গত জানুয়ারি মাসেই এ ঘোষণা দিয়েছিল ফেসবুক। একটি ‘টেস্ট’ পর্যায়ে ইউজাররা সন্দেহজনক পোস্টিংগুলোকে ‘ফ্ল্যাগ’ করতে পারবেন ও একটি ফ্যাক্ট-চেকিং সংগঠন সেগুলোর সত্যতা যাচাই করবে। ২০১৬ সালের ডিসেম্বর মাসেই ফেসবুক মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে এ ধরনের একটি কর্মসূচী শুরু করে। এক্ষেত্রে ফেসবুক এবিসি নিউজ ও অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসের মতো সংবাদ সংগঠনের সঙ্গে সহযোগিতা করবে; অপরদিকে পলিটিফ্যাক্ট, স্নোপস এবং ফ্যাক্টচেকের মতো ফ্যাক্ট-চেকিং গ্রুপ বিতর্কিত কাহিনীগুলোর সত্যতা যাচাই করবে। ফেসবুক যে এই পন্থা পরীক্ষা করার দ্বিতীয় দেশ হিসেবে জার্মানিকে বেছে নিয়েছে, তার একটা কারণ এও হতে পারে যে, গত বছরের শেষে জার্মান সরকার ঘোষণা করেছে যে, ফেক নিউজের বিস্তারের জন্য দায়ী কোম্পানিগুলির ওপর কঠিন অর্থদণ্ড আরোপের কথা ভাবা হচ্ছে। যেমন: ভুয়া বা বিভ্রান্তিকর তথ্য বা হেট স্পিচ রিপোর্ট হওয়ার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে সরানো না হলে ৫০০,০০০ ইউরো অবধি ফাইন হতে পারে।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের অভিজ্ঞতার পর থেকে বহু জার্মান রাজনীতিকের আশঙ্কা যে, রাশিয়া আগামী সেপ্টেম্বরে জার্মান সংসদীয় নির্বাচনের আগে অনুরূপ প্রভাব ফেলার চেষ্টা করতে পারে। যে ধরনের ভুয়া খবর ছড়িয়ে নির্বাচনের ফলাফলকে রাশিয়ার অনুকূল করে তোলা সম্ভব, সেগুলোকে সোশ্যাল মিডিয়ায় অবাধ বিস্তার লাভ করতে দেওয়া যায় না।
ভুয়া খবরের কিছু দৃষ্টান্ত ॥ ২০১৬ সালের জানুয়ারিতে বার্লিনে লিজা নামের এক জার্মান কিশোরীকে এক দল অভিবাসী ধর্ষণের খবর ভাইরাল হয়ে যায়। বিশেষ করে রুশ মিডিয়ায় এই খবর বিপুল কভারেজ পায়। পরে কিশোরীটি স্বীকার করে যে, সে সব কিছু বানিয়ে বলেছে।
২০১৭-র সূচনায় আসে মার্কিন ব্রাইটবার্ট সংস্থা থেকে শুরু হয়ে জার্মানিতে ছড়িয়ে পড়ে একটি ভুয়া কাহিনী। সেখানে বলা হয়, ১,০০০ সিরীয় উদ্বাস্তু জার্মানির প্রাচীনতম গির্জায় আগুন ধরিয়েছে। তার কিছুদিন পরেই সিরীয় উদ্বাস্তু আনাস মোদামানি ফেসবুকের বিরুদ্ধে মামলা করেন, কেননা মোদামানি চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেলের সঙ্গে তাঁর সেল্ফি পোস্ট করার পর তার বিরুদ্ধে ব্রাসেলসের সন্ত্রাসী আক্রমণে জড়িত থাকার যে ফেক নিউজ প্রকাশিত হয়েছিল, ফেসবুক তার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি।
সেপ্টেম্বরে জার্মানিতে নির্বাচন। বাজফিড খবর দিয়েছে যে, চ্যান্সেলর অ্যাঙ্গেলা ম্যার্কেলের বিরুদ্ধে ভুয়া খবরের সংখ্যা ইতিমধ্যেই বাড়তে শুরু করেছে এবং তার মধ্যে দক্ষিণপন্থী সূত্র থেকে আসা নেতিবাচক খবরই বেশি। ‘ফেক নিউজ ফিল্টারিং টুল’ থেকে শুরু করে ‘ফ্যাক্ট-চেক বাটন’ অবধি বিভিন্ন নাম দেওয়া হচ্ছে বস্তুটিকে। ফেসবুক ব্যবহারকারী যদি কোন পোস্ট দেখে মনে করেন যে, এটা ফেক নিউজ হতে পারে, তাহলে তারা পোস্টটির ওপরের ডান দিকের কোণায় ক্লিক করে সেটিকে ফেক নিউজ হিসেবে ফ্ল্যাগ করতে পারবেন। ফেসবুকের কর্মীরা তখন সেই পোস্টটিকে দেখবেন, সেই সঙ্গে সেটিকে পাঠানো হবে বার্লিনভিত্তিক একটি নিরপেক্ষ ফ্যাক্ট-চেকিং সংগঠনে, যার নাম ‘করেক্টিভ’। করেক্টিভ যদি পোস্টের কাহিনীটিকে অনির্ভরযোগ্য মনে করে, তাহলে সেটিকে ‘ডিসপিউটেড’ বা ‘বিতর্কিত’ বলে ফ্ল্যাগ করা হবে। ফেক নিউজ হিসেবে ফ্ল্যাগ করা থাকলেও লোকে সেটিকে শেয়ার করতে পারবেন, কিন্তু তারা একটি ওয়ার্নিং পাবেন। এছাড়া পোস্টটি নিউজ ফিডের অ্যালগরিদমে অগ্রাধিকার পাবে না।
আরো পড়ুন
শীর্ষ সংবাদ: