ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

ব্যক্তি উদ্যোগে সংগ্রহ আড়াই হাজার প্রত্নসম্পদ মহাস্থান জাদুঘরে

প্রকাশিত: ০৫:৫৫, ১২ মার্চ ২০১৭

ব্যক্তি উদ্যোগে সংগ্রহ আড়াই হাজার প্রত্নসম্পদ মহাস্থান জাদুঘরে

সমুদ্র হক ॥ প্রায় ৪২ বছর ধরে মহাস্থানগড়ের আশপাশে ও পুরাতন বাড়ির মাটির উপর ও নিচে থেকে সংগ্রহ করা আড়াই হাজারেরও বেশি প্রত্নসামগ্রী শেষ পর্যন্ত মহাস্থান জাদুঘরের কাছে হস্তান্তর করেছেন বগুড়ার সবুজ নার্সারির মালিক অধ্যাপক আব্দুল মান্নান। শনিবার বিকেলে মহাস্থান জাদুঘর সংলগ্ন মাঠে সামিয়ানা টাঙ্গিয়ে তার নিচে লম্বা টেবিলে প্রত্নসামগ্রীগুলো সাজিয়ে তা হস্তান্তর করেন প্রতœতত্ত্ব অধিদফতরের মহাপরিচালক আলতাফ হোসেনের কাছে। এ সময় উপস্থিত ছিলেন প্রত্নতত্ত্ব অধিদফতরের রাজশাহী ও রংপুর বিভাগের আঞ্চলিক পরিচালক নাহিদ সুলতানা, মহাস্থান জাদুঘরের কাস্টডিয়ান মজিবর রহমান, প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের আলোকচিত্রী আবুল কালাম আজাদ প্রমুখ। আলতাফ হোসেন বলেন, প্রত্নসামগ্রীগুলো মহাস্থান জাদুঘরে প্রদর্শনের জন্য উন্মুক্ত করা হবে। যার কাছ থেকে এগুলো পাওয়া গেল, প্রত্ন বর্ণনায় তার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা হবে। গোকুল এলাকার সবুঝ নার্সারির স্বত্বাধিকারী অধ্যাপক আব্দুল মান্নান স্কুলজীবনে পূর্বসূরিদের কাছ থেকে পু-্রনগরী খ্যাত মহাস্থানগড়ের গল্প শুনে সংগ্রহে আগ্রহী হন। ১৯৭৬ সাল থেকে মহাস্থানগড়ের আশপাশে এবং বিভিন্ন এলাকায় প্রাচীনসামগ্রীর সন্ধান করতে থাকেন। খোঁজ পেলেই সেখানে যেতেন। অনেক কৃষকের বাড়ি থেকেও তিনি পুরাতন জিনিস পেয়েছেন। কোন কৃষক মাটি কাটার কাজ করার সময় যা পেয়েছেন তুলে দিয়েছেন তার হাতে। কোন প্রাচীন বাড়িতে গিয়েও তিনি পেয়েছেন প্রতœ সামগ্রী। এভাবে তিনি সংগ্রহ করেন প্রাচীন পাথর, প্রবাল, মুক্তোর মালা নূপুরের মতো কয়েক ধরনের খাওরা, পায়ের গয়না, কোমরের বিছা, শিশুদের দুধ খাওয়ার চেরাগ আকৃতির ফিডার, লকেট। প্রাচীন জমিদার বাড়ি থেকে সংগ্রহ করেন নিত্য ব্যবহার্য সেদিনের তৈজসপত্র, নিম কাঠের খাট, ময়ূর, পাখি, বাঘ-সিংহ, ঘোড়া ও মানুষের আকৃতির খোদাই করা প্রায় এক হাজার বছরের পুরনো পাঁচটি কাঠের দরজা। কয়েকটি শাল কাঠের। এগুলো রাজা বাদশাদের শোবার ঘরে থাকতো। আরও আছে, কারুকার্যখঁচিত পানের কৌটা, রানীর সিঁদুরের কৌটা, রাজাদের হুকো, মাটির ও পাথরের থালাবাটি, মন্দিরের জপমালা, তান্ত্রিকদের বিভিন্ন ধরনের মালা, নানা রঙের পাথর যা গুপ্ত পাল সেন আমলের, মাটি ও ধাতব মুদ্রা, প্রাচীন আমলেন নানা মুদ্রাসহ প্রায় ২ হাজার ৬শ’ প্রতœ সম্পদ। প্রতœতত্ত্ব অধিদফতরের আঞ্চলিক পরিচালক নাহিদ সুলতানা বলেন, এই প্রতœ সম্পদগুলো খ্রিস্টপূর্ব দুই শতক থেকে ব্রিটিশ শাসনামল পর্যন্ত। এর মধ্যে মৌর্য গুপ্ত পাল শুঙ্গা শশাঙ্ক আমলের সম্পদ আছে। প্রতœ সম্পদগুলো মহাস্থান জাদুঘরে বর্ণনাসহ রাখা হবে। এর আগে প্রত্ন সম্পদগুলোর ইতিহাস খুঁজে দেখা হবে। পরে তা সংক্ষিপ্ত আকারে তুল ধরা হবে। সংগ্রাহক অধ্যাপক আব্দুল মান্নান বগুড়া শিবগঞ্জ এমএইচ ডিগ্রী কলেজের সাবেক ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ। প্রতœ সংগ্রহের পাশাপাশি তিনি নার্সারি গড়ে তোলেন। যেখানে দুর্লভ কিছু গাছের চারা আছে। ৪২ বছর ধরে এই সম্পদগুলো কেন নিজের কাছে রাখলেন এই বিষয়ে তিনি বলেন প্রতœতত্ত্ব অধিদফতরের কাছ থেকে অনুমতি নিয়েই তিনি এগুলো সংগ্রহে রাখেন। প্রতœ সম্পদ অধিদফতরের কর্মকর্তা বলেন কিছুদিন আগে অধ্যাপক আব্দুল মান্নান তাকে সংগ্রহের বিষয়টি জানান। অধ্যাপক মান্নান তখন এগুলো মহাস্থান জাদুঘরে হস্তান্তরের ইচ্ছা ব্যক্ত করেন। অধ্যাপক মান্নান বলেন, ইচ্ছা ছিল নিজেই একটি প্রতœ জাদুঘর গড়ে তুলবেন। এ জন্য কয়েক বছর ধরে সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়সহ বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ে কয়েক দফায় দরখাস্ত করে অনুমতি চেয়েছেন। কোন মন্ত্রণালয়ই ব্যক্তি উদ্যোগে প্রতœ জাদুঘর গড়ে তোলার অনুমতি দেয়নি।
×