আজাদ সুলায়মান ॥ ঢাকায় শুরু হচ্ছে আন্তর্জাতিক পুলিশ সম্মেলন। সোনারগাঁও হোটেলে তিনদিনব্যাপী এই সম্মেলনের উদ্বোধন করা হবে আগামীকাল রবিবার। প্রথমবারের মতো এ ধরনের আন্তর্জাতিক সম্মেলনকে বাংলাদেশ পুলিশ দেখছে অনেক বড় অর্জন হিসেবে। ইন্টারন্যাশনাল পুলিশ ইন্টারপোলের মহাসচিবসহ দক্ষিণ এশিয়ার অন্তত ৪ দেশের পুলিশ প্রধান ও ১০টি দেশের অন্যান্য উচ্চপদস্থ পুলিশ কর্মকর্তা ছাড়াও অংশ নেবেন বিশ্বখ্যাত তিনজন অপরাধ বিজ্ঞানী। থাকবেন এফবিআই ও আসিয়ান জোটের পুলিশ প্রতিনিধি। তাদের অধিকাংশই আজ (শনিবার) ঢাকায় পৌঁছাবেন বলে জানিয়েছেন পুলিশ সদর দফতরের একটি দায়িত্বশীল সূত্র। সম্মেলন উপলক্ষে রাজধানীতে নেয়া হয়েছে বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা।
বঙ্গবন্ধুর সাজাপ্রাপ্ত খুনীদের ফিরিয়ে আনা, সন্ত্রাস, জঙ্গীবাদ, মাদক, অস্ত্র, মানবপাচার, আন্তঃদেশীয় সংঘবদ্ধ অপরাধ ও জঙ্গী অর্থায়নের মতো গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু প্রাধান্য পাবে এ সম্মেলনে। এ ধরনের অপরাধ মোকাবেলায় এসব দেশের সঙ্গে বাংলাদেশ কিভাবে কৌশলগত ও সহায়ক ভূমিকা পালন করবে সে প্রস্তাবও থাকবে। ইন্টারপোলের কাছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হত্যার সাজাপ্রাপ্ত পলাতক আসামিদের ফিরিয়ে আনার ব্যাপারে এসব সম্মেলনে অংশগ্রহণকারী প্রতিনিধিদের কাছে তুলে ধরা হবে।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র জানিয়েছে, এ সম্মেলনে ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিট (টিসিইউ) নামে একটি বিশেষ সংস্থা গঠনের সম্ভাবনা রয়েছে। যার কাজ হবে এ ধরনের অপরাধ মোকাবেলায় তথ্যের আদান প্রদান করা।
জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল জনকণ্ঠকে বলেন, ইন্টারপোল এ জাতীয় সম্মেলন প্রতিবছরই বিভিন্ন দেশে করে। কিন্তু বাংলাদেশে এবারই প্রথম। সেজন্য এর তাৎপর্য ও গুরুত্ব অনেক। কেননা বাংলাদেশ এখন পৃথিবীর অন্যতম ভেন্যুতে পরিণত হয়েছে। এ সম্মেলনের পর ঢাকায় অনুষ্ঠিত হবে বিশ্ব স্পীকার সম্মেলন। যাতে বিভিন্ন দেশের স্পীকাররা অংশ নেবেন।
এ সম্মেলনের দায়িত্ব পালনকারী একজন পুলিশ কর্মকর্তা জনকণ্ঠকে জানান, দক্ষিণ এশিয়ার ১৪টি দেশের পুলিশ প্রতিনিধিরা তাদের নিজ দেশের সমস্যার পাশাপাশি আন্তঃদেশীয় অপরাধ মোকাবেলায় অভিন্ন কৌশল গ্রহণের বিষয়ে মতামত দেবেন। এ ধরনের আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদ মোকাবেলায় বাংলাদেশকে ভৌগোলিক অবস্থানের কারণেই যথেষ্ট দায়িত্বশীল হতে হবে। বিশেষ করে রাজধানীর কঠোর নিরাপত্তা বলয়ের গুলশানের কূটনীতিক এলাকায় হলি আর্টিজানে সন্ত্রাসী হামলার প্রেক্ষাপটে এ সম্মেলনের গুরুত্ব ও তাৎপর্য অনেক।
তিনি জানান, বর্তমানে বিশ্বব্যাপী জঙ্গী, মাদক, মানবপাচার, আন্তঃদেশীয় সংঘবদ্ধ অপরাধ ও জঙ্গী অর্থায়নের মতো ইস্যু মোকাবেলায় সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কৌশল হচ্ছে সঠিক তথ্যের আদান-প্রধান। অপরাধ জগতের তথ্য যত দ্রুত পাওয়া যাবে, সেটা অভিন্ন কৌশলে আন্তঃদেশীয় সমন্বিত উদ্যোগে তত সহজেই মোকাবেলা করা সম্ভব হবে। এটাই হবে আন্তর্জাতিক সম্মেলনের মূলমন্ত্র। মূলত এ কারণেই বাংলাদেশ এ ধরনের বড় সম্মেলনের আয়োজন করছে।
পুলিশ সদর দফতর জানিয়েছে, অস্ট্রেলিয়া, আফগানিস্তান, ভুটান, ব্রুনাই, চীন, ভারত, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, মালদ্বীপ, মায়ানমার, নেপাল, দক্ষিণ কোরিয়া, ভিয়েতনাম ও শ্রীলঙ্কার বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাগণ এতে অংশ নেবেন। দক্ষিণ এশিয়ার অপর দেশ পাকিস্তানকে আমন্ত্রণ জানান হলেও তারা অংশগ্রহণের বিষয়ে কোন সম্মতি দেয়নি। তবে এর মধ্যে ৫টি দেশের পুলিশ প্রধান রয়েছেন।
একজন পুলিশ কর্মকর্তা বলেছেন, এ সম্মেলনের সবচেয়ে বড় আকর্ষণ ইন্টারপোলের মহাসচিব জারগেন স্টক ও ফেসবুকের ট্রাস্ট এ্যান্ড সেফটি ম্যানেজার বিক্রম লেংন্থ। থাকবেন এশিয়া পুলিশের নির্বাহী পরিচালক ইউহান্স অগাস মোলইউনু, ইন্টারপোল গ্লোবাল কমপ্লেক্স ফর ইনোভেশন হেড অব প্রটোকল সিন লী চুয়া ও ইন্টারন্যাশনাল ক্রিমিনাল ইনভেস্টিগেটিভ ট্রেনিং এ্যাসিস্টেন্সের পরিচালক প্রগাম গ্রে বার।
তিনি আরও বলেছেন, এতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে খুনের দায়ে সাজাপ্রাপ্ত ফেরারি আসামি লে. কর্নেল এসএইচএমবি নুর চৌধুরীকে কানাডা ও লে. কর্নেল এএম রাশেদ চৌধুরী যুক্তরাষ্ট্র থেকে দেশে ফিরিয়ে আনার বিষয়ে ইন্টারপোলের মহাসচিব জারগেন স্টকের কাছে বিশেষ সহায়তা চাওয়া হবে। এ ছাড়া পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে আত্মগোপনকারী বঙ্গবন্ধুর অপরাপর সাজাপ্রাপ্ত খুনী লে. কর্নেল শরীফুল হক ডালিম, লে. কর্নেল আব্দুর রশীদ, ক্যাপ্টেন আবদুল মাজেদ ও রিসালদার মুসলেহউদ্দিনকে খুঁজে বের করে দেশে ফিরিয়ে আনার জোর দাবি জানান হবে।
পুলিশ সূত্র জানিয়েছে, ভারতের পুলিশ প্রধানের কাছে সীমান্তে ফেন্সিডিল তৈরি ও মিয়ানমার পুলিশ প্রধানের কাছে ইয়াবা তৈরি বন্ধের দাবি সুপারিশ করা হবে। আফগানিস্তানের পুলিশ প্রধানের কাছে দাবি জানান হবে যাতে বাংলাদেশে সে দেশের কোন জঙ্গী প্রবেশ না করতে পারে সেজন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করার।
এ সম্মেলনে আলোচনার বিষয় সম্পর্কে জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল জনকণ্ঠকে বলেন, শুধু যে সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদ আলোচনা হবে সেটা নয়। আরও অনেক ইস্যু থাকবে যেগুলো শুধু একা বাংলাদেশ নয় গোটা বিশ্বের কমন সমস্যা, সেগুলো গুরুত্ব পাবে।