ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

দুর্নীতির অভিযোগে শেষ পর্যন্ত ক্ষমতা ছাড়তে বাধ্য হলেন দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট

অপসারিত হলেন পার্ক হাই

প্রকাশিত: ০৬:০৬, ১১ মার্চ ২০১৭

অপসারিত হলেন পার্ক হাই

দুর্নীতির অভিযোগে ক্ষমতা হারালেন দক্ষিণ কোরিয়ার প্রথম নারী প্রেসিডেন্ট পার্ক জিউন হাই। কয়েক মাস আগে পার্লামেন্ট তাকে অভিশংসনের যে সিদ্ধান্ত নিয়েছিল শুক্রবার দেশটির সাংবিধানিক আদালত তা বহাল রাখে। এ রায়ের ফলে প্রেসিডেন্টের পদ থেকে পুরোপুরি অপসারিত হলেন পার্ক জিউন-হাই। তিনি হলেন দেশটির গণতান্ত্রিক ইতিহাসে প্রথম প্রেসিডেন্ট যাকে আদালতের নির্দেশে মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই ক্ষমতা থেকে সরিয়ে দেয়া হলো। খবর বিবিসি ও এএফপির। সংবিধান অনুযায়ী মে মাসের মধ্যে একজন নতুন প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত করতে হবে। ব্যক্তিগত লাভের লক্ষ্যে চোই সুন-সিল নামে এক পুরনো বন্ধুকে সুবিধা পাইয়ে দিতে রাজনৈতিক ক্ষমতা অপব্যবহারসহ দুর্নীতির অভিযোগে গত বছর বিক্ষোভ করে দক্ষিণ কোরিয়ার জনগণ। একপর্যায়ে পার্ক হাই পদত্যাগ করতে চাইলেও বিরোধীরা তার বিরুদ্ধে অভিশংসনের প্রস্তাব আনে। গত ৯ ডিসেম্বর দক্ষিণ কোরিয়ার পার্লামেন্টে ওই প্রস্তাব ২৩৪-৫৬ ভোটে পাস হয়। নিজ দলের পার্লামেন্ট সদস্যরাও সেদিন পার্কের অভিশংসনের পক্ষে ভোট দেন বলে ধারণা করা হয়। এরপরই দেশটির প্রধানমন্ত্রীর কাছে দায়িত্ব হস্তান্তর করে ক্ষমতা থেকে সরে দাঁড়ান পার্ক জিউন-হাই। আট সদস্যের বিচারক প্যানেল তাদের রায়ে বলেছে, দফতরের গোপনীয়তা রক্ষার শপথ ভঙ্গ করে পার্ক অনেক নথিপত্র ফাঁস করেছেন। একই সঙ্গে তিনি তার বান্ধবী চোইকে রাষ্ট্রীয় কাজে হস্তক্ষেপের সুযোগ দিয়ে আইন ভঙ্গ করেছেন। প্রধান বিচারপতি লি জাং-মি বলেছেন, প্রেসিডেন্টের কার্যক্রম গণতন্ত্রের মূলনীতি ও আইনের শাসনকে গুরুতরভাবে ক্ষতবিক্ষত করেছে। ৬৫ বছর বয়সী পার্ক জিউন-হাই পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে প্রথম নারী, যিনি রাষ্ট্রপ্রধানের দায়িত্ব পেয়েছিলেন। তবে পারলেন না দায়িত্বের পুরোটা পালন করতে। ২০১৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নেন পার্ক। এরপর থেকেই তার বিরুদ্ধে সংবিধান লঙ্ঘনের অভিযোগ উঠে। পার্কের বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ, নিজ ক্ষমতার অধীনে তিনি তার বন্ধুকে দুর্নীতি করার সুযোগ করে দেন। পার্ক জিউন-হাইয়ের বন্ধু চোই সুন-সিল প্রেসিডেন্টের সঙ্গে সম্পর্কের সুবাদে অর্ধশতাধিক প্রতিষ্ঠান থেকে অনুদানের নামে ৬৫ দশমিক ৫ মিলিয়ন ডলার হাতিয়ে নেন। এর মধ্যে স্যামসাং এবং হুন্দাই-এর মতো কোম্পানিও রয়েছে। ওই অর্থ সন্দেহভাজন একটি ফাউন্ডেশনের নামে নেয়া হয়। পরে তিনি সেখান থেকে আর্থিকভাবে লাভবান হন। পার্ক জিউনের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি বন্ধুকে ওই অর্থ তুলতে সাহায্য করেন। তিনি চোই সুন-সিলকে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে অর্থ উত্তোলনের অনুমতি দিয়েছিলেন। এছাড়া তিনি চোই-এর রাষ্ট্রীয় নথি ফাঁস করতে সহযোগীদের নির্দেশ দিয়েছেন। অথচ প্রেসিডেন্টের বন্ধু চোই কোন রাষ্ট্রীয় পদেই নেই। প্রেসিডেন্টের সঙ্গে সখ্যতার সূত্র ধরে সরকারের বিভিন্ন কাজে হস্তক্ষেপ, দুর্নীতি ও ক্ষমতার অপব্যবহারের অভিযোগ আনা হয়েছে চোই সুন-সিলের বিরুদ্ধে। অবশ্য দুই বন্ধুই তাদের বিরুদ্ধে আনা এসব অভিযোগ অস্বীকার করে আসছেন। পার্ক হাই ১৯৬৩ থেকে ১৯৭৯ সাল পর্যন্ত দক্ষিণ কোরিয়ার ক্ষমতাসীন সাবেক প্রেসিডেন্ট পার্ক চুং হির বড় মেয়ে। আদালতের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে বিক্ষোভে নিহত ২ ॥ দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট পদ থেকে পার্ক জিউন হাইকে বিদায় নিতে বাধ্য করায় শুক্রবার রাজধানী সিউলে তার সমর্থকরা বিক্ষোভ করেছে। এ সময় দুইজন মারা গেছে বলে পুলিশ জানিয়েছে। এদের একজন বয়স্ক ব্যক্তি, মাথায় আঘাত পাওয়ার পর তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল। দ্বিতীয় ব্যক্তির মৃত্যুর কারণ তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। পার্কের সমর্থকদের বেশির ভাগই বয়োজ্যেষ্ঠ রক্ষণশীল নাগরিক। তবে শুধু বিক্ষোভ নয়, অভিশংসনের পক্ষে রায় হওয়ায় অনেকে উল্লাসও প্রকাশ করেছেন।
×