ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

যশোরের প্রথম শহীদ চারুবালা কর

প্রকাশিত: ০৬:২১, ১১ মার্চ ২০১৭

যশোরের প্রথম শহীদ চারুবালা কর

স্বাধীনতা যুদ্ধ শুরুর আগে যশোরে পাক বাহিনীর গুলিতে প্রথম শহীদ চারুবালা করের সমাধি অযতœ-অবহেলায় পড়ে রয়েছে। দখল হয়ে গেছে সমাধির আশপাশের জায়গা। তার মৃত্যুবার্ষিকী যশোরের কোন সংগঠন পালন করে না। অথচ তার মৃত্যুর পর যশোর অগ্নিগর্ভ হয়ে উঠেছিল। স্বাধীনতার দাবিতে মানুষ মাঠে নেমেছিল। সেই দিনটির কথা কেউ মনে রাখেনি। যশোরের মানুষের কাছে ১৯৭১ সালের ৩ মার্চ ঐতিহাসিক দিন। স্বাধীনতা সংগ্রামে নতুন মাত্রা যোগ হয়েছিল এদিন। পাক হানাদার বাহিনীর নির্বিচার গুলিবর্ষণে এদিন শহীদ হয়েছিলেন চারুবালা কর। ৩ মার্চ সকাল সাড়ে ১০টা। স্বতঃস্ফূর্ত জনতার বিশাল মিছিল বের হয় ঈদগাহ ময়দান থেকে। দড়াটানা মোড় ঘুরে কাপুড়িয়াপট্টি-চৌরাস্তা হয়ে মিছিলটি ঢোকে রেল রোডে। সরকারী খাদ্য গুদামের সামনে পাক হানাদার বাহিনীর অবস্থান দেখে তাদের দিকে ইট ও জুতা নিক্ষেপ করে বিক্ষুব্ধ জনতা। ওই সময় এক পাকসেনা বিক্ষুব্ধ জনতাকে ভয় দেখাতে ফাঁকা গুলি ছোঁড়ে, গুলিবিদ্ধ হয় আকাশে ভেসে বেড়ানো এক চিল। মৃত চিলটিকে নিয়ে মিছিলটি ঢোকে ভোলা ট্যাঙ্ক সড়কে। সার্কিট হাউসের ভেতরে পাক সেনাদের দেখে বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে জনতা। তারা সার্কিট হাউস আক্রমণের প্রস্তুতি নেয়। এ সময় তৎকালীন পাকিস্তান জাতীয় পরিষদের সদস্য স্বাধীনতা সংগ্রামের অন্যতম সংগঠক শহীদ মশিয়ুর রহমান বিক্ষুব্ধ জনতাকে শান্ত করে ফিরিয়ে নিয়ে যান ঈদগাহ ময়দানে। বিভিন্ন মহল্লা থেকে বিক্ষুব্ধ মানুষ তখনও জড়ো হচ্ছিল সেখানে। দুপুর ১২টার দিকে হানাদার বাহিনীর গাড়ি ঈদগাহের পাশের রাস্তা অতিক্রম করার সময় জনতা আবারও উত্তেজিত হয়ে ওঠে। জনতার দিকে অস্ত্র তাক করে হানাদাররা। নেতৃবৃন্দের হস্তক্ষেপে শান্ত হয় জনতা। ওই সময় খবর আসে টেলিফোন ভবন দখল করে নিয়েছে হানাদার বাহিনী। চরম উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে উপস্থিত ছাত্র-জনতার মধ্যে, উত্তেজিত ছাত্র-জনতার একটি অংশ ঈদগাহ ময়দান থেকে বেরিয়ে টেলিফোন ভবনের সামনে গিয়ে বিক্ষোভ প্রদর্শন করে। এ সময় কোন পূর্ব সতর্কীকরণ ছাড়াই টেলিফোন ভবনের ছাদ থেকে জনতার দিকে মেশিনগান দিয়ে গুলিবর্ষণ শুরু করে হানাদার বাহিনী। টেলিফোন ভবনের পশ্চিম পাশে (বর্তমান হোটেল হাসান ইন্টারন্যাশনাল) বসবাস করতেন নিঃসন্তান পূর্ণ চন্দ্র কর ও তার স্ত্রী চারুবালা কর। হানাদার বাহিনীর ছোঁড়া বুলেট ঘরের গোলপাতার ছাউনি ভেদ করে বিদ্ধ হয় চারুবালা করের মাথায়। শহীদ হন তিনি। হানাদার বাহিনীর নির্বিচার গুলিবর্ষণে আহত হন অনেকে। চারুবালা করের মরদেহ নিয়ে রাখা হয় যশোর সদর হাসপাতাল মর্গে। মর্গে তালা লাগিয়ে পাক সেনারা অবস্থান নেয় সেখানে। বাইরে হাজার হাজার মানুষ চারুবালা করের মরদেহ নেয়ার অপেক্ষায়। কিন্তু পাক সেনারা মরদেহ দিতে নারাজ। অপেক্ষমাণ মানুষের ধৈর্যের বাঁধ ভাঙতে শুরু করে। ক্রমেই উত্তেজিত হয়ে ওঠে মানুষ। এমন সময় মশিয়ুর রহমান মুখোমুখি হন পাক সেনা অফিসারদের। বজ্রকণ্ঠে তিনি বলেন, আমার মায়ের মরদেহ আমি নিয়ে যাব, তোমরা ঠেকিয়ে রাখতে পারবে না। মুহূর্তে জনতা মর্গের তালা ভেঙ্গে বাইরে নিয়ে আসে চারুবালা করের মরদেহ, সূর্য তখন অস্তগামী, সৎকারের জন্য শহীদ চারুবালা করের মরদেহ নিয়ে হাজার হাজার মানুষ ছুটছে নীলগঞ্জ মহাশ্মশানে, শবযাত্রায় পুরুষের সঙ্গে যোগ দেয় বহু নারী। সবার চোখে মুখে প্রতিরোধের প্রতিচ্ছবি। নীলগঞ্জ মহাশ্মশানে সমাধিস্থ করা হয় শহীদ চারুবালা করের মরদেহ। Ñসাজেদ রহমান, যশোর থেকে
×