ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

সরকারকে বিশ্ব মানবাধিকার কমিশনের চিঠি

নির্দোষ ব্যক্তির নাম চার্জশীট থেকে বাদ দিন

প্রকাশিত: ০৪:৪৭, ১৩ মার্চ ২০১৭

নির্দোষ ব্যক্তির নাম চার্জশীট থেকে বাদ দিন

এইচএম এরশাদ, কক্সবাজার ॥ টেকনাফে এক নির্দোষ ব্যক্তিকে মামলার চার্জশীটভুক্ত আসামি করে হয়রানি করা হচ্ছে মর্মে বিশ্ব মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান পত্র পাঠিয়েছেন। যুক্তরাজ্য থেকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, এ্যাটর্নি জেনারেল ও কক্সবাজারের সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতসহ বিভিন্ন দফতরে এ পত্র প্রেরণ করা হয়েছে। সন্ত্রাস দমন আইনে বিজিবির দায়ের করা মামলার এজাহারভুক্ত ৮ আরএসও জঙ্গীর নাম চার্জশীট থেকে বাদ দিয়ে ঘটনায় সম্পৃক্ত নয়, এমন এক ব্যক্তির নাম অভিযোগপত্রে অন্তর্ভুক্ত করার বিষয় কেন্দ্র করে তোলপাড় চলছে কক্সবাজারে। টেকনাফের হ্নীলার মোহাম্মদ আলী ওরফে এম আলী মানবিক অধিকার ও অন্যায়ের প্রতিবাদ করায় তাকে সাজানো চার্জশীটভুক্ত করে হয়রানি করা হচ্ছে বলে বিশ্ব মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান জয় শর্মা পত্রে উল্লেখ করা হয়েছে। ওয়ার্ল্ড কমিশন অব হিউম্যান রাইটস চেয়ারম্যান আদালতের কাছে নিবেদন জানিয়ে বলেন, একজন ব্যক্তি গণতন্ত্র ও দেশের আইনকে সম্মান করে অন্যায়ের প্রতিবাদ করেছে। তার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগপত্র গ্রহণ করা হলে এক নির্দোষ মানুষের সঙ্গে অবিচার করা হবে। পত্রে সম্প্রতি লন্ডনে একটি আইনী কনফারেন্সে দেশের প্রধান বিচারপতির সঙ্গে সাক্ষাতের কথা উল্লেখ করে বাংলাদেশের আইন বিভাগ অতি উচ্চমানের এবং স্বাধীন বলে প্রশংসা করেন তিনি। মানবিকাধিকার ও অন্যায়ের প্রতিবাদ করায় পুলিশ কয়েক বছর ধরে মোহাম্মদ আলীকে নির্যাতন করছে উল্লেখ করে বিশ্ব মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান জয় শর্মা টেকনাফ থানা মামলার (নং-৮৮/১৬, জিআর-৪২৮/১৬) চার্জশীট থেকে তাকে অব্যাহতি দিতে নিবেদন জানান। প্রসঙ্গত, গত বছরের ৩০ জুলাই বিকেলে টেকনাফে শামলাপুর গ্রামে মৌলভী ছৈয়দ করিমের বাড়িতে পার্শ্ববর্তী দেশের (মিয়ানমার) নিষিদ্ধ জঙ্গী সংগঠনের কিছু নেতাকর্মীর সঙ্গে কয়েক ব্যক্তি (আরএসও) গোপন বৈঠক করছিল। তারা বাংলাদেশের অখ-তা, জননিরাপত্তা ও সার্বভৌমত্ব বিপন্ন, জনসাধারণের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টির উদ্দেশে হত্যা, গুরুতর জখম ও অপহরণসহ রাষ্ট্রের সম্পত্তির ক্ষতি সাধন তথা সন্ত্রাসী কার্যকলাপের জন্য গোপনে ষড়যন্ত্রমূলক ওই বৈঠকে মিলিত হয় বলে বাদী বিজিবি হাবিলদার বাবুল মিয়া মামলার এজাহারে উল্লেখ করেন। গোপন বৈঠক থেকে আরএসওর সাবেক নেতা হাফেজ ছলাহুল ইসলাম, মৌলভী ছৈয়দ করিম ও মোঃ ইব্রাহিমকে আটক করে যৌথবাহিনী। মামলায় ৮ পলাতক আসামির মধ্যে আরাকান বিদ্রোহী গ্রুপের (আরএসও) প্রথম সারির নেতা মাস্টার আয়ুবসহ ৬ চিহ্নিত জঙ্গীর নাম উল্লেখ থাকলেও তৎক্ষণাৎ তাদের পিতার নাম ও ঠিকানা উল্লেখ করতে পারেনি বিজিবি। তবে পরবর্তীতে তদন্ত কর্মকর্তার কাছে বাদী আসামিদের পিতার নাম ও ঠিকানা জমা দেন। এজাহারে পলাতক ওসব জঙ্গীর পূর্ণ ঠিকানা না থাকায় মামলা থেকে নিজেদের দায়মুক্ত করতে তখন থেকে মরিয়া হয়ে ওঠে রোহিঙ্গা জঙ্গীরা। শেষ পর্যন্ত রাষ্ট্রবিরোধী ষড়যন্ত্র (সন্ত্রাসবিরোধী আইন) মামলা থেকে রেহাই পেয়ে যায় তারা। এজাহারে নাম না থাকা সত্ত্বেও চার্জশীটভুক্ত আসামি করায় টেকনাফ থানার তৎকালীন ওসি আবদুল মজিদ, কবির হোসেন (ওসি তদন্ত)সহ একাধিক কর্মকর্তার বিরুদ্ধে আইজিপি এবং টেকনাফ বিজিবি ব্যাটালিয়ন অধিনায়ক বরাবরে অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগী এম আলী। এদিকে টেকনাফ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক সাংসদ অধ্যাপক মোঃ আলী এবং আওয়ামী লীগ নেতা হ্নীলা ইউপি চেয়ারম্যান এইচকে আনোয়ার জানান, হ্নীলা মৌলভী বাজারের কবির আহমদের ছেলে এম আলী আওয়ামী লীগ কর্মী এবং তার স্বভাব চরিত্র ভাল। নেতৃবৃন্দ আরএসও জঙ্গীদের গ্রেফতারের দাবি জানান। ওই মামলার তদন্ত কর্মকর্তা শেখ আশরাফুজ্জামান (ওসি তদন্ত) বলেন, এজাহারে এম আলীর নাম উল্লেখ না থাকলেও তদন্তে নাম আসায় তাকে চার্জশীটভুক্ত আসামি করা হয়েছে। সূত্র জানায়, রোহিঙ্গা সলিডারিটি অর্গানাইজেশনের (আরএসও) এক অংশের সভাপতি কুখ্যাত রোহিঙ্গা জঙ্গী মাস্টার মোঃ আয়ুব ১৯৯১ সাল থেকে বিশেষ মহলের সঙ্গে আঁতাত করে সন্ত্রাসী রোহিঙ্গাদের অস্ত্রের প্রশিক্ষণ দিয়ে আসছে।
×