ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

ভারতের সঙ্গে গোপন চুক্তির গন্ধ নিয়ে ভাঙ্গা রেকর্ড বাজাতে শুরু করেছে বিএনপি ॥ ওবায়দুল কাদের

প্রকাশিত: ০৫:০৩, ১৩ মার্চ ২০১৭

ভারতের সঙ্গে গোপন চুক্তির গন্ধ নিয়ে ভাঙ্গা রেকর্ড বাজাতে শুরু করেছে বিএনপি ॥ ওবায়দুল কাদের

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, আওয়ামী লীগ ভারতপ্রীতিতেও নেই, ভারতভীতিতেও নেই। নালিশ পার্টি বিএনপি এখন নতুন আরেক ভাঙ্গা রেকর্ড নিয়ে এসেছে। এখন প্রতিদিনই ভারতভীতি ও ভারতবিদ্বেষের ভাঙ্গা রেকর্ড বাজাচ্ছে। ভারত আমাদের দুঃসময়ের বন্ধু। দেশের স্বার্থে এ বন্ধুত্ব থাকবে। বাংলাদেশের জনগণ না চাইলে এ বন্ধুত্ব থাকবে না। রবিবার বঙ্গবন্ধু এভিনিউর আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে জাতীয় শ্রমিক লীগ আয়োজিত ঐতিহাসিক ৭ মার্চের আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখতে গিয়ে তিনি আরও বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এখনও ভারতে যাননি। কিন্তু বিএনপি এখনই গোপন চুক্তির গন্ধ পেয়ে গেছে! প্রধানমন্ত্রী যাবেন এপ্রিলে, তাও এখনও আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা হয়নি। তার আগেই তারা গোপন চুক্তির গন্ধ নিয়ে ভাঙ্গা রেকর্ড বাজাতে শুরু করেছে। ওবায়দুল কাদের বলেন, আওয়ামী লীগের শক্তি বাংলাদেশের জনগণ। বাংলাদেশের জনগণই শেখ হাসিনাকে ক্ষমতায় বসাতে পারে। অন্য কোন বিদেশী শক্তি নয়। অথচ বিএনপি ক্ষমতার জন্য ভারতপ্রীতি এবং ক্ষমতার বাইরে গেলে ভারতবিদ্বেষী কথা বলে। ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক ইতিবাচক, গঠনমূলক ও বন্ধুত্বের পারস্পরিক স্বার্থে দাবি করে ওবায়দুল কাদের বলেন, ভারতের সঙ্গে আমাদের কোন চুক্তি হলে জাতীয় স্বার্থেই হবে। জাতীয় স্বার্থকে বিকিয়ে দিয়ে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা জীবন থাকতে কোনদিন কারও সঙ্গে কোন চুক্তি করবেন না। এ বিশ্বাস বাংলাদেশের জনগণের আছে। বাংলাদেশের স্বার্থকে বিকিয়ে দিয়ে ক্ষমতায় যেতে চাইলে শেখ হাসিনা ২০০১ সালেই ক্ষমতায় যেতে পারতেন। যেটা করেছেন বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়া। এটা দেশের মানুষ ভুলে যায়নি। ভারতের লোকসভা নির্বাচনে বিজেপির ক্ষমতায় আসা নিয়ে বিএনপি নেতাদের তৎকালীন প্রতিক্রিয়া তুলে ধরে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, নরেদ্র মোদির জয়ের পরদিন বিএনপি নেতারা ভারতীয় দূতাবাস খোলার আগেই ফুল ও মিষ্টি নিয়ে ঢাকার অফিসের সামনে দাঁড়িয়েছিলেন। ক্ষমতার পরিবর্তন হয়েছিল ভারতে কিন্তু বিএনপি ফুল আর মিষ্টি নিয়ে ভারতীয় দূতাবাসের সামনে। কারণ তারা মনে করেছিল নরেদ্র মোদি এসেই বিএনপিকে ক্ষমতায় বসিয়ে দেবে। কিন্তু যখন বঙ্গবন্ধুকন্যা আর নরেন্দ্র মোদি সীমান্ত চুক্তি বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে বহু বছরের অবিশ্বাস ও সন্দেহের দেয়াল ভেঙ্গে দিলেন, তখন তাদের (বিএনপি) জাগ্রত হওয়া শুরু হলো। তিনি বলেন, ভারতের সঙ্গে এ বন্ধুত্ব থাকবে। এ বন্ধুত্বে ফাটল ধরানোর চেষ্টা করে কোন লাভ নেই। এ বন্ধুত্ব বাংলাদেশ ও ভারতের জনগণের স্বার্থে, ক্ষমতার স্বার্থে নয়। বিএনপিকে নালিশের ভাঙ্গা রেকর্ড ও বিদেশীদের দুয়ারে ধর্ণা দেয়া বন্ধ করার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, এ দেশের জনগণ জানে বিএনপি উপরে উপরে শেখ হাসিনার অধীনে নির্বাচনে যাবে না বললেও তারা তলে তলে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে। তারা নির্বাচনে আসবে। কারণ গাধা জল খায় তবে একটু ঘোলা করে খায়। বিএনপিও পানিটা ঘোলা করে শেষ পর্যন্ত নির্বাচনে আসবে। সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, বাংলাদেশে আজিজ মার্কা কমিশনের মতো কোন নির্বাচন কমিশনকে শেখ হাসিনা সহযোগিতা করবেন না। আগামী নির্বাচন হবে সুষ্ঠ, অবাধ ও নিরপেক্ষ। সরকার সুষ্ঠু নির্বাচনের সর্বাত্মক সহযোগিতা নির্বাচন কমিশনকে দেবে। এটা আমি পার্টির সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দেড় বছর আগে বলে গেলাম। এ কথার সঙ্গে কাজের মিল থাকে কি-না এটা জনগণ দেখবে। তিনি আরও বলেন, জনগণকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার মতো নির্বাচন শেখ হাসিনা করেন না। নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচন একটি ‘মডেল নির্বাচন’। আপনারা অপেক্ষা করুন। শেখ হাসিনা ক্ষমতায় থাকলে আগামী জাতীয় নির্বাচনে নির্বাচন কমিশন নারায়ণগঞ্জের মতো ‘মডেল নির্বাচন’ উপহার দিতে পারবে। সংগঠনের নেতাকর্মীদের আগামী জাতীয় নির্বাচনের সর্বাত্মক সাংগঠনিক প্রস্তুতি নেয়ার আহ্বান জানিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, আমরা একটি স্মার্ট (আধুনিক) আওয়ামী লীগ নিয়ে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আগামী নির্বাচনে অংশ নিতে চাই। এটাই আমাদের কমিটমেন্ট। কারণ আমরা আমাদের প্রতিদ্বন্দ্বীকে হালকা করে দেখি না। আগামী নির্বাচনে শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে সে কথা মাথায় রেখেই আমরা নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত হচ্ছি। আপনরাও প্রস্তুতি গ্রহণ করুন। জাতীয় শ্রমিক লীগের সভাপতি শুক্কুর মাহমুদের সভাপতিত্বে সভায় আরও বক্তব্য রাখেনÑ আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক, সাংগঠনিক সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, শ্রমবিষয়ক সম্পাদক হাবিবুর রহমান সিরাজ প্রমুখ। আওয়ামী লীগের নামে দোকান বন্ধ করতে হবে ॥ আলোচনাকালে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নাম ব্যবহার করে ভুঁইফোড় সংগঠনগুলো ‘দোকান-ব্যবসা’ বন্ধ করে দিতে নেতাকর্মীদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, এগুলো আওয়ামী লীগের সুনাম নষ্ট করছে। এসব প্রতিষ্ঠান জনগণের কাছে আমাদের পার্টির ভাবমূর্তি ক্ষুণœ করছে। তিনি বলেন, এই যে রাজনীতিতে আওয়ামী লীগের নাম ব্যবহার করে কিছু কিছু দোকান খোলা হচ্ছে। এই দোকানগুলো বন্ধ করা দরকার। এই দোকান বন্ধ করতে হবে। তিনি বলেন, এখানে আসতে অনেক জায়গায় দেখলাম আওয়ামী প্রচার লীগ। আরেক জায়গায় দেখলাম আওয়ামী প্রজম্ম লীগ। তরুণ লীগ, আর যে কত নাম আছে, জানি না। এই দোকান; আমরা স্বীকৃতি দেব না। আওয়ামী লীগের যে কয়টি স্বীকৃত সহযোগী আছে, তার বাইরে অন্য কোন সংগঠন বঙ্গবন্ধুর ছবি, নেত্রীর ছবি, জয়ের ছবি এবং আমাদের নেতাদের ছবি ব্যবহার করলে; এদের প্রতিরোধ করুন। তিনি বলেন, এসব দোকানের ব্যবসা চলবে না। এরা দোকান খুলে চাঁদাবাজি করে। এরা একটা দিবস আসে, আর এদের চাঁদাবাজির উৎসব শুরু হয়ে যায়। এদের চাঁদাবাজি বন্ধ করতে হবে। কারণ এসব দোকানের কোন আদর্শ ও রাজনীতির লক্ষ্য নেই। এদের লক্ষ্য হচ্ছে, টেলিভিশনে ছবি তোলা, আর চাঁদাবাজি করা।
×