ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

মঙ্গল বার্তায় উদযাপন রঙের উৎসব দোল

প্রকাশিত: ০৫:৫৪, ১৩ মার্চ ২০১৭

মঙ্গল বার্তায় উদযাপন রঙের উৎসব দোল

স্টাফ রিপোর্টার ॥ মাঝে মাঝেই যেন কংক্রিটের শহর ঢাকায় বয়ে যায় রঙের খেলা। বর্ণের উচ্ছ্বাসে প্লাবিত হয় নাগরিক প্রাণ। রবিবার ছিল তেমনই একদিন। বসন্ত দিনে রঙের ছটায় স্নিগ্ধ হয়ে উঠেছিল রাজধানী। দোল উৎসবকে ঘিরে হোলি খেলার সৌন্দর্যময় দৃশ্যপট জুড়িয়েছে নয়ন। রঙের আশ্রয়ে প্রকাশিত হয়েছে মঙ্গলের বারতা। সনাতন ধর্মাবলম্বীদের আচার পর্বটি সর্বজনীন রূপ নিয়ে ধরা দিয়েছে উৎসবে। সেই উৎসবে সম্প্রীতির বন্ধনে মিলিত হয়েছে নাগরিক প্রাণ। এদিন সকালের সূচনাপর্ব থেকেই পুরান ঢাকার পাড়া-মহল্লায় চলেছে রঙের এ উৎসব। বিশেষ করে চোখে পড়েছে তরুণ-তরুণীদের রঙের খেলায় প্রাণময় দৃশ্য। হোলির রঙে শাঁখারিবাজার ও তাঁতীবাজারসহ বিভিন্ন এলাকা হয়ে উঠেছিল রঙিন। তরুণদের সঙ্গে ছেলে-বুড়ো এমনকি পথচারীরাও অংশ নেয় রং মাখানোর এ উৎসবে। রীতি অনুযায়ী পূজার মূল আয়োজনটি অনুষ্ঠিত হয় ঢাকেশ্বরী মন্দিরে। সকাল সাড়ে ৮টায় শুরু হয় আনুষ্ঠানিকতা। মন্দিরের পুরোহিত বরুণ চক্রবর্তী ধর্মমত নির্বিশেষে সকলের মঙ্গল কামনা করে প্রার্থনা করেন। প্রার্থনা শেষে তিনি বলেন, এ তিথিতে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ বৃন্দাবনে গোপীদের নিয়ে লীলাখেলায় বলেছিলেন ‘তোমরা আমার কাছে যা প্রার্থনা করবে, আমি তোমাদের তাই দেব।’ তাই ভগবানের কাছে আজ আমাদের অনেক চাওয়া। গৌরাঙ্গ মহাপ্রভু কলিযুগে এসেও বলে গেছেন মানবধর্মের কথা। আমরা ঈশ্বরের কাছে আজ প্রার্থনা করি, তিনি যেন আমাদের সুখে শান্তিতে রাখেন। জগতের সব ধর্ম-বর্ণ আর গোত্রের মানুষ যেন ভাল থাকে। অশুভকে ধ্বংস করে নতুনকে স্বাগত জানানোর মধ্যেই এ উৎসবের প্রকৃত সার্থকতা। সনাতন ধর্ম অনুযায়ী, তৎসম শব্দ ‘হোরি’র অপভ্রংশ হোলি। সেখান থেকে হোলক, হোলিকা, যার অর্থ ডাইনি। স্কন্দপুরাণের ফাল্গুন মাহাত্ম্য অংশের হোলিকা বধ কাহিনী থেকেই এ উৎসবের উৎপত্তি বলে প-িতদের ভাষ্য। স্বামীবাগ থেকে পূজায় অংশ নিতে এসেছিলেন সখী রানী সাহা। কথা প্রসঙ্গে বলেন, বিবাহিত নারীরা পুরাকালে পরিবারের মঙ্গল কামনায় রাকা পূর্ণিমায় রঙের এ উৎসব করতেন। এখনও অনেক অঞ্চলে রঙ উৎসবের আগের দিন ধুমধাম করে হোলিকা দহন হয়। শুকনো গাছের ডাল, কাঠ, পাতা ইত্যাদি দাহ্য-বস্তু অনেক আগে থেকে সংগ্রহ করে তাতে আগুন ধরিয়ে হোলিকা দহন হয়। এটা অসুর আর অমঙ্গলের বিনাশের প্রতীক। কথা হয় সূত্রাপুরের বাসিন্দা আহমেদ হায়দারের সঙ্গে। তিনি বলেন, আয়োজনটি সনাতন ধর্মাবলম্বীদের হলেও এর মাঝে আছে মঙ্গলের বারতা। আর উৎসব যেহেতু সর্বজনীন তাই নিজেকে রাঙিয়ে নিতেই হাজির হয়েছি এখানে। রঙের খেলায় ধুয়ে নেব মনের পংকিলতা। বেলা ১২টায় পূজা শেষ হলে মন্দির প্রাঙ্গণে শুরু হয় ভজন কীর্তন। রাধা-কৃষ্ণের বিগ্রহ আবির ও গুলালে স্নান করিয়ে ভক্তরাও রঙ খেলেন। রঙের ডালা আর পিচকারি হাতে তরুণ দলের এ উৎসব চলল দিনভর। শাঁখারিবাজারের হোলি উৎসবে কথা হয় সেখানকার বাসিন্দা অরুণ চক্রবর্তীর সঙ্গে। তিনি বলেন, অসাম্প্রদায়িক চেতনা আরও বেশি জাগ্রত হোক। মহাপ্রভুর জন্মদিনে আমরা বলতে চাই, সবার উপরে মানুষ সত্য তাহার উপরে নাই। রঙের রাজা বসন্তে হোলি উৎসব ধরা দিক প্রেম ও মঙ্গলের বারতায়।
×