ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

অপহরণ এখন আফগানিস্তানে নিত্যদিনের ঘটনা

প্রকাশিত: ০৬:০৬, ১১ মার্চ ২০১৭

অপহরণ এখন আফগানিস্তানে নিত্যদিনের ঘটনা

আফগানিস্তানে অপহরণ করে মুক্তিপণ আদায় এখন প্রতিদিনকার ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে। তবে নানা কারণে এটি নিয়ে কেউ খুব একটা উচ্চবাচ্য করছে না- কেননা এতে করে কিছু হবে না মনে করে অনেকে হাল ছেড়ে দেয় আবার কেউ অপহরণকারী দলের প্রতি আক্রমণের আশঙ্কায় চুপ করে থাকে। তবে বিদেশী কেউ অপহৃত হলে কয়েকদিন খুব হৈচৈ হয়Ñ খবরের শিরোনাম হওয়ার ভয়ে পুলিশ ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কিছুটা তৎপর হয়। আফগানিস্তানের প্রত্যন্ত অঞ্চলের কী অবস্থা তার ব্যাপকতা কতটুকু তা জানা না গেলেও খোদ রাজধানীতে অপহরণ ও মুক্তিপণ আদায় এবং তা না পেয়ে হত্যার ঘটনা ঘটছে অহরহ। ভাবমূর্তি সঙ্কটে পড়তে হবে বলে স্থানীয় প্রশাসনে এ নিয়ে রাখ ঢাকÑ গুড়-গুড় অবস্থা। অধিকাংশ ক্ষেত্রে এসব খবর আলোর মুখ দেখে না। সম্প্রতি মুক্তি পাওয়া হাজী গুলাম নামে ৫৩ বছর বয়সী মানি চেঞ্জার তার লোমহর্ষক অভিজ্ঞতার বর্ণনা দেন- যা রীতিমতো আঁতকে উঠার মতো। হাজী গুলাম বলেন, গত শীতে ছেলে ও এক ভাইসহ তিনি যখন ঘরে ফিরছিলেন তখন সামরিক উর্দী পরিচিত কিছু লোক দুটি গাড়িতে করে এসে তাদের পথ আটকায়। তাদের আইনরক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য ভেবে গাড়ি থামানোর পর তারা তার ছেলে ও ভাইকে মারধর করে তাড়িয়ে দিয়ে তাকে টেনে হিঁচড়ে গাড়ি থেকে বের করে এনে চোখ বেঁধে ফেলে। পরবর্তীতে তারা তাকে মেরে পিটে ও অঙ্গহানি করে। কাবুলের বাইরে একটি মাটির গর্তে ফেলে রাখে। এরপর তারা তার পরিবারের কাছে কুড়ি লাখ ডলার মুক্তিপণ দাবি করে সেই সঙ্গে নির্যাতনকালীন তার আর্তচিৎকারের অডিও টেপ তাদের কাছে পাঠায়। কিন্তু বড় অঙ্কের টাকা পরিশোধের ক্ষমতা হাজী গুলামের পরিবারের ছিল না। এক মাস পর নিরাপত্তা বাহিনী তাকে পঙ্গু, অর্ধমৃত ও শেকলে বাঁধা অবস্থায় উদ্ধার করে। ৃএখন হাজী গুলামের বাহন হচ্ছে হুইল চেয়ারÑ ভাগ্যবানদের মধ্যে সে একজন সে বেঁচে ফিরে এসেছে। তবে তার অপহরণকারীদের কেউ এখনও ধরা পড়েনিÑ অদৃশ্য কারণে তারা গ্রেফতার এড়িয়ে যায় অথবা অভিযানের খবর আগভাগে পেয়ে যায়। অনেকের মতো হাজী গুলামেরও বদ্ধমূল ধারণা যে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কোন কোন প্রভাবশালী কর্মকর্তার সঙ্গে এসব অহরণকারীদের গোপন সম্পর্ক বা সমঝোতা আছে। গত বছর কাবুলের শাহজাদা মার্কটের প্রায় এক শ’ মানি চেঞ্চারকে জিম্মি করে মুক্তিপণ আদায় করা হয়। তালেবান শাসনের অবসানের লক্ষ্য এখানে মার্কিন ইউরোপীয় ও অন্যান্য বিদেশী শক্তির উপস্থিতিও এনজিও তৎপরতার কারণে গত কয়েক বছরে কাবুলের মানি চেঞ্জিং ব্যবসাটা জমে উঠেছিল। এখন শুধু মানি চেঞ্জিং নয় সব ব্যবসাই মুখ থুবড়ে পড়েছে অপহরণ আতঙ্কের জন্য। যাদের হাতে পয়সা আছেÑ জান বাঁচানোর জন্য তারা দেশ ছেড়ে পালাচ্ছে। কাবুল শহরে যে কোন সময়ে যে কোন সরকারী-বেসরকারী স্থাপনায় জঙ্গীদের আত্মঘাতী বোমা হামলা হয়ে থাকেÑ এখন সে আতঙ্কের পাশাপাশি যোগ হয়েছে অপহরণ আতঙ্ক। এ প্রসঙ্গে আফগান শিল্প ও বাণিজ্য সংস্থার মুখপাত্র সিয়ামুডেন পাসার্লি বলেন, নিরাপত্তাহীনতা ও অপহরণ আতঙ্কে আফগানিস্তানে বিনিয়োগ হচ্ছে না। Ñএএফপি।
×