ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

দেশে ৭ বছরে ইলিশের উৎপাদন বেড়েছে ৯৬ লাখ মেট্রিক টন

প্রকাশিত: ০৫:৩৩, ১২ মার্চ ২০১৭

দেশে ৭ বছরে ইলিশের উৎপাদন বেড়েছে ৯৬ লাখ মেট্রিক টন

স্টাফ রিপোর্টার ॥ মাত্র ৭ বছরের ব্যবধানে দেশে ইলিশের উৎপাদন বেড়েছে ৯৬ লাখ মেট্রিক টন। সরকারের নেয়া নানামুখী পদক্ষেপ গ্রহণের ফলে ইলিশের উৎপাদন এতটা বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে এটি এখনও কাক্সিক্ষত উৎপাদন নয়। আর কাক্সিক্ষত উৎপাদন না পাওয়ার অন্যতম প্রধান কারণ কারেন্ট ও বেহুন্দি জালসহ অন্যান্য অবৈধ জাল দিয়ে নির্বিচারে জাটকা নিধন। নির্বিচারে জাটকা নিধন প্রতিরোধে এসব জাল পোড়াতে মৎস্য ও পাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় ৯শ’ কোটি টাকার প্রকল্প হাতে নিয়েছে। শনিবার দুপুরে রাজধানীর মৎস্য ভবনে জাটকা সংরক্ষণ সপ্তাহ-২০১৭ উদযাপন উপলক্ষে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী মোহাম্মদ ছায়েদুল হক। জাটকা সংরক্ষণ সপ্তাহের এ বছরের প্রতিপাদ্য ‘জাটকা ইলিশ ধরবো না, দেশের ক্ষতি করবো না’। প্রতিবছরের মতো এবারও ১১ মার্চ থেকে ১৭ মার্চ পর্যন্ত সপ্তাহটি উদযাপন করা হচ্ছে। এ বছর ঢাকার বাইরে বরগুনা জেলার আমতলী উপজেলার আমতলী সরকারী কলেজ প্রাঙ্গণে জাটকা সংরক্ষণ সপ্তাহের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন ও পায়রা নদীতে নৌ র‌্যালি অনুষ্ঠিত হবে। সংবাদ সম্মেলনে মন্ত্রী বলেন, খুব শীঘ্রই সংসদে ৯শ’ কোটি টাকার প্রকল্পটি অনুমোদন হয়ে যাবে। তারপর সারাদেশে ইলিশ রক্ষায় জাল পোড়াতে অভিযান চালানো হবে। তিনি বলেন, দেশে মোট মৎস্য উৎপাদনের প্রায় ১১ শতাংশ ইলিশ। জিডিপিতে ইলিশের অবদান প্রায় ১ শতাংশ। উপকূলীয় মৎস্যজীবী সম্প্রদায়ের প্রায় ৫ লাখ লোক ইলিশ আহরণে সরাসরি নিয়োজিত। এছাড়া ২০-২৫ লাখ লোক পরিবহন, বিক্রয়, জাল ও নৌকা তৈরি, বরফ উৎপাদন, প্রক্রিয়াজাতকরণ, রফতানি ইত্যাদি কাজের সঙ্গে প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে জড়িত। সরকারের নানামুখী পদক্ষেপের কারণে দেশে ইলিশের উৎপাদন বেড়েছে উল্লেখ তিনি আরও বলেন, বিগত ২০০৮-০৯ অর্থবছরে যেখানে ইলিশের উৎপাদন ২ কোটি ৯৯ লাখ মেট্রিক টন, সেখানে ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ইলিশের উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়ে ৩ কোটি ৯৫ লাখ মেট্রিক টনে উন্নীত হয়েছে। প্রয়োজনীয়তার নিরিখে বিদ্যমান আইন সংশোধন করে জাটকা আহরণ নিষিদ্ধের সময় ১ মাস বাড়িয়ে নবেম্বর থেকে জুন পর্যন্ত এবং জাটকার দৈর্ঘ্য ২৩ সেন্টিমিটার হতে বৃদ্ধি করে ২৫ সেন্টিমিটারে উন্নীত করা হয়েছে। কেবল জাটকা রক্ষা নয়, মা ইলিশ সুরক্ষা আইনটি সঠিকভাবে সংশোধনের ফলে মা ইলিশ নিরাপদে ডিম পাড়তে পেরেছে এবং তা মেঘনা থেকে বর্তমানে পদ্মা, যমুনা, বহ্মপুত্র, সুরমায় বিস্তার লাভ করেছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি। ছায়েদুল হক বলেন, ইলিশ রক্ষা করতে চলতি বছরের জানুয়ারিতে বরিশাল, ভোলা, বরগুনা, পটুয়াখালী ও নোয়াখালীতে আইন রক্ষাকারী সংস্থার সহায়তায় সম্মিলিত বিশেষ অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে। এ অভিযানে ৫ জেলায় মোট ২৬৫টি মোবাইল কোর্ট ও ৪৮৯টি অভিযান পরিচালনা করে ৮৩৩টি বেহুন্দি জাল, ৩০.৬৯ লাখ মিটার কারেন্ট জাল ও ৬৮৮টি অন্য জাল জব্দ করা হয়েছে। সেই সঙ্গে ৪ লাখ ১৩ হাজার টাকা জরিমানা করে ৪৪ জনকে জেল দেয়া হয়েছে। সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, আপাতত ইলিশ রফতানির কোন চিন্তা আমাদের নেই। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মন্ত্রিপরিষদ বৈঠকে আমাকে বলেছিলেন ইলিশ রফতানি করতে। কিন্তু আমি বঙ্গবন্ধু কন্যাকে বলেছি দেশের মানুষ আগে তৃপ্তিসহকারে ইলিশ খাক। পরে উৎপাদন আরও বৃদ্ধি হলে রফতানির কথা ভাবা যাবে। তিনি আরও বলেন, মাছ উৎপাদনে বাংলাদেশ বিশ্বে চতুর্থ। বঙ্গবন্ধু আমাদের দিয়েছেন সবুজ বাংলা। আর তার কন্যা শেখ হাসিনা আমাদের দিয়েছেন নীল বাংলা। বঙ্গোপসাগরের বিশাল নীল জলরাশি আমাদের আরেকটি মৎস্য ভা-ার। এই মৎস্য ভা-ার যুগ যুগ ধরে টিকে থাকবে। ওই সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব মোঃ মাকছুদুল হাসান খান, মৎস্য অধিদফতরের মহাপরিচালক সৈয়দ আরিফ আজাদ ও বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক ড. সৈয়দ ইয়াহিয়া মাহমুদ।
×