ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

গল টেস্ট জেতার জন্য লক্ষ্য ৪৫৭ রান, দ্বিতীয় ইনিংসে চতুর্থদিন শেষে বাংলাদেশ ৬৭/০, আজ শেষদিনে আরও প্রয়োজন ৩৯০ রানের

ইতিহাস গড়তে পারবে বাংলাদেশ?

প্রকাশিত: ০৬:১৭, ১১ মার্চ ২০১৭

ইতিহাস গড়তে পারবে বাংলাদেশ?

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ নতুন বিশ্বরেকর্ড স্থাপন করতে হবে। গল আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামে স্বাগতিক শ্রীলঙ্কা সফরকারী বাংলাদেশকে জয়ের জন্য প্রথম টেস্টে ছুড়ে দিয়েছে ৪৫৭ রানের অসম্ভব এক লক্ষ্য। এ ভেন্যুতে পরে ব্যাট করে সবচেয়ে বেশি ৯৯ রান করে জেতার রেকর্ড আছে শ্রীলঙ্কারই. ২০১৪ সালে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে। অর্থাৎ একইসঙ্গে বাংলাদেশকে করতে হবে বিশ্বরেকর্ড এবং গল স্টেডিয়ামে রান তাড়ার রেকর্ড। দ্বিতীয় ইনিংসে বাংলাদেশের ফিল্ডারদের ক্যাচ হাতছাড়া করার মহড়ায় উপুল থারাঙ্গার শতকে ৬ উইকেটে ২৭৪ রান তুলে ইনিংস ঘোষণা করে। ৪৫৭ রানের জয়ের লক্ষ্যে খেলতে নেমে দিনশেষে বাংলাদেশ দ্বিতীয় ইনিংসে তুলেছে বিনা উইকেটে ৬৭ রান। বিস্ফোরক অর্ধশতক হাঁকিয়ে এখনও ব্যাট করছেন সৌম্য সরকার। আজ পঞ্চম ও শেষদিনে জিততে হলে ৩৯০ রান করতে হবে আরও। গড়তে হবে ইতিহাস। ম্যাচের তৃতীয়দিনই কঠিন চাপে পড়ে গিয়েছিল বাংলাদেশ। প্রথম ইনিংসে মাত্র ৩১২ রানে গুটিয়ে যায় সফরকারীদের ইনিংস। ১৮২ রানের বড় ব্যবধানে এগিয়ে থাকা লঙ্কানরা অবশ্য ব্যাট করার জন্য নামতে পারেনি বৃষ্টির হানায়। কিন্তু চতুর্থদিন সকাল থেকেই তারা সেই লিড বাড়িয়ে নিতে শুরু করে। ডানহাতি অফস্পিনার মেহেদি হাসান মিরাজ অবশ্য শুরু থেকেই চেপে ধরেছিলেন। ওপেনার দিমুথ করুনারতেœকে শিকারও করে ফেলেছিলেন ইনিংসের ষষ্ঠ ওভারে। কিন্তু তার দেয়া ক্যাচ অলসভাবে দাঁড়িয়ে থাকা সাকিব আল হাসান লুফে নিতে পারেননি। তখন করুনারতেœর রান ছিল মাত্র ৭। সুযোগ পেয়ে থারাঙ্গার সঙ্গে উদ্বোধনী জুটিতে ৬৯ রান যোগ করেন করুনারতেœ। অবশেষে প্রথম সাফল্য এনে দেন পেসার তাসকিন আহমেদ। স্কয়ার লেগে দারুণ এক ক্যাচ লুফে ৩২ রান করা এ ওপেনারের বিদায় নিশ্চিত করেন মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ। তবে তিনিই মিডউইকেটে পরবর্তীতে মিরাজের বলে দিলরুয়ান পেরেরার সহজ ক্যাচ ছেড়েছেন ইনিংসের ৬১তম ওভারে। করুনারতেœ ফিরে যাওয়ার পর কুশল মেন্ডিস দারুণ সঙ্গ দিয়েছেন অভিজ্ঞ থারাঙ্গাকে। দ্বিতীয় উইকেটে আরও ৬৫ রান যোগ করেন এ দু’জন, যার মধ্যে মাত্র ১৯ রান ছিল কুশলের। সাকিব এসে কুশলকে সাজঘরে ফেরালে দ্বিতীয় সাফল্য আসে বাংলাদেশ শিবিরে। কিন্তু থারাঙ্গাকে কোনভাবেই ঠেকানো যায়নি। তিনি তৃতীয় উইকেটে সঙ্গী হিসেবে পেয়েছেন দিনেশ চান্দিমালকে। সম্প্রতিই দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে টেস্ট দল থেকে ছিটকে পড়া চান্দিমাল শুরু থেকে বেশ সাবধানী ছিলেন। কিন্তু ব্যক্তিগত ১১ রানে তিনি জীবন পেয়েছেন। প্রথম সিøপে দাঁড়ানো সৌম্য সরকার সহজ ক্যাচটা হাতছাড়া করেন। মিরাজ তার ঘূর্ণিবলে এভাবেই দিশেহারা করে রেখেছিলেন লঙ্কান ব্যাটসম্যানদের। কিন্তু ফিল্ডারদের ব্যর্থতায় তিনিও সফল হননি, দলও হয়েছে বিপর্যস্ত। চান্দিমাল জীবন ফিরে পেয়ে হয়ে ওঠেন আক্রমণাত্মক। তিনি চতুর্থ উইকেটে থারাঙ্গার সঙ্গে গড়ে তোলেন আরও ৬৪ রানের জুটি। থারাঙ্গা ক্যারিয়ারের তৃতীয় সেঞ্চুরি হাঁকিয়ে সাজঘরে ফেরেন মিরাজের প্রথম শিকার হয়ে। দুর্ভাগ্য ঘোঁচে দারুণ বোলিং করা এ তরুণ অফস্পিনারের। ১৭১ বলে ১১ চার ও ২ ছক্কায় ১১৫ রান করে সাজঘরে ফেরেন থারাঙ্গা। পরের ওভারেই বাংলাদেশকে আরেকটি সাফল্য এনে দেন সাকিব। প্রথম ইনিংসে ৮৫ রানের দারুণ ইনিংস খেলা আসেলা গুনারতেœ ফিরে যান শূন্য রানেই। টানা দুই সাফল্যেও বাংলাদেশ শিবিরে বড় কোন আনন্দের উপলক্ষ এনে দেয়নি। কারণ ততোক্ষণে ৩৮১ রানে এগিয়ে গেছে শ্রীলঙ্কা। পঞ্চম উইকেটে নিরোশান ডিকওয়েলাকে সঙ্গে নিয়ে সেই লিডকে ৪০০ পেরিয়ে নিয়ে যান চান্দিমাল। অবশ্য উইকেটরক্ষক ব্যাটসম্যান ডিকওয়েলা বেশিক্ষণ বিরক্তি উদ্রেক করতে পারেননি বাংলাদেশী ফিল্ডারদের কাছে। মাত্র ১৫ রান করেই সাজঘরে ফিরেছেন মিরাজের স্পিনে পরাস্ত হয়ে। তবে দিলরুয়ান এসে ঝড় তোলেন মাত্র ০ রানে ক্যাচ দিয়ে বেঁচে যাওয়ার পর। ষষ্ঠ উইকেটে ৫২ রান আসে দ্রুতবেগে। দীর্ঘ ৮ ইনিংস পর প্রথম কোন ৫০ রানের ইনিংস খেলেন চান্দিমাল। ৭৫ বলে ৪ চারে ৫০ রানে অপরাজিত থাকেন তিনি। ২৭ বলে দিলরুয়ান ৩৩ রান করার পর ফিরতি স্পেলে আসা পেসার মুস্তাফিজুর রহমানের বলে সাজঘরে ফেরেন। এরপরই ইনিংস ঘোষণা করে দেয় শ্রীলঙ্কা। ৬ উইকেটে ২৭৪ রানটা আরও কম হতে পারতো কিংবা আরও সময় লাগতে পারতো লঙ্কানদের। কিন্তু তিনটি সহজ ক্যাচ হাতছাড়া ও ফিল্ডিং মিসের মহড়ায় অনেক বড় লিড নিয়েছে লঙ্কানরা। ৪৫৬ রানে এগিয়ে থাকে তারা। টেস্ট ক্রিকেটে সর্বাধিক ৪১৮ রান তাড়া করে জেতার রেকর্ড আছে ওয়েস্ট ইন্ডিজের। ২০০৩ সালের মে মাসে সেন্ট জনসে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে অধিনায়ক ব্রায়ান লারার ক্যারিবীয়রা ওই রেকর্ড গড়ে। গল টেস্টে জেতার জন্য তাই বাংলাদেশকে বিশ্বরেকর্ড গড়তে হবে। কিন্তু এ ভেন্যুতে সর্বাধিক ৯৯ রান করে ৭ উইকেটে জয় পেয়েছিল লঙ্কানরা ২০১৪ সালে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে। আর ম্যাচের চতুর্থ ইনিংসে গলে সর্বাধিক ৩০০ রান করার রেকর্ড আছে ২০১২ সালে পাকিস্তানের। সেবার ৫১০ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করেছিল তারা। এবার সবকিছুকেই পেছনে ফেলতে হবে বাংলাদেশকে। অবশ্য দ্বিতীয় ইনিংসের শুরুটা উড়ন্ত গতিতে করেছেন সৌম্য সরকার। অভিজ্ঞ তামিম ইকবাল সতর্ক থেকে ধীরস্থির ভঙ্গিতে খেলে গেলেও তিনি টি২০ মেজাজে ব্যাট চালিয়েছেন। সৌম্য শুরু থেকেই চড়াও হন লঙ্কান বোলারদের ওপর। এমনকি অর্ধশতকও হাঁকিয়ে ফেলেন মাত্র ৪৪ বলে। প্রথম ইনিংসে ৭১ রানের দুর্দান্ত ইনিংস খেলা সৌম্য ক্যারিয়ারের তৃতীয় অর্ধশতক হাঁকান। বিনা উইকেটে ৬৭ রান তুলে দিন শেষ করে বাংলাদেশ। তখনও বেশকিছু ওভার খেলা বাকি ছিল। কিন্তু আলোর স্বল্পতা ও বৃষ্টির কারণে আর খেলা হয়নি। সৌম্য ৪৭ বলে ৬ চার ও ১ ছক্কায় ৫৩ এবং তামিম ১৩ রানে ব্যাট করছেন। আজ পঞ্চম ও শেষদিনে করতে হবে আরও ৩৯০ রান। চতুর্থ ইনিংসে সর্বাধিক ৪১৩ রান করার রেকর্ড আছে বাংলাদেশের। সেটাও এই শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে মিরপুর টেস্টে। ৫২১ রানের জয়ের লক্ষ্য ছিল সেবার। ২০১০ সালের মার্চে চট্টগ্রামে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে ৩৩১ এবং ২০১০ সালের জানুয়ারিতে ভারতের বিরুদ্ধে চট্টগ্রামেই ৩০১ রান করতে পেরেছিল বাংলাদেশ। এছাড়া চতুর্থ ইনিংসে ৩০০ পেরোনোর রেকর্ড নেই। এই তিনবারই হেরেছিল দল। রান তাড়া করে সর্বাধিক ২১৭ রান করে জিতেছিল বাংলাদেশ ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে। ২০০৯ সালের জুলাইয়ে সেবার সেন্ট জর্জেসে ৪ উইকেটে জিতে গিয়েছিল সফরকারী দল। এবারও কি তেমন কিছু করতে পারবে বাংলাদেশ, গড়তে পারবে ইতিহাস?
×