ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

সৌন্দর্য নিয়ে ফুটেছে বাগান বিলাস

মচমচে কাগজী ফুলে রঙিন অভ্যর্থনা

প্রকাশিত: ০৫:৪৬, ১৩ মার্চ ২০১৭

মচমচে কাগজী ফুলে রঙিন অভ্যর্থনা

মোরসালিন মিজান ॥ খুব চেনা ফুল বাগানবিলাস। কে দেখেনি? এর পরও চোখ চলে যায়। দেখতে ইচ্ছে করে। কারণ এর সৌন্দর্য। বিশেষ করে এখন, এই বসন্তে দারুণ রঙীন প্রকৃতি। সদ্য ফোটা ফুলের পাপড়ি ফাল্গুনের বৃষ্টিতে ধুয়ে আরও সতেজ হয়েছে। পাতায় ধুলো নেই। কিছুদিন আগের শুকনো লতাপাতা ঝোপঝাড় নতুন প্রাণ পেয়েছে। এক গাছে এত ফুল যে, মনে হয় বাগান! শহর ঢাকার রমনাপার্ক, বলধা গার্ডেন, বোটানিক্যাল গার্ডেনসহ বিভিন্ন বাগানে বিশাল জায়গাজুড়ে ছড়িয়ে আছে বাগানবিলাস। উপরের দিকে তাকালে মন ভরে যায়। বাসা বাড়ির বারান্দা বা ছাদে রাখা টবেও বেশ আছে ফুলটি। নরম মাটিতে খুঁটি গেড়ে মাছা তৈরি করে দেয়া হয়েছে। তাতে ভর দিয়ে ওঠে দাঁড়িয়েছে গাছ। মাচার উপরের দিকটা বৃত্তাকার। ফুলগুলো সেখানে একসঙ্গে দৃশ্যমান হয়। আর একেবারে নতুন সংযোজন ফুটওভারব্রিজ। রাজধানী শহরের অনেক ফুটওভারব্রিজের পাশে লাগিয়ে দেয়া হয়েছে বাগানবিলাস। বড় টবে মাটি ভর্তি করে গাছ লাগিয়ে সেটি ঝুলিয়ে দেয়া হয়েছে। এখন সেখানে ফুলের সমারোহ। বাড়ির গেটেও ফুলটির চারা রোপণ করা হয়। নিয়মিত যতœআত্তির দরকার হয় না। লতাপাতায় বাড়তে থাকে গাছ। কা- দুর্বল যেহেতু, মাচা করে দিতে হয়। মাচায় নিজেকে পেঁচিয়ে নেয় বাগানবিলাস। আঁকড়ে ধরে বাঁচে। বেড়ে ওঠে। আর যখন ফুল ফোটে তখন গোটা বাড়ির চেহারা বদলে যায়। বহিরাঙ্গন আকর্ষণীয় হয়ে ওঠে। পাশ দিয়ে হেঁটে যাওয়ার সময় সেদিকে তাকাতে হয়। হয়-ই। একই বাড়িতে হয়ত আরও ফুল আছে। থাকতে পারে বিশাল বাগান। তবে অভ্যর্থনা জানানোর কাজটি করে বাগানবিলাস। বাগান বিলাস সারা বছরই কম বেশি ফোটে। এই বসন্তে দারুণভাবে দৃশ্যমান। বাগান বিলাস নাম হলেও, এটি ঠিক বাগানের ফুল নয়। বরং বাগান বিলাস নিজেই এক একটি বাগানের মতো। লতা পাতা ফুলসহ যেখানে দৃশ্যমান হয় সেখানেই যেন বাগানের চেহারা। গাছটি প্রচুর জায়গাজুড়ে থাকে। কখনও কখনও ঝোপঝাড়ের মতো দেখায়। এর যত পাতা ততো ফুল। ঘ্রাণ নেই। তবু রঙিন ফুলে চোখ আটকে যায়। মুগ্ধ করে রাখে। বাগান বিলাসের ইংরেজী নাম বোগেনভেলিয়া। এটি ঘুপঃধমরহধ পবধব পরিবারভুক্ত। দেখতে কাগজের মতো মচমচে হওয়ায় বাগান বিলাসকে কাগজী ফুলসহ বিভিন্ন নামেও ডাকা হয়। ফুলগুলো হলুদ, সাদা, গোলাপী, কমলাসহ নানা রঙের হয়ে থাকে। বেশি চোখে পড়ে লাল রং। বাড়ির গেট বা ছাদের বিশাল এলাকাজুড়ে ছড়িয়ে থাকা লতাগুলো শক্ত ধরনের। কিছু একটা আঁকড়ে ধরে এটি বাড়তে থাকে। প্রশান্ত মহাসাগর পাড়ি দেয়া প্রথম ফরাসী নাবিক লুইস এ্যানিত্দয়োন বোগেনভিলের নামে এই ফুলের নামকরণ করা হয়। ১৮ শতকে তিনি ব্রাজিলে ফুলটির সন্ধান পান। আদি নিবাস দক্ষিণ আমেরিকা হলেও, এখন সারা পৃথিবীতেই দেখা যায় বাগান বিলাস। এর অজস্র প্রজাতি। এখন পর্যন্ত ফুলটির প্রায় ৩শ’ জাত আবিষ্কৃত হয়েছে। ইথিওপিয়া, ইন্দোনেশিয়া, ফিলিপিন্স, থাইল্যান্ড, আমেরিকা, পাকিস্তান, ইন্ডিয়া, শ্রীলঙ্কা, তাইওয়ান, ভিয়েতনাম, অস্ট্রেলিয়া, মালয়েশিয়া, গ্রীস, স্পেন, সিঙ্গাপুর, মেক্সিকো, সুইজারল্যান্ডের আবহাওয়া বাগান বিলাসের জন্য বিশেষ উপযোগী বলে জানা যায়। বলা বাহুল্য, বাংলাদেশের পরিবেশও ফুলটির জন্য খুব অনুকূল। এখানে দীর্ঘকাল ধরে আছে বাগান বিলাস। প্রচুর পরিমাণে হয়। খুব যতœআত্তি ছাড়াও টিকে থাকে। উদ্ভিদবিদ দ্বিজেন শর্মা জানান, বাংলাদেশে বাগান বিলাসের কোন ফল হয় না। এ কারণে কোন বীজের পরিবর্তে কলমের মাধ্যমে ডাল কেটে নিয়ে নতুন চারা তৈরি করা হয়। মেরি পামার ও স্পেক্টাবিলিস জাত দুটি এ দেশে বেশি দেখা যায়। কোনটিতে তিনটি পাপড়ি থাকে। কোনটিতে পাপড়ির সংখ্যা হয় তিনের অধিক। দেখতে কাগজের মতো মচমচে হওয়ায় বাগান বিলাসকে কাগজী ফুলসহ বিভিন্ন নামেও ডাকা হয়। ফুলগুলো হলুদ, সাদা, গোলাপী, কমলাসহ নানা রঙের হয়ে থাকে। বেশি চোখে পড়ে লাল রং। বাড়ির গেট বা ছাদের বিশাল এলাকাজুড়ে ছড়িয়ে থাকা লতাগুলো শক্ত ধরনের। কিছু একটা আঁকড়ে ধরে এটি বাড়তে থাকে।
×