ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

পার্ক হাইয়ের বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক জীবন

প্রকাশিত: ০৬:০৭, ১১ মার্চ ২০১৭

পার্ক হাইয়ের বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক জীবন

সাবেক প্রেসিডেন্টের সন্তান, ফার্স্ট লেডি ও প্রেসিডেন্ট হিসেবে দক্ষিণ কোরিয়ায় পার্ক জিউন-হাইয়ের জন্য অবস্থান তৈরি হয়েছিল সরকারের শীর্ষে। তাকে এসব কিছু ত্যাগ করতে হয়েছে এক অমর্যাদাকর ঘটনার মধ্য দিয়ে। দুর্নীতির অভিযোগে অনাস্থা প্রস্তাব আনা হয় তার বিরুদ্ধে। দেশের প্রথম নারী রাষ্ট্রপ্রধান হিসেবে পদচ্যুত হন তিনি। খবর এএফপির। বেড়ে ্উঠেছেন তিনি সিউলের এক রাজকীয় প্রাসাদের ঠিক উত্তরদিকে মিডিয়া আকর্ষণ এলাকা প্রেসিডেন্ট কমপ্লেক্স ব্লু-হাউজে। সামরিক একনায়ক পার্ক চুং-হিয়ের জ্যেষ্ঠ সন্তান হিসেবে তিনি উপভোগ করেছেন এক জমকালো জীবন। তার বয়স এখন ৬৫। অধিকারের অপব্যবহার সত্ত্বেও তার বাবা ১৯৬১-১৯৭৯ তে দেশের দ্রুত অর্থনৈতিক উন্নয়নের দায়িত্বে ছিলেন। বেশ কিছুসংখ্যক সমর্থকের কাছে তার পরিবারটি বিবেচিত হয়েছে রাজোচিত বলে। পার্ক চুং-হি তরুণী কন্যা পার্ক জিউন হাইকে ডেকেছেন ‘প্রিন্সেস’ বলে। এ উপনামটি থেকেছে কয়েক দশক ধরে। পার্ক জিউন হাইয়ের মা-বাবা, দু’জনই ১৯৭০’র দশকে পাঁচ বছরের ব্যবধানে নিহত হন। এ ঘটনা তার জন্য জনসহানুভূতি বেড়ে যায় আরও বেশি। পার্কের মা এক কোরীয় জাপানীর হাতে নিহত হন। পিয়ংইয়ংয়ের নির্দেশে এ হত্যা সংঘটিত হয়েছে বলে মনে করা হয়। এ সময়ের ঐতিহ্যশালী সমাজে একজন কর্তব্যপরায়ন স্ত্রী ও দায়িত্বশীল মা হিসেবে তিনি ছিলেন ব্যাপক প্রশংসনীয় এক ব্যক্তি। পার্ক তখন পড়াশোনা করছিলেন ফ্রান্সে। দেশে ফিরে আসেন তিনি। গ্রহণ করেন ফার্স্ট লেডির ভূমিকা। তার বাবা ১৯৭৯ তে নিজের নিরাপত্তা প্রধানের হাতে নিহত হওয়ার আগ পর্যন্ত তিনি পালন করেছেন ফার্স্ট লেডির ভূমিকা। পরবর্তীতে প্রায় দু’দশক ধরে তার প্রতি জনআকর্ষণ ছিল কম। এ রকমটা ছিল ১৯৯৮ সালে তিনি আইন পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হওয়ার আগ পর্যন্ত। ঐ সময় দক্ষিণ কোরিয়ায় চলছে এশীয় অর্থনৈতিক সঙ্কট। তিনি তখন বয়স্ক রক্ষণশীল কোরীয়দের মধ্যে একজন তাৎক্ষণিক রাজনৈতিক তারকা হিসেবে প্রতিষ্ঠা পান। এ কোরীয়রা তার মাকে স্মরণ করতেন স্বস্নেহে এবং তার বাবাকে শ্রদ্ধা করতেন একটি যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশকে দারিদ্র্য মুক্তিতে অবদানের জন্য। পার্ক রাজনৈতিক সিঁড়ি ধরে উপরে উঠে গেলেন দ্রুত। বয়স্ক রক্ষণশীল ভোটারদের দ্বিধাহীন আনুগত্যের কারণে তিনি অর্জন করলেন ‘নির্বাচনের রাশি’ উপনাসটি। এটাও একটি বিষয় যে, তিনি বিয়ে করেননি কখনও এবং তার বিচ্ছেদ ঘটে দু’ভাই-বোনের সঙ্গে। যে দেশে নেতারা আত্মীয়-স্বজনদের জড়িত করে বড় ধরনের দুর্নীতি কেলেঙ্কারিতে জড়িত হয়ে পড়েন সেখানে তার এ ব্যক্তিগত বিষয়গুলো কাজ করে তার জনপ্রিয়তার পক্ষে। পার্ক এক সময় বলেছেন, আমার বৈবাহিক সম্পর্ক কোরিয়া প্রজাতন্ত্রের সঙ্গে। আমার কোন সন্তান নেই। দক্ষিণ কোরীয়দের নিয়েই আমার পরিবার। তিনি ‘কুমারী রানী’ হিসেবে পরিচিত ইংল্যা-ের দ্বিতীয় এলিজাবেথের মতো তার রোল মডেলের উল্লেখ করেছেন এভাবেই। শেষ পর্যন্ত তিনি ২০১২ সালে দক্ষিণ কোরিয়ার প্রথম নারী প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। ঐ সময়ের গণতান্ত্রিক যুগে নির্বাচনে তিনি সবচে বেশি ভোট পেয়ে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। কিন্তু তিনি তার বিজ্ঞ পরামর্শদাতা হিসেবে বেছে নেন এক সন্দেহজনক ধর্মীয় ব্যক্তিকে এবং পরিবারই শেষ পর্যন্ত বপন করে তার পতনের বীজ। তার চেয়ে ৪০ বছরের বেশি বয়স্ক চোই তাইমিনের সঙ্গে তার সম্পর্ক গড়ে ওঠে ১৯৭০ য়ের দশক। ৭ বার বিবাহিত এই চোই ছিলেন এক ধর্মীয় গোষ্ঠীর প্রতিষ্ঠাতা। তিনি ঐ সময় পার্কের কাছে পাঠানো এক চিঠিতে দাবি করেন, তিনি স্বপ্নে পার্কের মৃত মাকে দেখেছেন। উইকিলিকস প্রকাশিত এক মার্কিন কূটনৈতিক কেবলে ব্যাপকভাবে এ গুজব ছড়িয়ে পড়ার বিষয়টি উল্লেখ করে। বলা হয় যে, úার্কের দেহ ও আত্মার ওপর পুরো নিয়ন্ত্রণ রয়েছে চোইয়ের। চৌই মারা যান ১৯৯৪ সালে। এর পর তার মেয়ে চোই মুন-সিল তার ভূমিকা গ্রহণ করেন। চৌই মুন-সিলও পার্কের ওয়ার্ডরোবের পোশাক নির্বাচনসহ নিয়ন্ত্রণ করতেন তার দৈনন্দিন জীবনের সকল কর্মসূচী। তার সঙ্গে বছরের পর বছর ধরে মিলে দেশের বড় বড় ব্যবসায়ীর লাখ লাখ ডলার সরিয়ে নেয়ার অভিযোগ আনা হয় পার্কের বিরুদ্ধে। পার্কের এ পতন সকল দক্ষিণ কোরীয়র জন্য এক সতর্কবার্তা যে, এখন সময় এসেছে তাদের অতীতকে শেষবারের মতো বিদায় জানানো।
×