ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

‘নেইমারের নৈপুণ্যেই অসাধ্য সাধন’

প্রকাশিত: ০৬:১৮, ১১ মার্চ ২০১৭

‘নেইমারের নৈপুণ্যেই অসাধ্য সাধন’

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ বিশ্বজুড়ে এখন নেইমার বন্দনা। এই ব্রাজিলিয়ান সুপারস্টারের নৈপুণ্যে ভর করেই অসাধ্য সাধন করেছে বার্সিলোনা। চ্যাম্পিয়ন্স লীগের ইতিহাসে ফিরে আসার রেকর্ড গড়ে পৌঁছে গেছে কোয়ার্টার ফাইনালে। শেষ ষোলোর দ্বিতীয় লেগের ম্যাচে পিএসজি’র বিরুদ্ধে গোলের পর গোল করার পরও স্বপ্ন ফিকে ছিল কাতালানদের। অবিশ্বাস্যভাবে স্বপ্নটা সত্যি করেছেন সেলেসাও তারকা। ম্যাচ শেষ হওয়ার দুই মিনিট আগে বিস্ময় জাগানিয়া ফ্রিকিকে বার্সাকে চাঙ্গা করার পর অতিরিক্ত সময়ের প্রথম মিনিটে পেনাল্টি থেকে গোল করেন। তখনও ম্যাচ শেষ হলে বিদায় নিতে হতো বার্সাকে। কিন্তু শেষ মিনিটে নেইমারের ফ্রিকিক থেকেই পা ছুঁয়ে বিশ্বরেকর্ড গড়া পূরণ করেন সার্জেই রবার্টো। ম্যাচের একটা পর্যায়ে বার্সাকে ম্লান মনে হচ্ছিল। তখন দলকে একাই টেন তোলেন নেইমার। ফিরে আসার পুরো গল্পের নায়ক সে। তাইতো বিশ্বজুড়ে নেইমারের প্রশংসা। সাবেক ও বর্তমান তারকারা বলছেন, নেইমারের নৈপুণ্যেই অসাধ্য সাধন। প্রথম লেগে চার গোলে পিছিয়ে পড়ার পরই বার্সার বিদায় দেখেছিলেন বেশিরভাগ মানুষ। তখনও বিশ্বাস হারাননি নেইমার। জোর গলায় বলেছিলেন, ‘যদি আমাদের ১ শতাংশও সম্ভাবনা থাকে, তাহলে ৯৯ শতাংশ বিশ্বাস নিয়ে আমরা ঝাঁপিয়ে পড়ব’। কথা রেখেছেন টগবগে যুবক। পিএসজিকে মরণ কামড় দিয়ে বিশ্বরেকর্ডের সারথী হয়েছেন তিনি। ম্যাচ শেষে তাই নেইমারের মুখে বিশ্বাসের জয়গানই ছিল। বলেন, আমরা শেষ মুহূর্তটি পর্যন্ত বিশ্বাস ধরে রেখেছি। আর যদি আমরা বিশ্বাস করি, সেভাবেই খেলি, তাহলে বার্সাকে রোখা দুঃসাধ্য। আমার জীবনের সেরা ম্যাচ এটি। অনিন্দ্য সুন্দর ম্যাচের কলঙ্ক হয়ে আছেন জার্মান রেফারি ডেনিজ আইটকিন। এই ভদ্রলোক এখন যেন বিশ্বচোর। পিএসজি সমর্থকরা অন্তত তাকে এভাবেই সম্বোধন করছেন। তাদের দাবি, ডেনিজ দু’টি পেনাল্টিসহ আরেকটি গোল বার্সাকে উপহার দিয়েছে। তার দেয়া সিদ্ধান্তগুলো ম্যাচের ভাগ্য কতটা বদলেছে এটা সবাই জানে। আর এ কারণেই নিজের ভাগ্যটাই বদলে যেতে পারে ডেনিজের। চ্যাম্পিয়ন্স লীগ ও ইউরোপা লীগের ম্যাচ রেফারিদের দায়িত্ব বণ্টনের ভারটা পিয়েরলুইজি কলিনার কাধে। উয়েফার রেফারিং প্রধান নির্ধারণ করবেন ডেনিজ আগামী কিছুদিন আর কোন বড় ম্যাচের দায়িত্ব পাবেন কি না। তবে এখন পর্যন্ত যে ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে, এ মৌসুমে হয়তো আর কোন ম্যাচের দায়িত্ব পাবেন না এই জার্মান রেফারি। কিছুদিন সাইডলাইনে দাঁড়িয়ে থাকাটাই হয়তো ভাগ্যে আছে তার। ডেনিজের শাস্তির কারণ বার্সার পাওয়া দ্বিতীয় পেনাল্টি। রিপ্লেতে দেখা গেছে, ব্রাজিলিয়ান ডিফেন্ডার মার্কিনহোসের সঙ্গে আলতো ছোঁয়া লেগেছিল লুইস সুয়ারেজের। তাতেই ডাইভ দিয়ে পড়ে যান সুয়ারেজ। যতটা না ফাউল হয়েছে, সুয়ারেজ তারচেয়ে বেশি পরিস্থিতির ফায়দা লুটেছেন। মানে পুরোদস্তুর অভিনয় করেছেন সুয়ারেজ। উরুগুইয়ান তারকার নাটক থেকে পাওয়া পেনাল্টিতে বার্সার হয়ে পঞ্চম গোল করেন নেইমার। এটা নিয়েই সমালোচনার ঝড় চলছে। ক্রোয়েশিয়ার কোচ তো সুয়ারেজকে অভিনয় করার আহ্বান জানিয়েছেন। বিশ্বের নানাপ্রান্তে আরও অনেকেই সুয়ারেজকে অভিনেতা বলছেন। তবে কড়া মন্তব্যে লার্স ল্যাজেরব্যাকের ধারেকাছেও কেউ যেতে পারেননি। এই সুইডিশ কোচ কিছুতেই মানতে পারছেন না এ সিদ্ধান্ত। তিনি বলেন, এটা খুব বাজে ব্যাপার হলো যে এমন ম্যাচের ভাগ্য একটা ডাইভই নির্ধারণ করে দিল। ফুটবল বিশ্বের জন্য আমার খারাপ লাগছে। আমার খুব রাগ হয়েছে। এটা তো সুয়ারেজ-নাটক হলো। গোলের পাশে আমরা তাহলে রেফারি কেন রাখছি, যদি এটাই দেখতে না পায়। ফিফা সভাপতি জিয়ান্নি ইনফান্টিনো বিতর্কের মধ্যে যাননি। কৌশলের আশ্রয় নিয়ে তিনি সুন্দর ফুটবলের প্রশংসা করেছেন। মানে বার্সার নয়নাভিরাম ফুটবলের। ইনফান্টিনো বলেন, একটা অসাধারণ ম্যাচ দেখেছে সবাই। এটা দেখিয়ে দিল ফুটবল আসলে কতটা দুর্দান্ত খেলা। এমন ম্যাচে অনেক কিছুই ঘটতে পারে। কিন্তু সবকিছু ছাপিয়ে ফুটবলেরই জয় হয়েছে। আর নেইমার যা করেছে তা সত্যিই অবিশ্বাস্য। এদিকে ফ্রান্সের সাবেক কোচ রেমন্ড ডমেনেখ জানিয়েছেন, নেইমার ও সুয়ারেজের সঙ্গে মান বজায় রেখে খেলতে পারছেন না মেসি। পিএসজির বিরুদ্ধে ম্যাচে মেসি ছিলেন নিজের ছায়া হয়ে। এমনই দাবি করেছেন ডমেনেখ। এতে করে ‘এমএসএনে’র ধারও কমছে বলে মনে করেন তিনি।
×