ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

সুমন্ত গুপ্ত

পাট থেকে সূক্ষ্ম সুতা তৈরিতে বাংলাদেশের সাফল্য

প্রকাশিত: ০৬:০১, ১২ মার্চ ২০১৭

পাট থেকে সূক্ষ্ম সুতা তৈরিতে বাংলাদেশের সাফল্য

পাট থেকে সূক্ষ্ম সুতা তৈরিতে অভাবনীয় সাফল্য পেয়েছে বাংলাদেশের বিজ্ঞানীরা। পাশাপাশি পাটের তিনটি জিনোম সিকোয়েন্স উন্মোচনের আন্তর্জাতিক স্বীকৃতিও অর্জন করেছে বাংলাদেশ। তোষা ও দেশী পাটের জীবনরহস্য উন্মোচনের সাড়ে তিন বছরের মধ্যে বাংলাদেশের বিজ্ঞানীদের গবেষণার এই ফলাফল সম্প্রতি বিশ্বখ্যাত জার্নাল নেচার প্ল্যান্টে প্রকাশিত হয়। যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল সেন্টার ফর বায়োটেকনোলজি ইনফরমেশন (এনসিবিআই) জেনোম তিনটির কোড নম্বরও দিয়েছে। সঙ্গত কারণেই বাংলাদেশের এই সাফল্য দেশে-বিদেশেও আলোচিত হচ্ছে। এর ফলে বাংলাদেশ ও বিশ্বের তৈরি পোশাকের উপযোগী পাটের আঁশ তৈরি করার বিজ্ঞানটি বাংলাদেশের দখলে এলো। পাট একসময় ছিল দেশের সবচেয়ে অর্থকরী ফসল। দেশের রফতানি বাণিজ্যের বড় অংশজুড়ে ছিল পাট। দেশের শিল্পশ্রমিকদের সিংহভাগ নিয়োজিত ছিল পাটশিল্পে। পাট ও তুলার আশের মধ্যে মূল পার্থক্য তৈরি করে লিগনিন নামে এক ধরনের রাসায়নিক। পাটের আঁশে এটি বেশি থাকায় তা তুলার আঁশের চেয়ে মোটা হয়ে থাকে। ফলে পাটের আঁশের তৈরি সুতা দৈনিক ব্যবহার্য পোশাক বা তৈরি পোশাকের কাপড় তৈরিতে ব্যবহার করা হয় না। পাটের জিনগত বৈশিষ্ট্যের গঠন ও বুনন সম্পর্কে বাংলাদেশের বিজ্ঞানীদের ওই নতুন গবেষণায় বিস্তারিত তথ্য পাওয়া গেছে। ফলে এখন জিনগত বৈশিষ্ট্যে কোন ধরনের পরিবর্তন আনলে পাটের আঁশ তুলার মতো সূক্ষ্ম হবে, তা জানা গেছে। নতুন ধরনের পাটের জাত উদ্ভাবনও অনেক সহজ হয়ে গেল। আর এর মাধ্যমে দেশের সাফল্যের মুকুটে আরেকটি পালক যুক্ত হলো নিঃসন্দেহে। যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী বাংলাদেশী বিজ্ঞানী মাকসুদুল আলমের নেতৃত্বে বাংলাদেশ পাট গবেষণা ইনস্টিটিউটের একদল বিজ্ঞানী ২০১০ সালে তোষা পাট, ২০১২ সালে ছত্রাক এবং ২০১৩ সালে দেশী পাটের জীবনরহস্য উন্মোচন করেন। ২০১৪ সালের ডিসেম্বরে মাকসুদুল আলম মারা যাওয়ার পর ওই গবেষণার ভবিষ্যৎ নিয়ে সংশয় তৈরি হয়। পাট গবেষণা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক মনজুরুল আলমের নেতৃত্বে গবেষণার পরবর্তী ধাপ শুরু হওয়ার পর এটাই সবচেয়ে বড় সাফল্য বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। বিশ্বে মোট ১০০ প্রজাতির পাটজাতীয় প্রাকৃতিক তন্তুর বৃক্ষ রয়েছে। এর মধ্যে বিশ্বে ব্যবহৃত প্রাকৃতিক আঁশের ৮০ শতাংশ আসে পাট থেকে। বিশ্বে উৎপাদিত পাটের আর্থিক মূল্য ২৩০ কোটি ডলার। বাস্তবতা হলো জলবায়ুগত কারণে আমাদের দেশে যথেষ্ট পরিমাণ পাটের আবাদ হয়ে থাকে। আবার উৎপাদিত পাটের বিপণন নিয়েও কৃষকরা নানা সময়ে সমস্যার মুখোমুখি হন। সুতরাং পাট থেকে সূক্ষ্ম সুতা তৈরির বিষয়টি বেগবান হলে, দেশের কৃষকরা পাট উৎপাদনেও আরও আগ্রহী হবে যা একই সঙ্গে আমাদের কৃষি এবং শিল্প খাতকে সমৃদ্ধ করবে।
×