ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

গণতন্ত্র ও উন্নয়ন

প্রকাশিত: ০৩:৪১, ১২ মার্চ ২০১৭

গণতন্ত্র ও উন্নয়ন

গণতন্ত্র ও উন্নয়ন একে অপরের সঙ্গে যুক্ত। গণতন্ত্র বহাল থাকলে উন্নয়ন হয় দেশের, পক্ষান্তরে গণতন্ত্রবিরোধীরা ব্যাহত করে উন্নয়ন। তবে গণতন্ত্রকে আহত করে গণতন্ত্রবিরোধীরা নিজেদের আখের গোছানোর অপচেষ্টায় লিপ্ত হয়। যদিও তাতে শেষ রক্ষা হয় না, তারা নিক্ষিপ্ত হয় ইতিহাসের আঁস্তাকুড়ে। এই গণতন্ত্রবিরোধীরা হতে পারে সামরিক স্বৈরশাসক, কিংবা ছদ্মবেশী গণতন্ত্রী। বাংলাদেশ তাদের প্রথম প্রত্যক্ষ করে স্বাধীনতার স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নৃশংসভাবে সপরিবারে হত্যাকা-ের পর। এখনও সেই অপশক্তি সক্রিয় বলেই গণতন্ত্রের অগ্রযাত্রা ব্যাহত হয়, উন্নয়নে সাময়িক স্থবিরতা নেমে আসে। জাতীয় সংসদে সমাপনী বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সমালোচকদের উদ্দেশ করে বলেছেন, গণতন্ত্র এবং গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা আছে বলেই দেশের এত উন্নয়ন হচ্ছে। অনেকে বলেন-শুধু উন্নয়ন করলে হবে না, গণতন্ত্র থাকতে হবে। দেশে এত উন্নয়ন ও অগ্রগতির পরও যারা কিছুই দেখতে পান না তারা আসলে কী চায়? যদি দেশে গণতান্ত্রিক পরিবেশ নাই-ই থাকে তবে সরকারের এত সমালোচনা তারা করেন কীভাবে? রাজনৈতিক দল হচ্ছে গণতন্ত্রের বাহন। গণতন্ত্রের দোহাই দিয়ে ধারাবাহিকভাবে প্রকাশ্য ও চোরাগোপ্তা সন্ত্রাসী কর্মকা- চালালে রাজনৈতিক দলকে সন্ত্রাসী দলই বলতে হয়। বিএনপি দেশের অন্যতম একটি প্রধান রাজনৈতিক দল হওয়া সত্ত্বেও তার কর্মকা- বিশ্লেষণ করলে তাকে সন্ত্রাসী দল আখ্যা দেয়াটাই সমীচীন বলে মনে হয়। কথায় বলে ‘সৎসঙ্গে স্বর্গবাস, অসৎসঙ্গে সর্বনাশ’। একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধবিরোধী তথা বাংলাদেশের স্বাধীনতাবিরোধী সন্ত্রাসী দল জামায়াতের সঙ্গে বিএনপির গাঁটছড়া বাঁধার বিষয়টি যেন ওই প্রবাদটিরই একটি সমসাময়িক উদাহরণ। গণতন্ত্রের অভিযাত্রায় সন্ত্রাসবাদকে সঙ্গী করে রাজনীতির ঘুঁটি চালা হলে তা বুমেরাং হয়ে উঠতে পারে। বাংলাদেশে গণতন্ত্রের সঙ্কট নিয়ে কোন কোন মহলে নানা সময়ে নানা জাতীয় শঙ্কা উচ্চারিত হয়। জঙ্গীবাদ ও মৌলবাদ বর্তমানে গণতন্ত্রের প্রধান শত্রু হিসেবে দেখা দিলেও গণতান্ত্রিক বলে পরিচিত বড় রাজনৈতিক দলও যে গণতন্ত্রের অভিযাত্রার প্রতিবন্ধক হয়ে উঠতে পারে তার উদাহরণ ইতিহাসে কম নয়। তবে আশার বড় জায়গাটি হচ্ছে এ দেশের মানুষ। গণতন্ত্রের পক্ষে গণতন্ত্রকে নস্যাত করার অভিপ্রায়ে কোন ষড়যন্ত্রের সূচনা হলে তার বিপরীতে অবস্থান গ্রহণে বাংলার মানুষ কখনও পিছপা হয়নি। পাঁচই জানুয়ারির নির্বাচন বর্জনের ভেতর দিয়ে বিএনপি গণতন্ত্রের ধারাবাহিকতা রক্ষার বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছিল। ফলে তারা বিরোধী দলের দায়িত্ব থেকেও ছিটকে পড়ে। বর্তমান বিরোধী দল সংসদে থেকে দেশের জন্য কাজ করছে বলে তা গণতন্ত্রবিরোধীদের অপছন্দের কারণ হয়েছে। সংসদে বিরোধীদলীয় নেত্রীর বক্তব্যে সেই ঈর্ষাদগ্ধ সমালোচকদের সমালোচনা এবং নিজ দলের গঠনমূলক মানসিকতার বিষয়টি প্রশংসিত হবে। সমালোচনাকারীদের উদ্দেশ করে প্রধানমন্ত্রী সংসদে যথার্থই বলেন, দেশের কিছু মানুষ আছে যারা উন্নয়ন দেখলেই সমালোচনা করে। তাদের কাছে জরুরী অবস্থা কিংবা সামরিক স্বৈরাচারকে খুব গণতান্ত্রিক বলে মনে হয়। শত সমস্যার ভেতরেও দেশ এগিয়ে চলেছে। বর্তমানে প্রবৃদ্ধি ৭ ভাগের ওপরে যা বিশ্বের অনেক নেতার কাছেই বিস্ময়কর। জনগণের কল্যাণে ও তাদের ভাগ্য পরিবর্তনে আন্তরিকতা নিয়ে সরকার কাজ করে যাচ্ছে বলেই দেশের এত উন্নয়ন সম্ভব হচ্ছে। গণতন্ত্রবিরোধীরা যতই ষড়যন্ত্র করুক না কেন, ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হবেÑ এটাই দেশবাসীর বিশ্বাস।
×