ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

এক বছরে বন্ধের হার ৫.২৬ শতাংশ

সঙ্কুচিত হচ্ছে সাধারণ ব্যাংকের ইসলামী শাখা

প্রকাশিত: ০৪:১৭, ১৩ মার্চ ২০১৭

সঙ্কুচিত হচ্ছে সাধারণ ব্যাংকের ইসলামী শাখা

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ দেশে সাধারণ ব্যাংকের ইসলামী শাখার কার্যক্রম ধীরে ধীরে সঙ্কুচিত হচ্ছে। গত বছর ৯ মাসের ব্যবধানে সাধারণ বা কনভেনশনাল ব্যাংক তিনটি ইসলামী শাখা বন্ধ করে দিয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের এক প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে। ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এক বছরের ব্যবধানে কনভেনশনাল ব্যাংকে ইসলামী শাখা বন্ধের হার ৫ দশমিক ২৬ শতাংশ। দেশে বর্তমানে ২৫টি ব্যাংক ইসলামী ব্যাংকিং করছে, যার মধ্যে ৮টি পূর্ণাঙ্গ ইসলামী ব্যাংক এবং ১৭টি বাণিজ্যিক ব্যাংক সাধারণ ব্যাংকিংয়ের পাশাপাশি ইসলামী ব্যাংকিংও পরিচালনা করে। এর মধ্যে ২০১৬ সালের মার্চ মাসে ২১টি শাখায় ইসলামী ব্যাংকিং করত ৯টি কনভেনশনাল ব্যাংক। গত ডিসেম্বরে এ ব্যাংকগুলোতে ইসলামী শাখার সংখ্যা নেমে আসে ১৮টিতে। অর্থাৎ ৯ মাসের ব্যবধানে ৩টি ইসলামী শাখা বন্ধ করা হয়েছে। এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক শুভঙ্কর সাহা বলেন, ‘যারা পুরোপুরি ইসলামী ব্যাংকিং করছে, তারা খারাপ করছে না। তবে কনভেনশনাল ব্যাংকগুলো মুনাফা করতে না পেরে ইসলামী শাখা গুটিয়ে নিচ্ছে।’ বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ৯ মাসে কনভেনশনাল ব্যাংকের তিনটি ইসলামী শাখা বন্ধ হলেও পূর্ণাঙ্গ ইসলামী ব্যাংকগুলোর শাখা বেড়েছে। গত এক বছরের ব্যবধানে ৮ ব্যাংকের শাখা বেড়েছে ৮ দশমিক ৫ শতাংশ। এছাড়া কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০১৬ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত এ ৮ ব্যাংকে মোট আমানত রয়েছে ১ লাখ ৭৮ হাজার ৮৬১ কোটি টাকা। এছাড়া একই সময় পর্যন্ত এ ব্যাংকগুলো মোট বিনিয়োগ করেছে ১ লাখ ৬০ হাজার ৮৩১ কোটি টাকা। এ ৮ ব্যাংকের মাধ্যমে রেমিটেন্স এসেছে ৯ হাজার ৭৮ কোটি টাকা। বাংলাদেশ ব্যাংকের ওই প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত এক বছরে ইসলামী শাখায় কাজ করা ৬ দশমিক ১৮ শতাংশ ব্যাংক কর্মকর্তা চাকরি হারিয়েছেন। এক বছর আগে কনভেশনাল ব্যাংকের ইসলামী শাখায় কাজ করতেন ৪২১ জন। এখন সেখানে কাজ করেন ৩৯৫ জন। এক বছরের ব্যবধানে এসব শাখা থেকে ২৬ জন কর্মকর্তাকে সরিয়ে দেয়া হয়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্যানুযায়ী, ইসলামী ব্যাংকগুলোতেও রেমিটেন্স প্রবাহ মারাত্মকভাবে হ্রাস পেয়েছে। ২০১৫ সালের ডিসেম্বরে ৯ হাজার ৭৭৮ কোটি টাকার রেমিটেন্স এলেও ২০১৬ সালের ডিসেম্বর শেষে রেমিটেন্স এসেছে ৯ হাজার ১৬৯ কোটি টাকার। এক বছরের ব্যবধানে ৬০৯ কোটি টাকার রেমিটেন্স কমে গেছে। এর মধ্যে কনভেনশনাল ব্যাংকের ইসলামী শাখায় কমেছে ৬ দশমিক ৭৩ শতাংশ। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্যানুযায়ী, ইসলামী ধারার ব্যাংকগুলোতে মুনাফার প্রবৃদ্ধি ক্রমেই নেতিবাচক হচ্ছে। ২০১৫ সালের ডিসেম্বরে এ ব্যাংকগুলো নিট মুনাফা করেছিল ২ হাজার ৬২৪ কোটি টাকা। ২০১৬ সালের সেপ্টেম্বর শেষে এ ব্যাংকগুলো মুনাফা করেছে ১ হাজার ৬৬৪ কোটি টাকা। অর্থাৎ ৯ মাসের ব্যবধানে মুনাফা কমেছে ৯৬০ কোটি টাকা। এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গবর্নর ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘নানা কারণে কনভেনশনাল ব্যাংক নিজেরাই বিপদে আছে। রেমিটেন্সের অবস্থাও ভাল নয়। এ কারণে কনভেনশনাল ব্যাংকের ইসলামী শাখাগুলো হয়ত গুটিয়ে নিতে হচ্ছে।’ কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্যানুযায়ী, ২০১৬ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত বাংলাদেশের সরকারী-বেসরকারী ২৫টি ব্যাংক ১ হাজার ৯০টি শাখার মাধ্যমে ইসলামী ব্যাংকিং করেছে। এর মধ্যে ৮টি ব্যাংক তাদের ১ হাজার ৪৭টি শাখার মাধ্যমে পুরোপুরি ইসলামী ব্যাংকিং করেছে। এছাড়া ৯টি বাণিজ্যিক ব্যাংক সাধারণ ব্যাংকিংয়ের পাশাপাশি ১৮টি ইসলামী শাখা এবং ৮টি বাণিজ্যিক ব্যাংক সাধারণ ব্যাংকিংয়ের পাশাপাশি ২৫ ইসলামী উইন্ডোর মাধ্যমে ব্যাংকিং করেছে। যদিও এসব ব্যাংক চলছে সুদভিত্তিক ব্যাংক ব্যবস্থার জন্য প্রণীত ব্যাংক কোম্পানি আইন দিয়েই। বর্তমানে বাংলাদেশে যেসব ব্যাংক পূর্ণাঙ্গভাবে ইসলামী নামে কার্যক্রম চালাচ্ছে এগুলো হলো- ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড, আল-আরাফাহ্ ইসলামী ব্যাংক লিমিটেড, এক্সিম ব্যাংক লিমিটেড, সোস্যাল ইসলামী ব্যাংক লিমিটেড, শাহ্জালাল ইসলামী ব্যাংক লিমিটেড, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক লিমিটেড, ইউনিয়ন ব্যাংক লিমিটেড ও আইসিবি ইসলামিক ব্যাংক লিমিটেড। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০১৬ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত ইসলামী শাখাগুলোতে মোট আমানত রয়েছে ১ লাখ ৮৭ হাজার ৬৯৪ কোটি টাকা। এছাড়া একই সময় পর্যন্ত মোট বিনিয়োগ করেছে ১ লাখ ৬৮ হাজার ৯৫৭ কোটি টাকা।
×