ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

রাজন হত্যা ॥ ডেথ রেফারেন্স ও আপীল শুনানি শেষ

প্রকাশিত: ০৫:৫১, ১৩ মার্চ ২০১৭

রাজন হত্যা ॥ ডেথ রেফারেন্স ও আপীল শুনানি শেষ

স্টাফ রিপোর্টার ॥ সিলেটের চাঞ্চল্যকর সামিউল আলম রাজন হত্যা মামলার মৃত্যুদ-প্রাপ্ত আসামিদের ডেথ রেফারেন্স ও আপীল শুনানি শেষ হয়েছে। আদালত রায় ঘোষণার জন্য ১১ এপ্রিল দিন ধার্য করেছেন। অন্যদিকে বাবা-মাকে হত্যার দায়ে পুলিশ কর্মকর্তার মেয়ে মৃত্যুদ-প্রাপ্ত ঐশী রহমানের ডেথ রেফারেন্স ও আপীল শুনানি শুরু হয়েছে। রবিবার আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে পেপারবুক থেকে উপস্থাপন করেন ডেপুটি এ্যাটর্নি জেনারেল জহিরুল হক জহির। এদিকে রাজশাহীর মোহনপুর উপজেলায় শিশু মাহফুজুর রহমান অলি (৮) হত্যা মামলায় ভগ্নিপতি সাহেব আলী ও মুকুল হোসেনের মৃত্যুদ-াদেশ বহাল রেখেছেন হাইকোর্ট। একই সঙ্গে অপর আসামি মোঃ রাসেলের যাবজ্জীবন কমিয়ে ১৪ বছরের কারাদ-াদেশ দেয়া হয়েছে। রবিবার হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট বেঞ্চগুলো এ আদেশ প্রদান করেছেন। সামিউল আলম রাজন হত্যা মামলার মৃত্যুদ-প্রাপ্ত আসামিদের ডেথ রেফারেন্স ও আপীল শুনানির রায়ের আদেশ ১১ এপ্রিল। বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন ও বিচারপতি মোঃ জাহাঙ্গীর হোসেনের হাইকোর্ট বেঞ্চ রবিবার দুপুরে এ দিন ধার্য করেন। আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি এ্যাটর্নি জেনারেল জহিরুল হক জহির, সহকারী এ্যাটর্নি জেনারেল আতিকুল হক সেলিম ও বিলকিস ফাতেমা। আসামিপক্ষে শুনানিতে ছিলেন এস এম আবুল হোসেন, বেলায়েত হোসেন, শাহরিয়ায় ও শহিদ উদ্দিন চৌধুরী। পলাতক এক আসামির পক্ষে রাষ্ট্রনিযুক্ত হিসেবে ছিলেন আইনজীবী হাসনা বেগম। ২০১৫ সালের ৮ জুলাই সিলেটের কুমারগাঁওয়ে নির্মম নির্যাতন চালিয়ে হত্যা করা হয় সদর উপজেলার কান্দিরগাঁও ইউনিয়নের বাদেআলী গ্রামের আজিজুল ইসলাম আলমের ছেলে রাজনকে। হত্যাকারীরা নৃশংসতার ২৮ মিনিটের ভিডিওচিত্র সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দিলে দেশে-বিদেশে আলোড়ন সৃষ্টি হয়। হত্যাকা-ের পর মহানগরীর জালালাবাদ থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) বাদী হয়ে মুহিত আলমসহ অজ্ঞাত ৪/৫ জনকে আসামি করে মামলা দায়ের করেন। ঘটনাটি ধামাচাপা দিতে গিয়ে হত্যাকারীদের সঙ্গে আর্থিক সমঝোতার অভিযোগে বরখাস্ত হন জালালাবাদ থানার ওসি (তদন্ত) আলমগীর হোসেন, এসআই জাকির হোসেন ও আমিনুল ইসলাম। ওই বছরের ১৬ আগস্ট সৌদি আরবে আটক কামরুল ইসলামসহ ১৩ আসামিকে অভিযুক্ত করে আদালতে এ হত্যা মামলার চার্জশীট (অভিযোগপত্র) দাখিল করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের ইন্সপেক্টর সুরঞ্জিত তালুকদার। মামলার বিচার শেষে ওই সালের ৮ নবেম্বর সিলেট মহানগর দায়রা জজ আকবর হোসেন মৃধার আদালত রাজন হত্যার দায়ে মূল আসামি কামরুলসহ ৪ আসামিকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদ-াদেশ। ১৩ আসামির মধ্যে একজনকে যাবজ্জীবন কারাদ-, তিনজনকে সাত বছরের কারাদ- ও ২ জনকে এক বছরের কারাদ- দেন আদালত। খালাস দেয়া হয়েছে তিনজনকে। মৃত্যুদ-প্রাপ্ত চার আসামি হলো মহানগরীর জালালাবাদ থানার কুমারগাঁও এলাকার শেখপাড়া গ্রামের মৃত আব্দুল মালেকের ছেলে কামরুল ইসলাম (২৪), চৌকিদার ময়না মিয়া ওরফে বড় ময়না (৪৫), তাজউদ্দিন বাদল (২৮) ও পলাতক জাকির হোসেন পাভেল। মৃত্যুদ-প্রাপ্ত ময়না চৌকিদারকে অপর দুটি ধারায় পৃথক পৃথকভাবে সাত বছর ও এক বছর করে কারাদ- প্রদান করেন আদালত। হত্যাকা-ের ভিডিওচিত্র ধারণকারী নূর মিয়ার যাবজ্জীবন প্রদান করেন আদালত। সাত বছরের সাজা হয় কামরুলের দুই ভাই মুহিত আলম ও আলী হায়দার ওরফে আলী এবং পলাতক আসামি শামীম আহমদের। অপর দুই আসামি আয়াজ আলী ও দুলালকে এক বছর করে কারাদ- দেন আদালত। দ-প্রাপ্ত প্রত্যেক আসামিকে দশ হাজার টাকা করে জরিমানা এবং অনাদায়ে ৩ মাস করে সশ্রম কারাদ- প্রদান করেন আদালত। অপরাধ সন্দেহজনকভাবে প্রমাণিত না হওয়ায় বেকসুর খালাস পান ফিরোজ মিয়া, আজমত আলী ও রুহুল আমিন। রায়ের দুদিন পর এ মামলার ডেথ রেফারেন্স পৌঁছে হাইকোর্টে। প্রয়োজনীয় কাজ শেষে (পেপারবুক তৈরি পর) গত বছর মামলাটি শুনানির জন্য কার্যতালিকাভুক্ত হয়। চলতি বছরের ৩০ জানুয়ারিতে এসে এ মামলার ডেথ রেফারেন্সের শুনানি শুরু হয়। ঐশী রহমানের ডেথ রেফারেন্সের শুনানি শুরু ॥ বাবা-মাকে হত্যার দায়ে পুলিশ কর্মকর্তার মেয়ে মৃত্যুদ-প্রাপ্ত ঐশী রহমানের ডেথ রেফারেন্সের শুনানি শুরু হয়েছে। বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন ও বিচারপতি মোঃ জাহাঙ্গীর হোসেনের হাইকোর্ট বেঞ্চে রবিবার এ শুনানি শুরু হয়েছে। আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে পেপারবুক থেকে উপস্থাপন করছেন ডেপুটি এ্যাটর্নি জেনারেল জহিরুল হক জহির। ২০১৩ সালের ১৬ আগস্ট রাজধানীর মালিবাগের চামেলীবাগে নিজেদের বাসা থেকে পুলিশের স্পেশাল ব্রাঞ্চের (পলিটিক্যাল শাখা) ইন্সপেক্টর মাহফুজুর রহমান ও তার স্ত্রী স্বপ্না রহমানের ক্ষত-বিক্ষত মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। এর পরদিন ঐশী গৃহকর্মী সুমীকে নিয়ে রমনা থানায় আত্মসমর্পণ করেন। ২০১৪ সালের ৯ মার্চ ডিবির ইন্সপেক্টর আবুয়াল খায়ের মাতুব্বর ঢাকার সিএমএম আদালতে ঐশীসহ ৪ জনকে অভিযুক্ত করে পৃথক দুটি চার্জশীট দাখিল করেন। অপর আসামি গৃহকর্মী খাদিজা আক্তার সুমি অপ্রাপ্তবয়স্ক হওয়ায় তার মামলাটির বিচার চলছে শিশু আদালতে। এ হত্যা মামলার বিচার শেষে ২০১৫ সালের ১২ নবেম্বর নিহতদের একমাত্র মেয়ে ঐশী রহমানকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদ-াদেশ দেন ঢাকার ৩ নম্বর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের বিচারক সাঈদ আহমেদের আদালত। ঐশীকে মৃত্যুদ-ের পাশাপাশি ২০ হাজার টাকা জরিমানা ও অনাদায়ে আরও এক বছর কারাদ-ের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। মামলার অন্য আসামি ঐশীর বন্ধু মিজানুর রহমান রনিকে খুনের ঘটনার পর ঐশীদের আশ্রয় দেয়ার অপরাধে দু’বছরের কারাদ- ও পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। জরিমানা অনাদায়ে তাকে আরও এক মাস কারাদ- ভোগ করতে হবে। অপর আসামি ঐশীর বন্ধু আসাদুজ্জামান জনি খালাস পেয়েছেন। দুটি খুনের জন্য পৃথক দুটি অভিযোগ গঠন করেন ট্রাইব্যুনাল। দুটি অপরাধের জন্য আলাদা আলাদা করে ঐশীকে দুবার ফাঁসি ও দুবারে ৪০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। রায়ের ৭ দিন পর ১৯ নবেম্বর ডেথ রেফারেন্স হাইকোর্টে এসে পৌঁছে। পরে এ মামলায় শুনানির জন্য আপীল গ্রহণ করেন হাইকোর্ট। অলি হত্যা মামলায় মৃত্যুদ- বহাল ॥ রাজশাহীর মোহনপুর উপজেলায় শিশু মাহফুজুর রহমান অলি (৮) হত্যা মামলায় ভগ্নিপতি সাহেব আলী ও মুকুল হোসেনের মৃত্যুদ-াদেশ বহাল রেখেছেন হাইকোর্ট। একই সঙ্গে অপর আসামি মোঃ রাসেলের যাবজ্জীবন কমিয়ে ১৪ বছরের কারাদ-াদেশ দেয়া হয়েছে। এ সংক্রান্ত মামলার ডেথ রেফারেন্স ও আপিল শুনানি শেষে রবিবার হাইকোর্টের বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি শহিদুল করিমের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এ রায় ঘোষণা করেন। আদালতে রবিবার আসামিপক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী এএফএম মেজবাহউদ্দিন ও এসএম মুবিন। অপরদিকে রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন ডেপুটি এ্যাটর্নি জেনারেল ফরহাদ আহমেদ ও সহকারী এ্যাটর্নি জেনারেল ইউসুফ মাহমুদ মোরশেদ।
×