ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

মোঃ মনোয়ারুল হক

নবম-দশম শ্রেণির কৃষি শিক্ষা

প্রকাশিত: ০৪:০৬, ১২ মার্চ ২০১৭

নবম-দশম শ্রেণির কৃষি শিক্ষা

বি.এস.এস,বি-এড (কৃষি ডিপ্লোমা) সিনিয়র শিক্ষক কানকিরহাট বহুমূখী উচ্চ বিদ্যালয়, সেনবাগ, নোয়াখালী। পরীক্ষকঃ মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড, কুমিল্লা। মোবাইলঃ ০১৭১৮৮৬৩০৪৫ প্রথম পরিচ্ছেদ ॥ ফসল চাষ পদ্ধতি (ধান চাষ) বিস্তীর্ণ সমতল প্রান্তর, গ্রীষ্মকালে পর্যাপ্ত বৃষ্টিপাত আর আদ্র আবহাওয়ায় গড়া আমাদের এ বাংলাদেশ। এ প্রকৃতি ও জলবায়ু ধান চাষাবাদের জন্য খুবই উপযোগী। সঙ্গত কারণেই ধান এদেশের অতি প্রাচীনতম ফসল। বাংলাদেশ পৃথিবীর চতুর্থ বৃহত্তম ধান উৎপাদনকারী দেশ। জমি নির্বাচনঃ বাংলাদেশে দানাজাতীয় ফসলের মধ্যে ধানের চাষ ও উৎপাদন সবচেয়ে বেশি। কারণ এদেশের মানুষের প্রধান খাদ্যশস্য হলো ভাত। ধানের ফলন সব জমিতে ভালো হয় না। মাঝারি নিচু ও নিচু জমিতে ধানের ফলন বেশি ভাল হয়। মাঝারি উঁচু জমিতেও ধান চাষ করা হয়। এঁটেল ও পলি দোআঁশ মাটি ধান চাষের জন্য উপযোগী। ধানের জাতসমূহঃ বাংলাদেশে তিন জাতের ধান আছে। যথা- ক) স্থানীয় জাতঃ টেপি, গিরবি, দুধসর, লতিশাইল। খ) স্থানীয় উন্নত জাতঃ কটকতারা, কালিজিরা, হাসিকলমি, নাইজার শাইল, বিনাশাইল ইত্যাদি। গ) উচ্চফলনশীল (উফশী) জাতঃ বাংলাদেশে অনেক জমিতে উফশী (উচ্চফলনশীল) ধানেরত চাষ করা হয়ে থাকে। উফশী ধানের কতগুলো সাধারণ জাত থাকে। যেমন- ১. গাছ মজবুত এবং পাতা খাড়া। ২. শীষের ধান পেকে গেলেও গাছ সবুজ থাকে। ৩.গাছ খাটো ও হেলে পড়ে না। ৪.খড়ের চেয়ে ধানের উৎপাদন বেশি। ৫. পোকা ও রোগের আক্রমণ কম হয়। ৬.অধিক কুশি গজায়। ৭. সার গ্রহণক্ষমতা অধিক এবং ফলন বেশি। নিম্নে তিন মৌসুমের অনুমোদিত জাতগুলোর সংখ্যা ও কিছু জাতের নাম উল্লেখ করা হলোঃ ক) আউশ মৌসুমের জাতঃ শুধু আউশ মৌসুমেই চাষ করা হয় এরুপ জাত হলো ৮ টি। এদের মধ্যে দুইটি হলো বিআর ২০ (নিজামী), বিআর ২১ (নিয়ামত)। এ জাতগুলো আউশ মৌসুমে বপন ও রোপণ দুইভাবে আবাদ করা যায়। এ মৌসুমে বীজ বপনের উপযুক্ত সময় ১৫-৩০ শে চৈত্র এবং চারা রোপনের জন্য চারার বয়স হবে ২০-২৫ দিন। খ) আমন মৌসুমের জাতঃ শুধু আমন মৌসুমেই চাষ করা হয় এরুপ জাত হলো ২৭ টি। এদের কয়েকটি হলো বিআর৫ (দুলাভোগ), বিআর১১ (মুক্তা)। বিআর২২ (কিরণ), ব্রি ধান ৫৬, ব্রি ধান ৫৭, ব্রি ধান ৬২ ইত্যাদি। সবগুল জাতই রোপণ পদ্ধতিতে চাষ করা হয় এবং রোপনের জন্য চারার বয়স হতে হবে ২৫-৩০ দিন। গ) বোরো মৌসুমের জাতঃ শুধু বোরো মৌসুমেই চাষ করা হয় এরুপ জাত হলো ১৬ টি। এদের কয়েকটি হলো বিআর১৮ (শাহজালাল) ব্রি ধান ২৮, ব্রি ধান ২৯, ব্রি ধান ৪৫, ব্রি ধান ৫০ (বাংলামতি) ব্রি হাইব্রিড ধান১, ব্রি হাইব্রিড ধান২, ব্রি হাইব্রিড ধান৩ ইত্যাদি। রোপনের জন্য চারার বয়স হতে হবে ৩৫-৪৫ দিন। বীজ বাছাইঃ কমপক্ষে শতকরা ৮০ ভাগ বীজ গজায় এরুপ পরিষ্কার, সুস্থ, পুষ্ট বীজ বীজতলায় বপনের জন্য বাছাই করতে হবে। নিম্নবর্ণিত পদ্ধতিতে বীজ বাছাই করা হয়ঃ প্রথমে দশ লিটার পরিষ্কার পানিতে ৩৭৫ মি: ইউরিয়া সার মিশিয়ে প্রাপ্ত দ্রবণে ১০ কেজি বীজ ছেড়ে হাত দিয়ে নেড়ে চেড়ে দিলে পুষ্ট বীজ ডুবে নিচে জমা হবে এবং অপুষ্ট ও হালকা বীজগুলো পানির উপরে ভেসে উঠবে। হাত বা চালনি দিয়ে ভাসমান বীজগুলো সরিয়ে নিলেই পানির নীচ থেকে ভালো বীজ পাওয়া যায়। এ বীজগুলো পুনরায় পরিষ্কার পানিতে ৩-৪ বার ধুয়ে নিতে হবে। এক্ষেত্রে ইউরিয়া মেশানো পানি বীজতলায় সার হিসেবে ব্যবহার করা যায়। বীজ শোধন ও জাগ দেওয়াঃ বাছাইকৃত বীজ দাগমুক্ত ও পুষ্ট হলে সাধারণভাবে শোধন না করলেও চলে। তবে শোধনের জন্য ৫২-৫৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস (হাতে সহনীয়) তাপমাত্রার গরম পানিতে ১৫ মিনিট বীজ ডুবিয়ে রাখলে জীবানুমুক্ত হয়। এ ছাড়া প্রতি কেজি ধান বীজ ৩০ গ্রাম কার্বক্সিল (১৭.৫%) + থিরাম (১৭.৫%) দ্বারাও শোধন করা যায়। শোধনকৃত বীজ বাঁশের টুকরি বা ড্রামে ২-৩ স্তর শুকানো খড় বিছিয়ে তার উপর বীজের ব্যাগ রেখে পুনরায় ২-৩ স্তর শুকানো খড় বা কচুপাতা দিয়ে ঢেকে ভালোভাবে চেপে তার উপর কোনো ভারী জিনিস দিয়ে চাপ দিয়ে রাখতে হবে। এভাবে জাগ দিলে আউশ ও আমন মৌসুমের জন্য ৪৮ ঘণ্টা বা দুই দিনে, বোরো মৌসুমের জন্য ৭২ ঘণ্টা বা তিন দিনে ভালো বীজের অংকুর বের হবে এবং বীজতলায় বপনের জন্য উপযুক্ত হবে।
×