ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

তুর্কী পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে বাধা দেয়ার পর এবার রটারডাম থেকে মন্ত্রীকে বহিষ্কার

আঙ্কারা-আমস্টারডাম তিক্ততা

প্রকাশিত: ০৪:৫০, ১৩ মার্চ ২০১৭

আঙ্কারা-আমস্টারডাম তিক্ততা

ন্যাটো সদস্য তুরস্কের সঙ্গে ইউরোপীয় দেশ নেদারল্যান্ডসের সম্পর্ক প্রায় তলানিতে এসে ঠেকেছে। রবিবার রটারডামের তুর্কী কনস্যুলেট থেকে সফররত তুরস্কের একজন মন্ত্রীকে বহিষ্কার করা হয়েছে। এর একদিন আগে তুর্কী পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে নেদারল্যান্ডসে ঢুকতে দিতে অস্বীকৃতি জানানো হয়। এর ফলে আঙ্কারা ও আমস্টারডামের মধ্যে কূটনৈতিক দ্বন্দ্ব এখন তুঙ্গে। খবর এএফপির। গণভোটের পক্ষে ইউরোপে প্রচারের অংশ হিসেবে তুরস্কের পরিবার ও সামাজিক নীতিবিষয়ক মন্ত্রী ফাতমা বেতুল সায়ান কায়া শনিবার নেদারল্যান্ডসে বসবাসরত তুর্কী ভোটারদের উদ্দেশে সমাবেশে যেতে চেয়েছিলেন। কিন্তু সেখানে পৌঁছার পর ডাচ কর্তৃপক্ষ তাকে কনস্যুলেটে ঢুকতে বাধা দেয়। এর আগে তুর্কী পররাষ্ট্রমন্ত্রী মেভলুত কাভুসুগলোকে নেদারল্যান্ডসে ঢুকতে অস্বীকৃতি জানানোকে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইপ এরদোগান নাৎসিসুলভ আচরণ বলে সমালোচনা করেছেন। নেদারল্যান্ডসের প্রধানমন্ত্রী মার্ক রুট এরদোগানের কথাকে ‘উগ্র মন্তব্য’ বলে আখ্যায়িত করেছেন। অন্যদিকে রটারডমের মেয়র আহমেদ আবুতালেব বলেছেন, তুর্কি কনসাল জেনারেল তার দেশের মন্ত্রীর আসার বিষয়ে তথ্য গোপন করে প্রতারণা করেছেন। তিনি বলেন, ‘(তুর্কি কনসাল) আমাদের প্রকৃত ঘটনা অবহিত করেননি।’ রটারডম থেকে সফররত তুরস্কের মন্ত্রীকে বহিষ্কার করার পর রবিবার সেখানে প্রবাসী তুর্কীদের বিক্ষোভ সমাবেশ নেদারল্যান্ডসের পুলিশ ছত্রভঙ্গ করে দিয়েছে। ক্ষমতা সংহত করতে এরদোগান ১৬ এপ্রিল সংবিধান সংশোধন বিষয়ে গণভোট আয়োজনের উদ্যোগ নিয়েছেন। ওই গণভোটের জন্য তুরস্কের দুই মন্ত্রী রটারডমে তুর্কিদের উদ্দেশে ক্যাম্পেন করতে গেলে শনিবার বাধার মুখে পড়েন। পরে সন্ধ্যায় এক তুর্কী মন্ত্রীকে কনস্যুলেটে ঢুকতে না দেয়া এবং পরে তাকে জার্মান সীমান্ত দিয়ে বের করে দেয়া হলে পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়। ওই ঘটনার প্রতিবাদে কনস্যুলেটের সামনে এরদোগানের শত শত সমর্থক বিক্ষোভ করে। পুলিশ রবিবার সকালে জলকামান ব্যবহার করে বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করে। এদিকে রবিবার আঙ্কারার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ডাচ শার্জ দ্য এ্যাফেয়ার্সকে তলব করে বলা হয়েছে, ছুটিতে থাকা ডাচ রাষ্ট্রদূতের আর তুরস্কে ফিরে আসার প্রয়োজন নেই। দেশের বাইরে বসবাস করে ৫৫ লাখ তুর্কী। এর মধ্যে জার্মানিতেই আছে ১৪ লাখ ভোটার। সেখানে হ্যাঁ ভোটের পক্ষে প্রচার চালালে অনেক ভোটারকেই দলে টানতে পারবে এরদোগান সমর্থকরা। এ কারণেই জার্মানিসহ অস্ট্রিয়া এবং নেদারল্যান্ডস যেখানে তুর্কীদের সংখ্যা বেশি সেসব দেশে একাধিক প্রচার সমাবেশের পরিকল্পনা করেছে তুরস্ক। এখন দেশগুলো তুরস্কের এ ধরনের সমাবেশ নিষিদ্ধ করায় তুর্কী সরকারের সঙ্গে বাধছে কূটনৈতিক দ্বন্দ্ব। দু’দেশের মধ্যেও বিষয়টি নিয়ে তিক্ততা বাড়ছে। বেশিরভাগ দেশই নিরাপত্তা উদ্বেগজনিত কারণ দেখিয়ে তুরস্কের প্রচার সমাবেশ নিষিদ্ধ করছে। নেদারল্যান্ডস সরকার বলেছে, তারা তাদের দেশের মাটিতে তুরস্কের রাজনৈতিক প্রচার চালানোয় সহযোগিতা করতে পারে না। কারণ এতে নেদারল্যান্ডসের তুর্কী সংখ্যালঘুদের মধ্যে বিভক্তি সৃষ্টির আশঙ্কা আছে। ডাচ তুর্কীদের মধ্যে এরদোগানের সমর্থকরা যেমন আছে, তেমনি আছে বিরোধীরাও। ডাচ রাজনীতিকরাও চায় সরকার তুরস্কের প্রচার নিষিদ্ধ করুক। অস্ট্রিয়াও সংঘাত বেড়ে যাওয়া কিংবা অখ-তা বিনষ্ট হওয়ার কারণ দেখিয়ে তুরস্কের গণভোটের প্রচার নিষিদ্ধ করেছে। গত বছর তুরস্কে ব্যর্থ অভ্যুত্থান চেষ্টার পর দেশটির সরকার যেভাবে ধরপাকড় ও দমনাভিযান চালিয়েছে তাতে ইউরোপের অনেক দেশই উদ্বেগ প্রকাশ করেছিল। জার্মান চ্যান্সেলর এ্যাঙ্গেলা মেরকেলও সম্প্রতি তুরস্কের কড়া সমালোচনা করেছেন।
×