ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

নিষিদ্ধ হলেও নির্মূল হয়নি

প্রকাশিত: ০৬:০৩, ১১ মার্চ ২০১৭

নিষিদ্ধ হলেও নির্মূল হয়নি

নেহাতই অন্তঃসারশূন্য আস্ফালন নয়, জঙ্গী ও সন্ত্রাসবাদীদের সমূলে উৎপাটন করতে যে বাংলাদেশ প্রকৃতই বদ্ধপরিকর তা আবারও প্রমাণ হলো। জঙ্গী ও সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের দ্ব্যর্থহীন অবস্থান পুরো বিশ্বের সামনে আরও একবার প্রতিভাত হলো। আন্তর্জাতিক জঙ্গী সংগঠন আল কায়েদার অনুসারী আনসার আল ইসলামকে অবশেষে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। দীর্ঘদিন আনসারুল্লাহ বাংলা টিম নামে জঙ্গীবাদী কার্যক্রম শুরু করার পর সরকার সংগঠনটিকে নিষিদ্ধ করে। তারা নাম পাল্টে আনসার আল ইসলাম নয়া নামে কার্যক্রম শুরু করে তিন বছর আগে। এর আগে জামা’আতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশ বা জেএমবি নিষিদ্ধ হলেও তারা নব্য জেএমবি নামে সংগঠিত শুধু নয়, জঙ্গী হামলাও চালিয়েছে। যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য গুলশানের হলি আর্টিজানে হামলা ও প্রাণনাশ এবং নাশকতার ঘটনা। যা পুরো বিশ্বকে নাড়া দিয়েছে। নিষিদ্ধ হলেই যে জঙ্গীরা বিলুপ্ত হয়ে যায় তা নয়। তারা ভিন্ন নামে সংগঠিত হয়। আবার হিযবুত তাহরির নামক উগ্র জঙ্গী সংগঠন নিষিদ্ধ হলেও তারা প্রকাশ্য কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে অবলীলায়। শহরজুড়ে তাদের পোস্টার মাঝে-মধ্যে দৃষ্টিগোচর হয়। ঘোষণা দিয়ে অনলাইনে সম্মেলন করে। এদের শেকড় উপড়ে ফেলা যায়নি। অনেকে গ্রেফতার হলেও জামিনে ছাড়া পেয়ে সংগঠিত হয় পুনরায়। বাংলাদেশে জঙ্গী ও সন্ত্রাসবাদের বিকাশ এবং বিস্তার ঘটে বিএনপি-জামায়াতের হাত ধরেই। তাদের পৃষ্ঠপোষকতায় বাংলা ভাই, জেএমজেবি, হুজি, শাহাদাতই আল হিকমা ইত্যাদি জঙ্গী সংগঠন গড়ে ওঠে। আওয়ামী লীগ ও মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তিকে নিধনে এদের ব্যবহার করা হয়ে আসছে। একাত্তরের যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ও সাজা চালু হওয়ার পর জঙ্গীদের তৎপরতা বাড়তে থাকে। এরা মুক্তমনা লেখক থেকে শিক্ষক, পেশাজীবীসহ বিভিন্ন স্তরের মানুষকে হত্যা করে আসছে। তাদের হামলার অনেক পরিকল্পনা নস্যাৎ করা হলেও এদের শেকড় উৎপাটন করা যায়নি এখনও। শুধু বাংলাদেশ নয়, সন্ত্রাস উত্তরোত্তর ছড়িয়ে পড়ছে উপমহাদেশে। বাড়ছে সহিংসতার ঘটনা। পাকিস্তান আর আফগানিস্তানের ঘটনাবলীর সঙ্গে বিশ্ব দীর্ঘদিন ধরেই পরিচিত। ঘরের পাশের ভারতকেও বারবার রক্তাক্ত হয়ে উঠতে দেখা যাচ্ছে। বাংলাদেশও এই সন্ত্রাসের শিকার। বিশেষ করে একাত্তরের পরাজিত শক্তি ও শত্রুপক্ষ পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই বাংলাদেশে জঙ্গীবাদ বিস্তারে সক্রিয়। এক্ষেত্রে তারা জামায়াত ও বিএনপি নামক রাজনৈতিক শক্তির সহায়তা পেয়ে আসছে। তাদের ছত্রছায়ায় জঙ্গীবাদ বিকশিত হয়েছে শুধু নয়, তাদের পৃষ্ঠপোষকতায় সমাজদেহে অবস্থান নিতে পেরেছে অনায়াসে। গুপ্তঘাতকদের চিহ্নিত করা সহজ হয় না। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারের কারণে একের পর এক জঙ্গী ও সন্ত্রাসী গ্রেফতার হচ্ছে। তাদের আস্তানা চিহ্নিত করে অভিযান চালানো হচ্ছে। জঙ্গীবাদ দমনে গঠিত স্পেশাল টাস্কফোর্স গত প্রায় দুই বছরে চার শ’ ২৫ জঙ্গী ও সন্ত্রাসীকে গ্রেফতার করেছে। তাদের বিরুদ্ধে দায়ের করা ১০৯টি মামলার মধ্যে বিচার হয়েছে একটির। আর ষোলোটি মামলার চার্জশীট দেয়া হয়েছে। বাকিগুলো তদন্তাধীন। উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিতদের এসব জঙ্গী কর্মকা-ে জড়িয়ে পড়ার বিষয়টি বিস্ময়কর হলেও তা বাস্তব। জঙ্গীদের হামলার আশঙ্কা হ্রাস পায়নি, বর্তমানে তৎপরতা না থাকলেও। এদের শিকড় উৎপাটন করাটাই এখন সর্বাগ্রে জরুরী। শুধু নিষিদ্ধের মধ্য দিয়ে এদের বিনাশ ঘটবে না। জঙ্গীবাদীদের পুষ্ট করার আত্মঘাতী নীতি থেকে পাকিস্তান সরে এলে উপমহাদেশে জঙ্গীবাদ নিস্তেজ হতে বাধ্য। তাদের পৃষ্ঠপোষকদের আইনের আওতায় আনাও জরুরী।
×