ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

ব্রাজিলে রাষ্ট্রদূত মিজারুল কায়েস আর নেই

প্রকাশিত: ০৫:৩৮, ১২ মার্চ ২০১৭

ব্রাজিলে রাষ্ট্রদূত মিজারুল কায়েস আর নেই

কূটনৈতিক রিপোর্টার ॥ ব্রাজিলে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত ও সাবেক পররাষ্ট্র সচিব মোহাম্মদ মিজারুল কায়েস আর নেই। ব্রাজিলের রাজধানী ব্রাসিলিয়ার একটি হাসপাতালে শনিবার ভোর ছয়টায় তিনি ইন্তেকাল করেছেন (ইন্নালিল্লাহি... রাজিউন)। মিজারুল কায়েসের মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আগামী সোমবার তার মরদেহ ঢাকায় আসবে বলে আশা করা হচ্ছে। মিজারুল কায়েস ব্রাজিলে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূতের দায়িত্ব পালনকালে গুরুতর অসুস্থ হয়ে মাসখানেক ধরে ব্রাজিলের ব্রাসিলিয়া হাসপাতালে আইসিইউতে ছিলেন। কিশোরগঞ্জের সন্তান মিজারুলের বয়স হয়েছিল ৫৭ বছর। তিনি স্ত্রী নাইমা চৌধুরী ও দুই মেয়ে রেখে গেছেন। ২০০৯ সাল থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত পররাষ্ট্র সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন মিজারুল কায়েস। এর আগে ২০১২ সালে শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যা ও রক্তে ইনফেকশনের মতো প্রাণঘাতী সেপটেসেমিয়ায় আক্রান্ত হয়েছিলেন। সিঙ্গাপুরের মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়ে সে সময় সুস্থ হয়েছিলেন তিনি। ব্রাজিলে যাওয়ার আগে মিজারুল বাংলাদেশের লন্ডন মিশনে হাইকমিশনারের দায়িত্ব পালন করেন। সেখান থেকে তাকে ব্রাজিলে পাঠানো হয়েছিল। শনিবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, মিজারুল কায়েস ব্রাজিলের স্থানীয় সময় শুক্রবার রাত নয়টায় দেশটির ব্রাসিলিয়া হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেছেন। বাংলাদেশের স্থানীয় সময় অনুযায়ী তার মৃত্যু হয়েছে শনিবার ভোর ছয়টায়। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, মিজারুল কায়েসের মরদেহ ঢাকায় আনার প্রস্তুতি চলছে। ব্রাজিলে আনুষ্ঠানিকতা শেষে তার মরদেহ ঢাকায় আনা হবে। সোমবার নাগাদ তার লাশ ঢাকায় পৌঁছবে বলে আশা করা হচ্ছে। মালদ্বীপ ও রাশিয়ায় রাষ্ট্রদূত হিসেবে দায়িত্ব পালনের পর ২০০৯ সালের জুলাইয়ে পররাষ্ট্র সচিবের দায়িত্বে এসেছিলেন মিজারুল। তিন বছর পর তিনি হাইকমিশনারের দায়িত্ব নিয়ে লন্ডন গিয়েছিলেন। সেখানে ২০১৪ সাল পর্যন্ত ছিলেন তিনি। যুক্তরাজ্য থেকে তিনি ব্রাজিলের রাষ্ট্রদূত হিসেবে যোগ দেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও যুক্তরাষ্ট্রের হার্ভার্ড কেনেডি স্কুল অব গবর্নমেন্টে পড়াশোনা করা মিজারুল বিসিএস ১৯৮২ ব্যাচের কর্মকর্তা। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে গুরুত্বপূর্ণ নানা পদে দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয় ও ইনস্টিটিউটেও তিনি পড়িয়েছিলেন। শিল্পকলার একজন সমঝদার ব্যক্তি হিসেবেও খ্যাতি রয়েছে মিজারুলের, চিত্রকর্ম সংগ্রহে তার ছিল বিশেষ ঝোঁক। বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্র প্রতিষ্ঠায় অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন তিনি। ঢাকায় অনুষ্ঠিত বিভিন্ন চলচ্চিত্র ও চিত্র প্রদর্শনীতে বিচারকের ভূমিকা পালন করেছিলেন এই কূটনীতিক। ইন্টারন্যাশনাল থিয়েটার ইনস্টিটিউটের বাংলাদেশ চ্যাপ্টারের সদস্য ছিলেন তিনি। কূটনীতিক মোহাম্মদ মিজারুল কায়েসের মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছেন রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শনিবার রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী পৃথক বার্তায় শোক প্রকাশ করেন। রাষ্ট্রপতি তার শোকবার্তায় বলেন, মিজারুল কায়েসের মৃত্যুতে দেশ একজন পেশাদার কূটনীতিককে হারাল। মিজারুলের বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করে তার শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতিও গভীর সমবেদনা জানান রাষ্ট্রপতি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কূটনীতিক মিজারুল কায়েসের মৃত্যুতে শোক ও তার শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছেন। জাতীয় সংসদের স্পীকার ও সিপিএ নির্বাহী কমিটির চেয়ারপার্সন ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী শোকবার্তায় বলেন, মিজারুল কায়েস ছিলেন একজন অভিজ্ঞ কূটনীতিক। তার মৃত্যু বাংলাদেশের জন্য এক অপূরণীয় ক্ষতি। এছাড়াও বাংলাদেশ জাতীয় সংসদের ডেপুটি স্পীকার মোঃ ফজলে রাব্বী মিয়া এবং চীফ হুইপ আ স ম ফিরোজ সাবেক পররাষ্ট্র সচিব ও ব্রাজিলে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মিজারুল কায়েসের মৃত্যুতে গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন। পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী, প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম ও সচিব এম শহীদুল হকও গভীর শোক প্রকাশ করে শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা প্রকাশ করেছেন। তারা মিজারুল কায়েসের বর্ণাঢ্য ও দীর্ঘ কর্মময় জীবনে দেশ ও জাতির প্রতি তার অবদানের কথা স্মরণ করেন। একই সঙ্গে তার বিদেহী আত্মার শান্তি কামনা করেন। এছাড়া ভূমিমন্ত্রী শামসুর রহমান শরীফ, ভূমি প্রতিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী, ভূমি মন্ত্রণালয়ের সিনিয়ার সচিব মেছবাহ্ উল আলম শোক প্রকাশ করেছেন। কূটনৈতিক প্রতিবেদকদের সংগঠন ডিপ্লোম্যাটিক করেসপন্ডেন্ট এ্যাসোসিয়েশন, বাংলাদেশ (ডিক্যাব) সাবেক সচিব মিজারুলের মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছে। ডিক্যাব সভাপতি রেজাউল করিম লোটাস ও সাধারণ সম্পাদক পান্থ রহমান এক শোকবার্তায় মিজারুল কায়েসের আত্মার মাগফিরাত কামনা ও শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান।
×