণী ম্যাচে ঘানাকে শূটআউটে ৪-৩ গোলে হারিয়েছে স্বাগতিক বাংলাদেশ। মওলানা ভাসানী জাতীয় হকি স্টেডিয়ামে দু’দলের নির্ধারিত সময়ের খেলা ৩-৩ গোলে ড্র ছিল। ফলে নিয়মানুয়ায়ী খেলা গড়ায় শ্যূটআউটে। এই পর্বে গোল করতে ব্যর্থ হন চয়ন ও রোমান। তবে কৃষ্ণ কুমার, কৌশিক ও জিমি গোল করে ম্যাচ জিতিয়ে দেন বাংলাদেশকে। আগেরদিন শ্রীলঙ্কাকে ৯-০ গোলে উড়িয়ে দিয়ে পঞ্চম স্থান নির্ধারণী ম্যাচ খেলার সুযোগ পান জিমি, চয়ন, আশরাফুলরা। টুর্নামেন্টে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে মালয়েশিয়া। ফাইনালে তারা শূটআউটে ৫-৩ গোলে হারিয়েছে চীনকে। নির্ধারিত সময়ের খেলা ২-২ গোলে অমীমাংসতি ছিল। সেমিফাইনালে হারা দুই দল তৃতীয় স্থান নির্ধারণী ম্যাচে মুখোমুখি হয়। এতে ওমানকে ৫-১ গোলে উড়িয়ে দিয়ে তৃতীয় হয়েছে মিসর। আর চতুর্থ হয়েছে ওমান। সপ্তম স্থান নির্ধারণী ম্যাচে ফিজিকে ৫-৩ গোলে হারিয়েছে দ্বীপদেশ শ্রীলঙ্কা। টুর্নামেন্টের সেরা খেলোয়াড় হয়েছেন চীনের ডু টালাকে। সেরা উদীয়মান হয়েছেন বাংলাদেশের আরশাদ হোসেন। সর্বোচ্চ গোলদাতা ঘানার বোটসিও জনি। হ্যাটট্রিকসহ তিনি করেন ১৩ গোল। সমাপনী দিনে প্রধান অতিথি হিসেবে পুরস্কার বিতরণ করেন বাংলাদেশ সরকারের অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত, এমপি। এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন হকি ফেডারেশনের সহসভাপতি ও টুর্নামেন্ট কমিটির আহ্বায়ক খাজা রহমতউল্লাহ, সহসভাপতি আব্দুর রশিদ সিকদার, সহসভাপতি ও স্পন্সর প্রতিষ্ঠান ইনডেক্সের সিইও শফিউল্লাহ আল মুনীর এবং যুগ্মসম্পাদক ও টুর্নামেন্ট কমিটির সম্পাদক আনভীর আদিল খান। ঘরের মাঠে কোয়ার্টার ফাইনালে শক্তিশালী মিসরের কাছে হেরে সেমির আগেই ছিটকে পড়ে বাংলাদেশ। যদিও সেমিফাইনাল খেলার লক্ষ্য নির্ধারণ করেছিলেন লাল-সবুজ দলের কোচ অলিভার কার্টজ। কিন্তু দুর্বল ফিজি ছাড়া নিজেদের পুলের আর কোন দলকেই হারাতে পারেনি স্বাগতিকরা। কারণ সময়মতো জ্বলে ওঠেনি জিমি-চয়নদের স্টিক। এ কারণে পঞ্চম স্থান নিয়েই সন্তুষ্ট থাকতে হলো বাংলাদেশ জাতীয় হকি দলকে। স্থান নির্ধারণী ম্যাচের ষষ্ঠ মিনিটে এগিয়ে যাওয়ার সুযোগ পায় বাংলাদেশ। কিন্তু জিমির হিটে ফ্লিক করতে ব্যর্থ হন কৌশিক। অস্টম মিনিটে প্রথম পেনাল্টি কর্নার (পিসি) পেয়ে যায় ঘানা। কিন্তু জনি বটসিয়োর হিট পোস্টের বাইরে দিয়ে যায়। আট মিনিট পর দ্বিতীয় পেনাল্টি কর্নার পায় ঘানা। এবার সুযোগ কাজে লাগাতে ভুল করেনি জনি বটসিয়ো। দুর্দান্ত হিটে বোর্ডে বল আছড়ে ফেলেন। ১-০ গোলে এগিয়ে যায় ঘানা। তবে ঘানার এই আনন্দ খুব বেশিক্ষণ দীর্ঘ হয়নি। ১৯ মিনিটে প্রথম পেনাল্টি কর্নার থেকে লাল-সবুজের দেশকে সমতায় ফেরান চয়ন। জিমির পুশ, রানার স্টপে ড্র্যাগ করেন তিনি। ২১ মিনিটে নিজের দ্বিতীয় গোল করে ব্যবধান বাড়ান চয়ন। তার নেয়া মাটি কামরানো হিট ঘানার গোলরক্ষককে পরাস্ত করে বল বোর্ডে আঘাত হানে। ২৬ মিনিটে আরও একটি পিসি পায় বাংলাদেশ। এবার চয়নের ড্র্যাগ করা বল গ্লাভস দিয়ে রুখে দেন ইউজিন। ফলে এ যাত্রা ব্যর্থ হন তিনি। ম্যাচের ২৯ মিনিটে সমতা ফেরানোর সুযোগ পায় ঘানা। এ সময় লিউক দামালির পেনাল্টি কর্নার দুর্দান্ত দক্ষতায় গোললাইন থেকে ফিরিয়ে দিয়ে দলকে রক্ষা করেন ডিফেন্ডার আশরাফুল ইসলাম। ২-১ গোলে এগিয়ে থেকে দ্বিতীয় কোয়ার্টার শেষ করে বাংলাদেশ। ম্যাচের ৪৩ মিনিটে ম্যাকিউ ডামালির হাফ লাইন থেকে করা প্রচ- হিটে ফ্লিক করে ঘানাকে সমতায় ফেরান আকাবা এলিকেম। ফলে ২-২ গোলে সমতায় শেষ হয় তৃতীয় কোয়ার্টার। চতুর্থ ও শেষ কোয়ার্টারে স্বাগতিকদের ওপর প্রচ- চাপ সৃষ্টি করে খেলে ঘানা। কোণঠাসা হয়ে পড়া বাংলাদেশের থেকে ৫২ মিনিটে পেনাল্টি স্ট্রোক আদায় করে নেয় তারা। পেনাল্টি স্ট্রোক থেকে গোল করে ঘানাকে এগিয়ে দেন ম্যাথিউ ডামালি। পিছিয়ে পড়ে গোলের জন্য মরিয়া হয়ে খেলতে থাকে বাংলাদেশ। এমন অবস্থায় পেনাল্টি কর্নার পেয়ে যায় স্বাগতিকরা। একদম শেষ মিনিটে চয়নের হিট ঘানা গোলরক্ষক ফিরিয়ে দেন। ফিরতি বলে প্রচ- হিট নেন সারোয়ার। কিন্তু গোলরক্ষক আবারও ফিরিয়ে দেন। এবার বল পান অধিনায়ক রাসেল মাহমুদ জিমি। তিনি পুশ করে পাঠিয়ে দেন বোর্ডে। অধিনায়কের এই গোলে শূটআউটে যায় বাংলাদেশ। আর শূটটআউটে ঘানাকে হারিয়ে পঞ্চম স্থান নিশ্চিত করে স্বাগতিকরা। ফাইনালে মালয়েশিয়া ২-০ গোলে পিছিয়ে পড়েও শেষ পর্যন্ত হাসে শিরোপা জয়ের হাসি। পিসি থেকে ১২ মিনিটে গোল করে চীনকে এগিয়ে নেন ডু টালাকে। ২২ মিনিটে ব্যবধান দ্বিগুণ করেন সু জুন। বিরতির পর ৪৬ মিনিটে শাহরিল সাবাহের গোলে ম্যাচে ফেরে মালয়েশিয়া। ৫৫ মিনিটে আরেকটি পিসিতে জাজলান নাজমি গোল করে মালয়েশিয়াকে সমতায় ফেরান। এরপর শূটআউটে মালয়েশিয়ার পাঁচজন শূটারই গোল করেন। চীনের করেন তিনজন।
×