ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

অমীমাংসিত যানজট সমস্যা

প্রকাশিত: ০৩:৪১, ১২ মার্চ ২০১৭

অমীমাংসিত যানজট সমস্যা

ঢাকার যানজট নিয়ে প্রতিনিয়ত ক্ষোভ বিরক্তি ও হতাশার কথা শোনা যায়। নতুন নতুন পরিকল্পনাও চলে এই মহাসমস্যা নিরসনের। কিন্তু বাস্তবে যানজট কমার কোন লক্ষণ নেই! বরং তা ক্রমশ বেড়েই চলেছে। ঢাকাবাসী কোথাও কোন আশার আলো দেখতে পাচ্ছেন না। কোন ফর্মুলাই সত্যিকারের কাজে আসছে না। সোজা হিসেবে নির্দিষ্ট পরিমাণ সড়কে মাত্রাতিরিক্ত যান চলাচল করলে এবং সেই সড়ক ব্যবস্থাপনায় ত্রুটি থাকলে যানজট থাকবেই। বরং যানজট যাতে সহনীয় মাত্রায় নিয়ে আসা যায়, সে লক্ষ্যেই নানা পরিকল্পনা গ্রহণ করা দরকার। কিছু কিছু গ্রহণ করা হয়ও বটে, কিন্তু পরিস্থিতির একচুল পরিমাণ উন্নতিও দৃশ্যমান হয়ে ওঠে না। কর্মদিবস কিংবা ছুটির দিনÑ রাজধানীর যানজটের জন্য প্রতিদিনই সমান। অবধারিতভাবে বহাল থাকে দুঃসহ যানজট। এমনকি মধ্যরাতেও কোন কোন প্রধান সড়কে যানজট লেগে যায়! আশঙ্কা করি, আগামী দুই দশকে দ্বিগুণ হবে যানজটের তীব্রতা, যানবাহনের গতি নামবে অর্ধেকে। আগামী ২০ বছরে ঢাকার জনসংখ্যা প্রায় ৬৪ শতাংশ বাড়বে। পাল্লা দিয়ে বাড়বে যানবাহনের চাহিদা ও সংখ্যা। নানা কাজে নগরবাসীর দৈনিক যাতায়াত (ট্রিপ) প্রায় ৭১ শতাংশ বাড়বে। কিন্তু গণপরিবহন ব্যবস্থায় নজর না দেয়ায় ব্যক্তিগত গাড়ির ওপর নির্ভরতা বাড়বে বলেও দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হতে হয়। ফলস্বরূপ তখন ঢাকার যানজটের তীব্রতা হবে দ্বিগুণ এবং যানবাহনের গতি অর্ধেকে নেমে আসবে। দুই দশক পরের ঢাকার এমন আশঙ্কাজনক ছবি উঠে এসেছে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষেরই (রাজউক) প্রতিবেদনে। ঢাকার অপরিকল্পিত উন্নয়নজনিত সমস্যা নিরূপণ ও সম্ভাব্য সমাধানের পথনির্দেশ করতে সংস্থাটি ‘ঢাকা স্ট্রাকচার প্ল্যান’ শীর্ষক পরিকল্পনা প্রণয়নের উদ্যোগ নিয়েছে। এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় সমীক্ষার জন্য চারটি পরামর্শক সংস্থাকে নিয়োগ দেয় রাজউক। যৌথ সমীক্ষার তথ্য মতে, ঢাকার জনসংখ্যা বর্তমানে ১ কোটি ৫৯ লাখ। ২০৩৫ সালে এ শহরের জনসংখ্যা হবে ২ কোটি ৬০ লাখ। মানুষের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে যানবাহনের সংখ্যাও বাড়বে। বর্তমানে ঢাকায় মোট যানবাহনের সংখ্যা ৩ লাখ ৮৩ হাজার ৩০০। ২০৩৫ সালে তা বেড়ে দাঁড়াবে ৯ লাখ ১৯ হাজারে। এর মধ্যে ব্যক্তিগত গাড়ি থাকবে ৭ লাখ ৯৮ হাজার ৩০০। বর্তমানে এ ধরনের যানবাহন রয়েছে ৩ লাখ ১২ হাজার ১৫০টি। গাড়ির সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় সড়কের ওপর চাপ বাড়বে। ফলে অর্ধেকে নেমে আসবে গাড়ির গতি। এমনিতেই ঢাকার রাস্তায় গাড়ির গতির এখন করুণ অবস্থা। যান অবরুদ্ধতা (ট্রাফিক স্নার্ল আপ) ও যানজট (ট্রাফিক জ্যাম) প্রতিদিন নগরবাসীর কর্মঘণ্টার উল্লেখযোগ্য অংশ আত্মসাত করে। বর্তমানে পিক আওয়ারে রাজধানীতে গাড়ির গড় গতিবেগ ঘণ্টায় আট কিলোমিটার। ২০৩৫ সালে তা চার কিলোমিটারে নেমে আসবে। অথচ নগর সড়কে (আরবান রোড) যানবাহন চলাচলের জন্য আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে স্বীকৃত আদর্শ গতি ঘণ্টায় ২৫-৩০ কিলোমিটার। দুঃখজনক হলো ফ্লাইওভার বানিয়েও যানজট কমছে না। ফ্লাইওভার চালু হওয়ার পর যানজট ফ্লাইওভারের দু’প্রান্তে স্থানান্তরিত হয়েছে বলেই মনে হচ্ছে। তাছাড়া বেশিরভাগ ফ্লাইওভারের নিচটা হয়ে উঠেছে অবৈধ পার্কিং স্পট ও নানা ধরনের বিকিকিনির স্থান। মাত্রাতিরিক্ত যানবাহনের চাপ ও অত্যন্ত ঘনবসতির কারণে ঢাকায় চলাচল ব্যবস্থা কি সম্পূর্ণ ভেঙ্গে পড়বে? ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ ও যানজট নিরসন এক বিরাট চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠেছে। কোন কৌশলেই যেন কাক্সিক্ষত ফল পাওয়া যাচ্ছে না। যানজট কি অমীমাংসিত সমস্যা হিসেবেই থেকে যাবে?
×