ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

জঙ্গী ও সন্ত্রাস দমনে ইন্টারপোল প্রশংসা করল বাংলাদেশের

প্রকাশিত: ০৪:৫৭, ১৩ মার্চ ২০১৭

জঙ্গী ও সন্ত্রাস দমনে ইন্টারপোল প্রশংসা করল বাংলাদেশের

স্টাফ রিপোর্টার ॥ জঙ্গী ও সন্ত্রাস একক কোন দেশের সমস্যা নয়, গোটা বিশ্বের। এর বিরুদ্ধে লড়াই করা কোন সরকারের একার দায়িত্ব নয়। সে জন্য সম্মিলিত প্রচেষ্টায় লড়াই করতে হবে। তাই দেশে দেশে বিভিন্ন কমিউনিটি ও ধর্মীয় নেতাসহ সবাইকে নিয়ে একত্রে জঙ্গীবাদ দমনে কাজ করতে হবে। জঙ্গী ও সন্ত্রাসবাদসহ আন্তঃদেশীয় অপরাধ দমনের লক্ষ্যে রবিবার থেকে রাজধানী ঢাকায় শুরু হওয়া চীফ পুলিশ কনফারেন্সের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীসহ অন্যান্য আলোচক এ ধরনের মনোভাব ব্যক্ত করেন। আর ইন্টারপোল মহাসচিব জঙ্গী ও সন্ত্রাস দমনে বাংলাদেশের প্রশংসা করে বলেছেন, অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশও বেশ কয়েকবার সন্ত্রাস ও জঙ্গীদের দ্বারা আক্রান্ত হয়েছে। কিন্তু প্রতিবারই দেশটি সফলতার সঙ্গে জঙ্গীদের মোকাবেলা করেছে। ইন্টারপোল মহাসচিব জার্গেন স্টোক রবিবার চীফস অব পুলিশ কনফারেন্সের ‘মিট দ্য প্রেস’ সেশনে এ ধরনের প্রশংসাসূচক মন্তব্য করেছেন। বিশ্বের ১৪ দেশের পুলিশপ্রধান ও উর্ধতন কর্মকর্তাদের অংশগ্রহণে এ সম্মেলন শুরু হয়েছে। ইন্টারপোল ও পুলিশের যৌথ উদ্যোগে বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো এ ধরনের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। রাজধানীর হোটেল সোনারগাঁওয়ে ‘চীফ অব পুলিশ কনফারেন্স অব সাউথ এশিয়া এ্যান্ড নেইবারিং কান্ট্রিস অন রিজিওন্যাল কো-অপারেশন ইন কার্ভিং ভায়োলেন্ট এক্সট্রিমিজম এ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম’ শীর্ষক তিনদিনব্যাপী এ সম্মেলন শুর হয়েছে রবিবার সকালে। আগামীকাল মঙ্গলবার আনুষ্ঠানিকভাবে এর সমাপ্তি ঘোষণা করা হবে। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি হিসেবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছেন, শুধু দেশের নিরাপত্তা নিশ্চিত করাই আমাদের কাজ নয়, প্রতিবেশী দেশেও যাতে জঙ্গী ও সন্ত্রাসীরা ঘাঁটি গাড়তে না পারে সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। এ লক্ষ্যে আমরা প্রতিবেশীদের সঙ্গে কাজ করছি। এছাড়া জঙ্গীবাদ দমনে জাতিসংঘ গৃহীত বিভিন্ন কৌশলগত সিদ্ধান্তের প্রতি বাংলাদেশ সমর্থন জানিয়েছে। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শুধু দেশের জঙ্গী ও সন্ত্রাসবাদ দমনেই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছেন না, আঞ্চলিক ও বিশ্বব্যাপী জঙ্গীবাদ দমনে তিনি ভূমিকা রাখছেন। আমাদের সরকার সন্ত্রাসবাদ দমনে জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করেছে। এ সময় তিনি গত বছর হলি আর্টিজানসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় চালানো জঙ্গীবিরোধী অভিযানে পুলিশের বিশেষ ভূমিকার কথা উল্লেখ করেন। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দক্ষতা বৃদ্ধি, গোয়েন্দা তথ্য ভাগাভাগি এবং আন্তর্জাতিকভাবে সহযোগিতা করায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ইন্টারপোলের মহাসচিব জারগান স্টোককে ধন্যবাদ জানান। ইন্টারপোল মহাসচিব বলেন, বাংলাদেশ গত বছর বড় ধরনের সন্ত্রাসী কর্মকা- মোকাবেলা করেছে। তবে বাংলাদেশ পুলিশ সফলতার সঙ্গেই এটি মোকাবেলা করেছে। এ সম্মেলনে দক্ষিণ এশীয় দেশসমূহের মধ্যে আন্তঃদেশীয় সন্ত্রাসবাদ, সাইবার অপরাধ, জঙ্গীবাদ ও বিভিন্ন সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর বিষয়ে আলোচনা হবে। এসব অপরাধ দমনে আলোচনার মাধ্যমে উপায় খুঁজে বের করা হবে। এসব বিষয় নিয়ে পারস্পরিক জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা আদান-প্রদানের জন্য এ সম্মেলন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। জার্গেন স্টোক বলেন, অপরাধ দমন করে সুরক্ষিত বিশ্ব গঠনে পারস্পরিক তথ্য আদান-প্রদান খুবই গুরুত্বপূর্ণ। পারস্পরিক যোগাযোগ সুদৃঢ় করতে এ সম্মেলনের আয়োজন। আন্তর্জাতিক যোগাযোগ রক্ষায় ইন্টারপোল সবসময়ই বাংলাদেশকে সহায়তা দিয়ে থাকে। কয়েকটি রাষ্ট্রের মধ্যে এমন সম্মেলন নিজেদের অভিজ্ঞতা বিনিময়ের সুযোগ করে দেয়। তাই প্রথমবারের মতো ঢাকায় ইন্টারপোল ও বাংলাদেশ পুলিশের যৌথ উদ্যোগে এ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়েছে। শুধু দক্ষিণ এশীয় দেশগুলোর জন্যই নয় বরং এই সম্মেলন সন্ত্রাস দমনে আন্তর্জাতিকভাবেও গুরত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। ইন্টারপোল মহাসচিব বলেন, ইন্টারপোল ১৯০টি সদস্য রাষ্ট্রের মধ্যে শক্তিশালী নেটওয়ার্ক তৈরি করে তাদের সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদ সংশ্লিষ্ট তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করছে। এভাবে পারস্পরিক তথ্য আদান-প্রদানের মাধ্যমেই জঙ্গীবাদের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করা সম্ভব। সম্মেলনে উপস্থিত বাংলাদেশ পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) এ কে এম শহীদুল হক বলেন, জঙ্গী ও সন্ত্রাসবাদ আঞ্চলিক বা কোন একটি দেশের একক সমস্যা নয়, এটি বৈশ্বিক সমস্যা। তাই সন্ত্রাসবাদ দমনে আঞ্চলিক সহযোগিতা প্রয়োজন। সে জন্যই আজকের এই সম্মেলনে আয়োজন করা হয়েছে। যাতে যথাসময়ে আমরা গোয়েন্দা তথ্য এবং অপরাধীদের বিনিময় করতে পারি। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে জঙ্গীদের প্রচার বন্ধে করণীয় সম্পর্কে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, এ নিয়ে ফেসবুকের সঙ্গে আলাদা বৈঠক করা হবে। সম্মেলনে উপস্থিত এফবিআই, আসিয়ান পুল দেশের প্রতিনিধিদের কাছেও জঙ্গী ও সন্ত্রাসবাদ দমনে বাংলাদেশ পুলিশ সহযোগিতা চাইবে বলেও আইজিপি জানান। এছাড়া, সীমান্তে সন্ত্রাস বন্ধে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিব) পাশাপাশি পুলিশের করণীয় সম্পর্কেও আলোচনা করা হবে। রাজনৈতিক অনেক নেতার নামে ইন্টারপোলের গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি সম্পর্কে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে ইন্টারপোলের সেক্রেটারি জারগান স্টোক বলেন, রাজনৈতিক কোন নেতার নামে যদি গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হয়, সে ক্ষেত্রে বিরোধী পক্ষ অভিযোগ করলে তা যাচাই-বাছাই করা হয়। যদি প্রমাণ পাওয়া যায় যে রাজনৈতিক বিবেচনায় কারও নামে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে তাহলে তার নাম বাদ দিয়ে দেয়া হয়। তিনদিনব্যাপী দক্ষিণ এশিয়া ও পার্শ্ববর্তী দেশসমূহের পুলিশপ্রধানদের এই সম্মেলন অনুষ্ঠিত হচেছ। সম্মেলনে আফগানিস্তান, অস্ট্রেলিয়া, ভুুটান, ব্রুনাই, চীন, ভারত, ইন্দোনেশিয়া, মালদ্বীপ, মালয়েশিয়া, মিয়ানমার, নেপাল, দক্ষিণ কোরিয়া, শ্রীলঙ্কা ও ভিয়েতনামের প্রতিনিধিরা অংশ নিচ্ছেন। ১৪ দেশের প্রতিনিধি ছাড়াও ইন্টারপোল, ফেসবুক ও যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা (এফবিআই), যুক্তরাষ্ট্রের আইজিসিআই, আসিয়ানপোল ইত্যাদি সংস্থার উর্ধতন কর্মকর্তাসহ মোট ৫৮ জন বিদেশী অংশগ্রহণ করছেন। জঙ্গী দমন, মানবপাচার, অর্থনৈতিক অপরাধ, সন্ত্রাসী অর্থায়ন, মাদকদ্রব্য পাচার রোধ, অবৈধ অস্ত্র চোরাচালান প্রতিরোধ, গোয়েন্দা তথ্য আদান-প্রদান, সাইবার অপরাধ নিয়ন্ত্রণের বিষয়ে সম্মেলনে বিস্তারিত আলোচনা হবে। মঙ্গলবার সমাপনী অনুষ্ঠানে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বক্তব্য রাখবেন।
×