ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

নির্বাচনের অন্য কোন ফর্মুলা দিয়ে লাভ নেই ॥ নাসিম

প্রকাশিত: ০৫:৪৯, ১১ মার্চ ২০১৭

নির্বাচনের অন্য কোন ফর্মুলা দিয়ে লাভ  নেই ॥  নাসিম

স্টাফ রিপোর্টার, সিরাজগঞ্জ ॥ নির্বাাচনের অন্য কোন ফর্মুলা দিয়ে লাভ নেই মন্তব্য করে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য, ১৪ দলের মুখপাত্র ও স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম বলেছেন, ভারত-আমেরিকাসহ বিশ্বের বিভিন্ন গণতান্ত্রিক দেশে যেভাবে নির্বাচন হয় সেভাবেই বাংলাদেশেও নির্বাচন হবে। সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচনকালীন সরকারপ্রধান হবেন বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ২০১৯ সালে বর্তমান প্রধানন্ত্রী শেখ হাসিনার অধীনেই নির্বাচন হবে। তিনি শুক্রবার বিকেলে রায়গঞ্জে রক্তাক্ত ভূইয়াগাতী দিবস স্মরণে আয়োজিত বিশাল স্মরণসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেছেন। এর আগে মোহাম্মদ নাসিম সিরাজগঞ্জের শিয়ালকোলে নির্মাণাধীন শহীদ এম মনসুর আলী মেডিক্যাল কলেজের নির্মাণ কাজের অগ্রগতি পরিদর্শন করেন এবং দ্রুততম সময়ে নির্মাণ কাজ শেষ করার নির্দেশ দেন। তিনি রায়গঞ্জে পৌঁছে চান্দাইকোনা বাজার কেন্দ্রীয় জামে মসজিদে জুমার নামাজ আদায় করেন এবং মুসল্লিদের সঙ্গে কুশল বিনিময করেন। ১৯৯৬ সালে খালেদা জিয়ার প্রহসনের নির্বাচন প্রতিহত করার আন্দোলনে ৬ মার্চ সরকারের পেটোয়া বাহিনীর গুলিতে ভূইয়াগাতীতে ছাত্রনেতা জসমত, আনন্দ, রানা ও বুলবুল শহীদ হয়। তাদের স্মরণে রায়গঞ্জ উপজেলা ছাত্রলীগ এই স্মরণসভার আয়োজন করে। খালেদা জিয়ার প্রহসনের নির্বাচন প্রতিহত ও গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের আন্দোলনে নিহত ছাত্র নেতাদের আত্মার প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে স্মরণসভায় এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। এর আগে প্রধান অতিথি মঞ্চে আরোহণ করে শহীদ চার ছাত্রনেতার প্রতিকৃতিতে পুষ্পমাল্য অর্পণ করেন। চান্দাইকোনা হাজী ওয়াহেদ-মরিয়ম কলেজ মাঠে অনুষ্ঠিত স্মরণাতীতকালের বৃহত্তম স্মরণসভায় সভাপতিত্ব করেন রায়গঞ্জ উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি গোলাম হোসেন শোভন সরকার। এতে প্রধান বক্তার বক্তব্য দেন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ চৌধুরী এমপি। বিশেষ অতিথি জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আব্দুল লতিফ বিশ্বাস, জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ডাঃ হাবিবে মিল্লাত মুন্না এমপি, গাজী ম ম আমজাদ হোসেন মিলন এমপি, হাবিবুর রহমান হাবিব এমপি, জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আলহাজ আব্দুল হান্নান, কেন্দ্রীয় কৃষক লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সাখাওয়াত হোসেন সুইট, লুৎফর রহমান দিলু, উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুল হাদী আলমাজী জিন্নাহ, উপজেলা চেয়ারম্যান মারুফ বিন হাবিব, এ্যাডভোকেট আব্দুল হাকিম, জিহাদ আল ইসলাম, জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি জাকিরুল ইসলাম লিমন ও সাধারণ সম্পাদক একরামুল হক। বিকেল তিনটায় স্মরণসভা শুরু হলেও প্রধান অতিথি মোহাম্মদ নাসিম সভাস্থলে পৌঁছেন চারটায়। পার্শ্ববর্তী উপজেলা,গ্রাম- গ্রামান্তর থেকে দলীয় নেতাকর্মীসহ নাসিম ভক্তরা সমবেত হয় হাজী ওয়াহেদ মরিয়ম কলেজ মাঠে। জনসমাগমে ভরে ওঠে কলেজ মাঠ। শোকবিধুর স্মরণসভা এক পর্যায়ে জনসমুদ্রে রূপ নেয়। কলেজ মাঠে প্রবেশের বিভিন্ন সড়কে একশরও বেশি নানা সাইজের রংবেরঙের তোরণ নির্মাণ করা হয়েছিল প্রধান অতিথিসহ অতিথিবৃন্দের আগমণ উপলক্ষে। নির্বাচন প্রসঙ্গ টেনে আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতা মোহাম্মদ নাসিম বলেছেন, বিএনপি ২০১৪ সালে নির্বাচন বর্জন করে জনগণ থেকে দূরে সরে গেছে। ইতিহাস বলে, যারা নির্বাচন বর্জন করে তারা বরাবরই জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। বিএনপি আগামী নির্বাচনকেও বাধাগ্রস্ত করার ষড়যন্ত্র করছে মন্তব্য করে নাসিম বলেছেন- নির্বাচন পরিচালনা এবং নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে সংবিধানের বাইরে যাবার কোন সুযোগ নেই। ভারত-আমেরিকাসহ বিশ্বের বিভিন্ন গণতান্ত্রিক দেশে যেভাবে নির্বাচন হয় সেভাবেই বাংলাদেশেও নির্বাচন হবে। সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচনকালীন সরকারপ্রধান হবেন বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেই নির্বাচনে দেশের শান্তি, সমৃদ্ধি ও উন্নয়নধারা অব্যাহত রাখতে জনগণ আবারও আওয়ামী লীগ ও আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন জোটকেই ভোট দেবে বলেও তিনি মন্তব্য করেন। নাসিম বলেছেন, ২০১৯ সালের নির্বাচন বাধাগ্রস্ত করার জন্য বিএনপি আবারও নানা ধরনের ষড়যন্ত্রে মাঠে নেমেছে। নির্বাচন কমিশন সম্পর্কে অযৌক্তিক মন্তব্য করে ষড়যন্ত্রের জাল বুনছে। তাদের এ ষড়যন্ত্র প্রতিহত করার জন্য দলীয় নেতাকর্মীকে ঐক্যবদ্ধভাবে মাঠে থাকার জন্যও তিনি নির্দেশ দিয়ে বলেছেন; দেশের অব্যাহত উন্নয়ন এবং জনগণের মন জয় করেই শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ আবারও বিজয়ী হবে। কোন ষড়যন্ত্রই এ বিজয়কে বাধাগ্রস্ত করতে পারবে না। মন্ত্রী নাসিম বলেছেন, আগামী নির্বাচনে আসুন, খেলা হবে মাঠে। রাষ্ট্রপতি একজন সৎ ও যোগ্য ব্যক্তিকে প্রধান নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ করেছেন। নির্বাচন কমিশন নিরপেক্ষ ও দক্ষ রেফারি হিসেবে ভোট পরিচালনা করবে। এ ভোটের জয়-পরাজয় মহাজোট মেনে নেবে। বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ অন্ধকার থেকে আলোর পথে যাত্রা শুরু করেছে। বিশ্বের বুকে উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছে। ২০২১ সাল নাগাদ বাংলাদেশ মধ্যম আয়ের দেশ পেরিয়ে যাবে। আওয়ামী লীগের রাজনীতির অধ্যায় হচ্ছে শুধু উন্নয়ন আর উন্নয়ন। অপরদিকে বিএনপির রাজনীতি হচ্ছে জ্বালাও, পোড়াও, মানুষ হত্যা ও লুটপাট। সভায় প্রধান অতিথির বক্তৃতায় মোহাম্মদ নাসিম জঙ্গী দমন, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, কৃষি, বিদ্যুতসহ সরকারের বিভিন্নমুখী উন্নয়নের সাফল্য তুলে ধরে বলেছেন- বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার সাহসী পদক্ষেপে পদ্মা সেতুর কাজ শুরু হয়েছে। এই সেতু নিয়ে বিএনপিসহ বিশ্বব্যাংকের অনেকেই মিথ্যাচার করেছে। কানাডার আদালতে তা প্রমাণিত। মিথ্যা কথা বলার জন্য খালেদা জিয়ার পদত্যাগ করা উচিত বলেও তিনি মন্তব্য করেছেন। তিনি দলের প্রতিজন নেতাকর্মী এবং জনপ্রতিনিধিদের সরকারের সাফল্য পাড়ায়, মহল্লায় এবং গ্রামে গ্রামে জনগণের মধ্যে ছড়িয়ে দেবার আহ্বান জানান। বেগম খালেদা জিয়াকে ইঙ্গিত করে মোহাম্মদ নাসিম বলেছেন, ২০১৪ সালে একজন নেত্রী দেশে আগুন জ্বালিয়ে, জঙ্গীবাদকে উস্কানি দিয়ে ভোটকে বানচাল করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু জনগণ সে ষড়যন্ত্র ব্যর্থ করে দিয়েছে। বাংলাদেশে একদিন জঙ্গীবাদের উত্থান হয়েছিল। গুলশানে তারা ৩০ বিদেশীকে হত্যা করে, শোলাকিয়ায় ঈদের জামাতে মুসল্লিদের হত্যা করে। তারপরও দেশপ্রেম ও সাহসিকতার পরিচয় দিয়ে পুলিশ জীবনের বিনিময়ে মুসল্লিদের রক্ষা করেছিল। ইসলাম জঙ্গীবাদকে প্রশ্রয় দেয় না, মুসলমান হয়ে মুসলমান হত্যার মতো জঘন্য কাজ ইসলাম পছন্দ করে না। ইসলাম শান্তির ধর্ম। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে জঙ্গী দমন হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাহসী পদক্ষেপে বিশ্বব্যাপী আমাদের দেশের ভাবমূর্তি অনেক উজ্জ্বল হয়েছে। বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা মায়ের ¯েœহ আর বোনের ভালবাসা দিয়ে জনগণের জন্য কাজ করছেন।
×